পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী কবি মাঝে পড়ি বলে, মনে ভেবে দেখ, দুজনেই এক তোরা, দুজনেই এক । খোপা গেলে চুল যায়, চুলে যদি টাক— খোপা, তবে কোথা রবে তব জয়ঢাক । দানরিক্ত পড়ে আছে গগনের এক কোণ ঘেঁষে । বর্ষপূৰ্ণ সরোবর তারি দশা দেখে সারাদিন বিকিমিকি হাসে থেকে থেকে । কহে, ওটা লক্ষ্মীছাড়া, চালচুলহীন, নিজেরে নিঃশেষ করি কোথায় বিলীন । আমি দেখো চিরকাল থাকি জলভরা, সারবান, সুগভীর, নাই নড়াচড়া । মেঘ কহে, ওহে বাপু, কোরো না। গরীব, তোমার পূর্ণতা সে তো আমারি গৌরব | স্পষ্টভাষী বসন্ত এসেছে বনে, ফুল ওঠে ফুটি, দিনরাত্রি গাহে পিক, নাহি তার ছুটি । কাক বলে, অন্য কাজ নাহি পেলে খুজি, বসন্তের চাটুগান শুরু হল বুঝি ! তুমি কোথা হতে এলে কে গো মহাশয় ! আমি কাক স্পষ্টভাষী, কাক ডাকি বলে । পিক কয়, তুমি ধন্য, নমি পদতলে ; স্পষ্টভাষা তব কণ্ঠে থাক বারো মাস, মোর থাক মিষ্টভাষা আর সত্যভাষ । প্ৰতাপের তাপ। জ্বলন্ত কাঠের আহা দীপ্তি তেজ কিবা । অন্ধকার কোণে প’ড়ে মরে ঈর্ষারোগে— বলে, আমি হেন জ্যোতি পাব কী সুযোগে । জ্বলন্ত অঙ্গার, বলে, কঁচা কাঠ ওগো, চেষ্টাহীন বাসনায় বৃথা তুমি ভোগো । তোমারি হাতে কি তাহা আসিবে উড়িয়া ? ভিজা কাঠ বলে, বাবা, কে মরে আগুনে ! জ্বলন্ত অঙ্গার বলে, তবে খাক ঘুণে ।