পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য Գ\,\9 এই অন্তর্ব্যথা, এই রুদ্ধ সঞ্চিত অশ্রুজলোচ্ছাস কোন কালে কোন গােপন গৃহকোণ হইতে, কোন, অজ্ঞাত অখ্যাত বিস্মৃত নববধূর কোমল হৃদয়খনি বিদীর্ণ করিয়া বাহির হইয়াছিল! এমন কত অসহা কষ্ট জগতে কোনাে চিহ্ন না। রাখিয়া অদৃশ্য দীর্ঘনিশ্বাসের মতাে বায়ুস্রোতে বিলীন হইয়াছে। এট কেমন করিয়া দৈবক্রমে একটি শ্লেকের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া গিয়াছে। ও পারেতে কালো রঙ, বৃষ্টি পড়ে दश बर्भ । এমন দিনে এমন অবস্থায় মন-কেমন না করিয়া থাকিতে পারে না। চিরকালই এমনি হইয়া আসিতেছে। বহুপূর্বে উজ্জয়িনী-রাজসভার মহাকবিও বলিয়া গিয়াছেন— মেঘলোকে ভবতি সুখিনােহপন্যথাবৃত্তিচেতঃ। কালিদাস যে কথাটি ঈষৎ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন মাত্র, এই ছড়ায় সেই কথাটা বুক ফাটিয়া কাদিয়া উঠিয়াছে ‘গুণবতী ভাই আমার মন কেমন করে | 'श७ श्ल डांडा-डाओं, भान श्ल प्रछि । আয় রে আয় নদীর জলে ঝাপ দিয়ে পড়ি ৷ ইহার ভিতরকার সমস্ত মর্মান্তিক কাহিনী, সমস্ত দুর্বিষহ বেদন পরম্পরা কে বলিয়া দিবে ? দিনে দিনে রাত্রে রাত্রে মুহুর্তে মুহূর্তে কত সহা করিতে হইয়াছিল— এমন সময়, সেই স্নেহস্মৃতিহীন সুখহীন পরের ঘরে হঠাৎ একদিন তাহার পিতৃগৃহের চিরপরিচিত ব্যথার বাধী ভাই আপন ভগিনীটির তত্ত্ব লইতে আসিয়াছে— হৃদয়ের স্তরে স্তরে সঞ্চিত নিগুঢ় অশ্রুরাশি সেদিন আর কি বাধা মানিতে পারে! সেই ঘর, সেই খেলা, সেই বাপ-মা, সেই সুখশৈশব, সমস্ত মনে পড়িয়া আর কি এক দণ্ড দুরন্ত উতলা হৃদয়কে বাধিয়া রাখা যায় ! সেদিন কিছুতে আর একটি মাসের প্রতীক্ষাও প্ৰাণে সহিতেছিল না— বিশেষত, সেদিন নদীর ওপর নিবিড় মেঘে কালো হইয়া আসিয়ছিল, বৃষ্টি ঝােম ঝাম করিয়া পড়িতেছিল, ইচ্ছা হইতেছিল বর্ষার বৃষ্টিধারামুখরিত মেঘাচ্ছায়াশ্যামল কৃলে-কুল-পরিপূর্ণ অগাধশীতল নদীটির মধ্যে ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া এখনই হাড়ের ভিতরকার জ্বালাটা নিবাইয়া আসি। ইহার মধ্যে একটি ব্যাকরণের ভুল আছে, সেটিকে বঙ্গভাষার সতর্ক অভিভাবকগণ মার্জনা করিবেন, এমন-কি, তাহার উপরেও একবিন্দু অশ্রুপাত করবেন। ভাইয়ের প্রতি গুণবতী বিশেষণ প্রয়ােগ করিয়া উক্ত অজ্ঞাতনামী কন্যাটি অপরিমেয় মুখত প্রকাশ করিয়াছিল। সে হতভাগিনী স্বপ্নেও জানিত না তাহার সেই একটি দিনের মর্মভেদী ক্ৰন্দনধ্বনির সহিত এই ব্যাকরণের ভুলটুকুও জগতে চিরস্থায়ী হইয়া । যাইবে । জানিলো লজ্জায় মরিয়া যাইত। হয়তো ভুলটি গুরুতর নহে ; হয়তো ভগিনীকে সম্বোধন করিয়া কথাটা বলা হইতেছে এমনও হইতে পারে। সম্প্রতি যাহারা বঙ্গভাষার বিশুদ্ধিরক্ষাব্রতে ভাষাগত প্রথা এবং পুরাতন সৌন্দর্যগুলিকে বলিদান করিতে উদ্যত হইয়াছেন, ভরসা করি, তাহারাও মাঝে মাঝে স্নেহবশত আত্মবিস্মৃত হইয়া ব্যাকরণ-লঙ্ঘন-পূর্বক ভগিনীকে ভাই বলিয়া থাকেন, এমনকি, পত্নীশ্ৰেণীয় সম্পর্কের দ্বারা গ্ৰীতিপূর্ণ ভ্ৰাতৃ সম্বোধনে অভিহিত হইলে তৎক্ষণাৎ তীহাদের ভ্রম সংশোধন করিয়া দেন না । ቌ፡ আমাদের বাংলাদেশের এক কঠিন অন্তবেদন আছে- মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানাে। অপ্রাপ্তবয়স্ক অনভিজ্ঞ মূঢ় কন্যাকে পরের ঘরে যাইতে হয়, সেইজন্য বাঙালি কন্যার মুখে সমস্ত বঙ্গদেশের একটি ব্যাকুল করুণ দৃষ্টি নিপতিত রহিয়াছে। সেই সকরুণ কাতর স্নেহ বাংলার শারদোৎসবে স্বগীয়তা লাভ করিয়াছে। আমাদের এই ঘরের স্নেহ, ঘরের দুঃখ, বাঙালির গৃহের এই চিরন্তন বেদন হইতে অশ্রুজল আকর্ষণ করিয়া লইয়া বাঙালির হৃদয়ের মাঝখানে শারদােৎসব পল্লবে ছায়ায় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইহা বাঙালির অম্বিকাপূজা এবং বাঙালির কন্যাপূজাও বটে। আগমনী এবং বিজয়া বাংলার মাতৃহৃদয়ের গান। অতএব সহজেই ধরিয়ালওয়া যাইতে পারে যে, আমাদের \8)