পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (8) একটা-কিছু করতেই হবে। আমাদের মতো মেয়েমানুষের সঙ্গে এমন নীচভাবে যারা লেগেছে তারা নিজেদের যত বড়ো লোক মনে করুক তারা কাপুরুষ। কিন্তু তাদের কাছে আমি কোনোমতেই হার মানব না— কোনোমতেই না । এতে তারা যা করতে পারে করুক।” বলিয়া ললিতা মাটিতে পদাঘাত করিল। সুচরিতা কোনো উত্তর না করিয়া ধীরে ধীরে ললিতার হাতের উপর হাত বুলাইতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে কহিল, “ললিতা, ভাই, একবার বাবার সঙ্গে কথা কয়ে দেখা।” ললিতাকে দেখিয়া বিনয় মুহূর্তের জন্য থমকিয়া দাড়াইল— ললিতার সঙ্গে দু-একটা কথা কহিয়া লাইবে কি না সে সম্বন্ধে তাহার মনে একটা বিতর্ক উপস্থিত হইল- কিন্তু আত্মসংবরণ করিয়া ললিতার মুখের দিকে না চাহিয়া তাহাকে নমস্কার করিল ও মাথা হেঁট করিয়াই চলিয়া গেল। ললিতাকে যেন অগ্নিতাপ্ত শেলে বিদ্ধ করিল। সে দ্রুতপদে বাড়িতে প্রবেশ করিয়াই একেবারে তাহার ঘরে গেল। তাহার মা তখন টেবিলের উপর একটা লম্বা সরু খাতা খুলিয়া হিসাবে মনােনিবেশ করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন । 融 ললিতার মুখ দেখিয়াই বরদাসুন্দরী মনে শঙ্কা গনিলেন। তাড়াতাড়ি হিসাবের খাতাটার মধ্যে একেবারে নিরুদেশ হইয়া যাইবার প্রয়াস পাইলেন- যেন একটা কী অঙ্ক আছে যাহা এখনই মিলাইতে না পারিলে তাহার সংসার একেবারে ছারখার হইয়া যাইবে । ললিতা চৌকি টানিয়া টেবিলের কাছে বসিল । তবু বরদাসুন্দরী মুখ তুলিলেন না। ললিত কহিল, "ו ווג" ললিতা কহিল, “আমি বেশিক্ষণ তোমাকে বিরক্ত করব না। একটা কথা জানতে চাই। বিনয়বাবু এসেছিলেন ?” বরদাসুন্দরী খাতা হইতে মুখ না তুলিয়া কহিলেন, “ই ।” ললিতা । তার সঙ্গে তোমার কী কথা হল ? "সে অনেক কথা ।” ললিতা | আমার সম্বন্ধে কথা হয়েছিল কি না ? বরদাসুন্দরী পলায়নের পন্থা না দেখিয়া কলম ফেলিয়া খাতা হইতে মুখ তুলিয়া কহিলেন, “তা বাছা, হয়েছিল। দেখলুম যে ক্রমেই বাড়াবাড়ি হয়ে পড়ছে— সমাজের লোকে চার দিকেই নিন্দে করছে, তাই সাবধান করে দিতে হল ।” r লজ্জায় ললিতার মুখ লাল হইয়া উঠিল, তাহার মাথা ঝা ঝা করিতে লাগিল। জিজ্ঞাসা করিল, "বাবা কি বিনয়বাবুকে এখানে আসতে নিষেধ করেছেন ?” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “তিনি বুঝি এসব কথা ভাবেন ? যদি ভাবতেন তা হলে গোড়াতেই 4-जशठ शठ १ालऊ ना |” বরদাসুন্দরী আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “শোনাে একবার ! পানুবাবু আসবেন না কেন ?” ললিতা | বিনয়বাবুই বা আসবেন না কেন ? বরদাসুন্দরী পুনরায় খাতা টানিয়া লইয়া কহিলেন, “ললিতা, তোর সঙ্গে আমি পারি। নে বাপু ! যা, এখন আমাকে জ্বালাস নে— আমার অনেক কাজ আছে।” ললিতা দুপুরবেলায় সুচরিতার বাড়িতে ইস্কুল করিতে যায় এই অবকাশে বিনয়কে ডাকাইয়া আনিয়া বরদাসুন্দরী তাহার যাহা বক্তব্য বলিয়াছিলেন। মনে করিয়াছিলেন, ললিতা টেরও পাইবে না। হঠাৎ