পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brO O রবীন্দ্র-রচনাবলী তারা নানা দানপুণ্যবান দেবকার্য করে। এক দফাতে কঙাল বটে, ভাঙ নাই তার ঘরে ৷ কিন্তু কড়া জবাব দিয়া কার্যোদ্ধার হয় না । বরং তর্কে পরাস্ত হইলে গায়ের জোর আরো বাড়িয়া উঠে । সেই বুঝিয়া দুৰ্গা তখন— গুটি পাঁচ-ছয় সিদ্ধির লাড় যত্ন ক'রে দিলেন। দাম্পত্যযুদ্ধে এই ছয়টি সিদ্ধির লাড়ু কামানের ছয়টা গোলার মতো কাজ করিল ; ভোলানাথ এক-দমে পরাভূত হইয়া গেলেন। সহসা পিতা কন্যা ও জামাতার ঘনিষ্ঠ মিলন হইয়া গেল। বাক্যহীন নদী সকৌতুক ভক্তিভরে দ্বারপার্থে দাড়াইয়া মনে মনে হাসিতে লাগিল । সম্রামে সম্ভাষণ করি বসলেন তিন জন । দুৰ্গা মর্তে যেয়ে কী আনিবে আমার কারণ ৷ প্ৰতিবারে কেবলমাত্র বিহুপত্ৰ পাই । দেবী বললেন, প্ৰভু ছাড়া কোন দ্রব্য খাই ৷ সিঁদুর-ফোটা অলকছটা মুক্ত গাথা কেশে । সোনার ঝাপা কনকচাঁপা, শিব ভুলেছেন যে বেশে ৷ রত্নহার গলে তার দুলছে সোনার পাটা । চাঁদনি রাত্ৰিতে যেন বিদ্যুৎ দিচ্ছে ছটা ৷ তাড় কঙ্কণ সেন পৈছি শঙ্খ বাহুমূলে। বীক-পরা মল সোনার নূপুর, আঁচল হেলে দােলে ৷ সিংহাসন, পট্টবসন পরছে ভগবতী । কার্তিক গণেশ চললেন লক্ষ্মী সরস্বতী ৷ জয় বিজয়া দাসী চললেন দুইজন ৷ গুপ্তভাবে চললেন শেষে দেব পঞ্চানন ৷ গিরিসঙ্গে পরম রঙ্গে চললেন পরম সুখে | ষষ্ঠী। তিথিত উপনীত হলেন মর্তলোকে ৷ সারি সারি ঘটবারি। আর গঙ্গাজল । সাবধানে নিজমনে গাচ্ছেন মঙ্গল ৷ গিরিরানী কন বাণী চুমো দিয়ে মুখে কও তারিণী জামাই-ঘরে ছিলে কেমন সুখে ॥ এ ছড়াটি এইখানে শেষ হইল, ইহার বেশি আর বলিবার কথা নাই। এ দিকে বিদায়ের কাল সমাগত। কন্যাকে লইয়া শ্বশুরঘরের সহিত বাপের ঘরের একটু ঈর্ষার ভাব থাকে। বেশিদিন বধূকে বাপের বাড়িতে রাখা শ্বশুরপক্ষের মনঃপূত নহে। বহুকাল পরে মাতায় কন্যায় যথেষ্ট পরিতৃপ্তিপূর্বক মিলন হইতে না হইতেই শ্বশুরবাড়ি হইতে তাগিদ আসে, ধন্ন বসিয়া যায়। স্ত্রীবিচ্ছেদবিধুর স্বামীর অধৈর্য তাহার কারণ নহে। হাজার হউক, বধু পরের ঘর হইতে আসে ; শ্বশুরঘরের সহিত তাহার সম্পূর্ণ জোড় লাগা বিশেষ চেষ্টার কাজ। সেখানকার নূতন কর্তব্য অভ্যাস ও পরিচয়বন্ধন হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া তাহার বাল্যকালের স্বাভাবিক আশ্রয়স্থলে ঘন ঘন যাতায়াত বা দীর্ঘকাল অবস্থিতি করিতে দিলে জোড় লাগিবার ব্যাঘাত করে । বিশেষত বাপের বাড়িতে বিবাহিত কন্যার কেবলই কর্তব্যহীন আদর, শ্বশুরবাড়িতে তাহার কর্তব্যের শাসন, এমন অবস্থায় দীর্ঘকাল বাপের বাড়ির আবহাওয়া শ্বশুরবর্গ বধূর পক্ষে প্রার্থনীয় জ্ঞান করেন না। এই সকল নানা কারণে পিতৃগৃহে কন্যার গতিবিধিসম্বন্ধে শ্বশুরপক্ষীয়ের বিধান কিছু কঠোর হইয়াই থাকে। কন্যাপিতৃত্বের সেও একটা কষ্ট । বিজয়ার দিন বাংলাদেশের শ্বশুরবাড়ির সেই কড়া তাগিদ লইয়া শিব মেনকার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত ।