পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(?V)○ রবীন্দ্র-রচনাবলী একটি কাণ্ড ঘটবে। আমি যতটা পেরেছি আপনাদের সাবধান করবার চেষ্টা করেছি— কোনো ফল হয়। "ן וb ললিত কহিল, “দেখুন পানুবাবু, আপনাকেও সাবধান করে দেবার একটা বিষয় আছে— আপনার চেয়ে যারা সকল বিষয়েই বড়ো তাদের সাবধান করে দেবার অহংকার আপনি মনে রাখবেন না।” এই কথা বলিয়াই ললিতা ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । বরদাসুন্দরী কহিলেন, “এ-সব কী কাণ্ড হচ্ছে! এখন কী করতে হবে, পরামর্শ করে।” পরেশবাবু কহিলেন, “যা কর্তব্য তাই পালন করতে হবে, কিন্তু এরকম করে গোলমাল করে পরামর্শ করে কর্তব্য স্থির হয় না। আমাকে একটু মাপ করতে হবে। এ সম্বন্ধে আমাকে এখন কিছু বোলো না । আমি একটু একলা থাকতে চাই ।” 8br সুচরিতা ভাবিতে লাগিল ললিতা এ কী কাণ্ড বাধাইয়া বসিল । কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া সুচরিতা কহিল, "ব্ৰাহ্মসমাজে তো চারি দিকে হুলস্থূল পড়ে গেছে— কিন্তু শেষকালে বিনয়বাবু যদি রাজি না হন ?” ললিতা মুখ নিচু করিয়া দৃঢ়স্বরে কহিল, “তিনি রাজি হবেনই।” সুচরিতা কহিল, “তুই তো জানিস, পানুবাবু মাকে ঐ আশ্বাস দিয়ে গেছেন যে বিনয় কখনােই তাদের সমাজ পরিত্যাগ করে এই বিয়ে করতে রাজি হবে না। ললিতা, কেন তুই সব দিক না ভেবে পানুবাবুর কাছে কথাটা আমন করে বলে ফেললি।” ললিত কহিল, “বলেছি বলে আমার এখনো অনুতাপ হচ্ছে না। পানুবাবু মনে করেছিলেন তিনি এবং তার সমাজ আমাকে শিকারের জন্তুর মতো তাড়া করে একেবারে অতল সমুদ্রের ধার পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন, এইখানে আমাকে ধরা দিতেই হবে- তিনি জানেন না। এই সমুদ্রে লাফিয়ে পড়তে আমি ভয় করি নে— তীর শিকারী কুকুরের তাড়ায় তীর পিঞ্জরের মধ্যে ঢুকতেই আমার ভয় ।” ললিত কহিল, “বাবা কখনো শিকারের দলে যোগ দেবেন না। এ আমি তোমাকে নিশ্চয় বলছি। তিনি তো কোনোদিন আমাদের শিকলে বাধতে চান নি । তার মতের সঙ্গে যখন কোনোদিন আমাদের কিছু অনৈক্য ঘটেছে তিনি কি কখনো একটুও রাগ প্রকাশ করেছেন, ব্ৰাহ্মসমাজের নামে তাড়া দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করে দিতে চেষ্টা করেছেন ? এই নিয়ে মা কতদিন বিরক্ত হয়েছেন, কিন্তু বাবর কেবল একটিমাত্র এই ভয় ছিল পাছে আমরা নিজে চিন্তা করবার সাহস হারাই। এমন করে যখন তিনি আমাদের মানুষ করে তুলেছেন তখন শেষকালে কি তিনি পানুবাবুর মতো সমাজের জেল-দারোগার হাতে আমাকে সমর্পণ করে দেবেন ?” সুচরিতা কহিল, “আচ্ছা বেশ, বাবা যেন কোনো বাধা দিলেন না, তার পরে কী করা যাবে বল ?" ললিত কহিল, “তোমরা যদি কিছু না কর তা হলে আমি নিজে—” কুকুতা বান্ত ইয়া উঠা বলি, শন, তােক স্মি কতে হবেন ভাই। আর এক উপ " সুচরিতা পরেশবাবুর কাছে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতেছিল, এমন সময় পরেশবাবু স্বয়ং সন্ধ্যাকাণে তাহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন । এই সময়ে পরেশবাবু প্রতিদিন তাহার বাড়ির বাগানে একািল মাথা নিচু করিয়া আপন মনে ভাবিতে ভাবিতে পায়চারি করিয়া থাকেন- সন্ধ্যার পবিত্র অন্ধকারটিাৰ্ণ । ধীরে ধীরে মনের উপর বুলাইয়া কর্মের দিনের সমস্ত দাগগুলিকে যেন মুছিয়া ফেলেন এবং অন্তর্গ মধ্যে নির্মল শান্তি সঞ্চয় করিয়া রাত্রির বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত হইতে থাকেন— আজ পরেশবাবু পেঁ