পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য bro> মাতৃস্নেহের স্বাভাবিক অধিকার সমাজশাসনের বিরুদ্ধে বৃথা আছাড় খাইয়া মরিতে লাগিল । অমনি ভাবে ফিরে যাক সে, থাকবে আমার মেয়ে ৷ তখন, শ্বশুরবাড়িতে দুর্গার যত কিছু দুঃখ আছে সমস্ত মাতার মনে পড়িতে লাগিল। শিবের ভাণ্ডারে যত অভাব, আচরণে যত ত্রুটি, চরিত্রে যত দোষ, সমস্ত র্তাহার নিকট জাজ্বল্যমান হইয়া উঠিল । অপাত্রে কন্যাদান করিয়াছেন, এখন সেটা যতটা পারেন সংশোধন করিবার ইচ্ছা, যতটা সম্ভব গৌরীকে মাতৃক্ৰোড়ে ফিরাইয়া লইবার চেষ্টা । শ্বশুর গৃহের আচারবিচার অনেক সময় দূর হইতে পিতৃগৃহের নিকট অযথা বলিয়া মনে হয় এবং পিতৃপক্ষীয়েরা স্নেহের আক্ষেপে কন্যার সমক্ষেই তাহার কঠোর সমালোচনা করিয়া থাকেন । মেনকা তাই শুরু করিলেন, এবং শিব সেই অন্যায় আচরণে ক্ষিপ্ত হইয়া শ্বশুরবাড়ির অনুশাসন সতেজে প্রচার করিয়া দিলেন । মর্তে আসি পূর্বকথা ভুলছ দেখি মনে । বারে বারে নিষেধ তোমায় করছি এ কারণে ৷ মায়ের কোলে মত্ত হয়ে ভুলছ দেখি স্বামী । তোমার পিতা কেমন রাজা তাই দেখব। আমি ৷ শুনে কথা গিরিরাজা উন্মাযুক্ত হল। জয়-জোগাড়ে অভয়ারে যাত্রা করে দিল ৷ যে নিবে সে ক’তে পারে, নইলে এমন শক্তি কার । যাও তারিণী হরের ঘরে, এসো পুনর্বাের ৷ অনুগ্রহের সংকীর্ণ মেয়াদ উত্তীর্ণ হইল, কন্যা পতিগৃহে ফিরিয়া গেল। এক্ষণে যে ছড়ার আলোচনায় প্রবৃত্ত হইতেছি তাহাতে দেবদেবীর একটি গোপন ঘরের কথা বর্ণিত আছে । শিব সঙ্গে রসরাঙ্গে বসিয়ে ভবানী । কুতুহলে উমা বলেন ত্ৰিশূল শূলপাণি ৷ তুমি প্ৰভু, তুমি প্ৰভু ত্ৰৈলোক্যের সার। ইন্দ্ৰ চন্দ্ৰ কুবের বরুণ তোমারি কিংকর ৷ তোমার নারী হয়ে আমার সাধ নাহি পোরে । যেন বেন্যা পতির কপালে পড়ে রমণী ঝোরে ৷ দিব্য সোনার অলংকার না পরিলাম গায় । শামের বরন দুই শঙ্খ পরতে সাধ যায় ৷ দেবের কাছে মারি লাজে হাত বাড়াতে নারি। বারেক মোরে দাও শঙ্খ, তোমার ঘরে পরি ॥ ভোলানাথ ভাবিলেন, একটা কীেতুক করা যাক, প্রথমেই একটু কেন্দল বাধাইয়া তুলিলেন। ভেবে ভোলা হেসে কন শুন হে পাৰ্বতী আমি তো কড়ার ভিখারি ত্রিপুরারি শঙ্খ পাব। কথি ৷ হাতের শিঙােটা বেচলে পরে হবে না। একখানা শঙ্খের কডি । বলদটা মূল করিলে হবে কািহনীটেক কড়ি ৷ এটি ওটি ঠাক ঠিকাটি চাও হে গৌরী থাকলে দিতে পারি। তোমার পিতা আছে বটে অর্থের অধিকারী। সে কি দিতে পারে না দুমুটাে শঙ্খের মুজুরি ৷ ”