পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য ছেলেভুলানো ছড়া : ১ বাংলা ভাষায় ছেলে ভুলাইবার জন্য যে-সব মেয়েলি ছড়া প্রচলিত আছে, কিছুকাল হইতে আমি তাহা সংগ্ৰহ করিতে প্ৰবৃত্ত ছিলাম। আমাদের ভাষা এবং সমাজের ইতিহাস-নির্ণয়ের পক্ষে সেই চূড়াগুলির বিশেষ মূল্য থাকিতে পারে, কিন্তু তাঁহাদের মধ্যে যে-একটি সহজ স্বাভাবিক কাব্যরস আছে সেইটিই আমার নিকট অধিকতর আদরণীয় বোধ হইয়াছিল। আমার কাছে কোনটা ভালো লাগে বা না লাগে সেই কথা বলিয়া সমালোচনার মুখবন্ধ করিতে ভয় হয়। কারণ, যাহারা সুনিপুণ সমালোচক, এরূপ রচনাকে তাহারা অহমিকা বলিয়া অপরাধ লইয়া থাকেন । তাহাদিগের নিকট আমার সবিনয় নিবেদন এই যে, তাহারা বিবেচনা করিয়া দেখিবেন, এরূপ অহমিকা অহংকার নহে, পরন্তু তাহার বিপরীত। যাহারা উপযুক্ত সমালোচক। তঁহাদের নিকট একটা দাঁড়িপাল্লা আছে; তাহারা সাহিত্যের একটা বাধা ওজন এবং সেইসঙ্গে অনেকগুলি বাধি বোল বাহির করিয়াছেন; যে-কোনাে রচনা তীহাদের নিকট উপস্থিত করা যায় নিঃসংকোচে তাহার পৃষ্ঠে উপযুক্ত নম্বর এবং ছাপ মারিয়া দিতে পারেন। কিন্তু অক্ষমতা এবং অনভিজ্ঞতা -বশত সেই ওজনটি র্যাহারা পান নাই, সমালোচনস্থলে তাহাদিগকে একমাত্র নিজের অনুরাগ-বিরাগের উপর নির্ভর করিতে হয়। অতএব সেরূপ লোকের পক্ষে সাহিত্যসম্বন্ধে বেদবাক্য প্রচলিত করিতে যাওয়াই স্পর্ধার কথা। কোন লেখা ভালো অথবা মন্দ তাহা প্রচার না করিয়া “কোন লেখা আমার ভালো লাগে বা মন্দ লাগে সেই কথা স্বীকার করাই छैशाला छै5िठ । যদি কেহ প্রশ্ন করেন সে কথা কে শুনিতে চায়, আমি উত্তর করিব, সাহিত্যে সেই কথা সকল মানুষ শুনিয়া আসিতেছে। সাহিত্যের সমালোচনাকেই সমালোচনা বলা হইয়া থাকে, কিন্তু অধিকাংশ সাহিত্যই প্রকৃতি ও মানবজীবনের সমালোচনামাত্র। প্রকৃতি সম্বন্ধে, মনুষ্য সম্বন্ধে, ঘটনা সম্বন্ধে, কবি । যখন নিজের আনন্দ বিষাদ বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং তঁহার নিজের সেই মনোভাব কেবলমাত্র আবেগের দ্বারা ও রচনাকৌশলে অন্যের মনে সঞ্চারিত করিয়া দিবার চেষ্টা করেন তখন তাহাকে কেহ অপরাধী করে না। তখন পাঠকও অহমিকাসহকারে কেবল এইটুকু দেখেন যে “কবির কথা আমার মনের সহিত মিলিতেছে কি না । কাব্যসমালোচকও যদি যুক্তিতর্ক এবং শ্রেণী:নির্ণয়ের দিক ছাড়িয়া মুমুল্লান্ত মেনাভাব পািকস্তরে উপর দন্ত সান্তম স্তর সােল ইয়াক দেবী কের श की | বিশেষত আজ আমি যে কথা স্বীকার করিতে বসিয়াছি তাহার মধ্যে আত্মকথার কিঞ্চিৎ অংশ থাকিতেই হইবে। ছেলেভুলানাে ছড়ার মধ্যে আমি যে রসাস্বাদ করি, ছেলেবেলাকার স্মৃতি হইতে তীহাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখা আমার পক্ষে অসম্ভব। সেই ছড়াগুলির মাধুর্য কতটা নিজের বাল্যস্মৃতির এবং কতটা সাহিত্যের চিরস্থায়ী আদর্শের উপর নির্ভর করিতেছে তাহা নির্ণয় করিবার উপযুক্ত বিশ্লেষণশক্তি বর্তমান লেখকের নাই। এ কথা গোড়াতেই কবুল করা ভালো। বৃষ্টি পড়েটাপুর টুপুর, নদী এল বান এই ছড়াটি বাল্যকালে আমার নিকট মেহমন্ত্রর মতো ছিল