পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

aob রবীন্দ্র-রচনাবলী বহিয়া লইয়া যাইবার বিড়ম্বন কেন ? তবে বাজাও। আমার ভ্রাতৃসূত্রটি সেতারে ঝংকার দিল। বিনি विनि दिन दिन श्नकला। दक्षिाठ लाशिल। তাহার পরদিন অনুসন্ধান করিয়া অবগত হওয়া গেল, জাহাজের এটা ওটা সেটা অনেক জিনিসেরই অভাব। সেগুলি না থাকিলেও জাহাজ চলে বট কিন্তু যাত্রীদের আবশ্যক বুধিয়া চলে না, নিজের খেয়ালেই চলে। কলিকতা হইতে জাহাজের সরঞ্জাম আনিবার জন্য লোক পঠাইতে হইল। এখন কিছুদিন এইখনেই স্থিতি। গঙ্গার মাঝে মাঝে এক-একবার না দাড়াইলে গঙ্গার মাধুরীতেমন উপভোগ করা যায় না। কারণ নদীর একটি প্রধান সৌন্দৰ্য গতির সৌন্দর্য। চারিদিকে মধুর চঞ্চলত, জোয়ার-ভাটার আনাগোন, তরঙ্গের উত্থান-পতন, জলের উপর ছায়ালোকের উৎসব- গঙ্গার মাঝখানে একবার স্থির হইয়া না দীড়াইলে এসব ভালো করিয়া দেখা যায় না। আর জাহাজের ইসফাসনি, আগুনের তাপ। খালাসিদের গোলমাল, মায়াবদ্ধ দানবের মতো দীপ্তনেত্র এঞ্জিনের গী-ভাের সনিশ্বাস খাটুনি,দুই পাশে অবিশ্রাম আবর্তিত দুই সহস্রাবার চাকার সরোষ ফেনউদগর- এসকল গঙ্গার প্রতি অত্যন্ত অত্যাচার বলিয়া বােধ হয়। তাহা ছাড়া গঙ্গার সৌন্দৰ্য উপেক্ষা করিয়া চুটিয়া চলা কাৰ্য্যতৎপর অতিসভা উনবিংশ শতাব্দীকেই শোভা পায় কিন্তু রসজ্ঞেরা ইহা সহ্য হয় না। এ যেন আপসে যাইবার সময় নাকে মুখে ভাত গোঁজা। অন্নের অপমান। যেন গঙ্গাযাত্রর একটা সংক্ষিপ্ত সংস্করণ গড়িয়া তোলা। এ যেন মহাভারতের সূচীপত্র গলাধঃকরণ করা। আমাদের জাহাজ লীেহশৃঙ্খল গলায় বাঁধিয়া খাড়া দাঁড়াইয়া রহিল। স্রোতস্বিনী খরপ্রবাহে ভাসিয়া চলিয়ছে। কখনো তরঙ্গসংকুল কখনো শান্ত, কোথাও সংকীর্ণ কোথাও প্রশস্ত, কোথাও ভাঙন ধরিয়াছে— কোথাও চড়া পড়িয়ছে। এক-এক জায়গায় কুল-কিনারা দেখা যায় না। আমাদের সম্মুখে পরপর মেঘের রেখার মতো দেখা যাইতেছে। চারিদিকে জেলেডিঙি ও পািল-তোলা নীেক। বড়ে বড়োজাহাজ প্রাচীন পৃথিবীর বৃহদাকার সরীসৃপ জলজন্তুর মতো ভাসিয়া চলিয়াছে। এখন বেল পড়িয়া আসিয়াছে। মেয়েরা গঙ্গার জলে গা ধুইতে আসিয়ছে, রোদ পড়িয়া আসিতেছে। বঁাশবন খেজুরবন আমবাগান ও ঝোপঝাপের ভিতরে ভিতরে এক-একটি গ্রাম দেখা যাইতেছে। ডাঙায় একটা বাছুর আড়ি করিয়া গ্ৰীবা ও লাঙ্গুল নানা ভঙ্গিতে আস্ফালনপূর্বক একটি বড়ো স্টীমারের সঙ্গে সঙ্গে ছুটিয়াছে। গুটিকতক মানবসন্তান ডাঙায় দাঁড়াইয়া হাততালি দিতেছেন; যে চৰ্মখিনি পরিয়া পৃথিবীতে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন তাহার বেশি পোশাক পরা আবশ্যক বিবেচনা করেন নাই। ক্রমে অন্ধকার হইয়া আসিল। তীরের কুটিরে আলো জ্বলিল। সমস্ত দিনের জাগ্ৰত আলস্য সমাপ্ত করিয়া রাত্রের নিদ্রায় শরীর-মন সমৰ্পণ করিলাম। শ্রাবণ, ভাদ্র, অগ্রহায়ণ ১২৯১