পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(g |াকসাহিত্য brの@ এ দিকে কৌতুহলী ভ্রমর ভ্রমরী ময়ুর-ময়ূরী খঞ্জন-খঞ্জনীর মেলা বসিয়া গেল। যে-সকল পাখির কণ্ঠ আছে তাহারা সুবলের কলানৈপুণ্যের প্রশংসা করিতে লাগিল ; কোকিল সস্ত্রীক আসিয়া বলিয়া গেল ‘কিংকিণী। কিরীটি অতি পরিপাটি’ । ডাহুক ডাহুকী টিয়া টুয়া পাখি ঝংকারে উড়িয়া যায়। তাহারা ঝংকার করিয়া কী কথা বলিল ?— সুবল রাখাল সাজায়েছে ভালো বিনোদবিহারীরায় । এ দিকে চাতক-চাতকী শ্যামকে মেঘ ভ্ৰম করিয়া উড়িয়া উড়িয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া 'জল দে জল দে। বলিয়া ডাকিয়া বেড়াইতে লাগিল। বনের মধ্যে শাখায় পল্লবে বাতাসে আকাশে ভারি একটা রব পড়িয়া গেল । কানাই বলিছে, প্ৰাণের ভাই রে সুবল । কেমনে সাজালে ভাই বল দেখি বল ৷ কানাই জানেন র্তাহার সাজ সম্পূর্ণ হয় নাই। কোকিল-কোকিলা আর ড্রাহুক-ডাহুকীরা যাহাই বলুক-না কেন, সুবলের রুচি এবং নৈপুণ্যের প্রশংসা করিবার সময় হয় নাই । নানা ফুলে সাজালে ভাই, বামে দাও প্যারী। তবে তো সাজিবে তোর বিনোদবিহারী ৷ বৃন্দাবনের সর্বপ্রধান ফুলটিই বাকি ছিল। সেই অভাবটা পশু-পক্ষীদের নজরে না পড়িতে পারে, কিন্তু শ্যামকে যে বাজিতে লাগিল । কুঞ্জপানে যে দিকে ভাই চেয়ে দেখি আঁখি সুখময় কুঞ্জবন অন্ধকার দেখি ৷ তখন লজ্জিত সুবল কহিল— এই স্থানে থাকো তুমি নবীন বংশীধারী। খুজিয়া মিলাব আজ কঠিন কিশোরী ৷ এ দিকে ললিতা-বিশাখা সখীদের মাঝখানে রাধিক বসিয়া আছেন । সুবলকে দেখিয়া সবাই হয়ে হরষিত— এসো এসে বসো সুবল একি অচরিত ৷ সুবল সংবাদ দিল— মন্দ মন্দ বহিতেছে। বসন্তের বা, পত্র পড়ে গলি । কঁদিয়া বলেন কৃষ্ণ কোথায় কিশোরী ॥ কৃষ্ণের দুরবস্থার কথা শুনিয়া রাধা কাদিয়া উঠিয়া কহিলেন— সাধ করে হার গেঁথেছি সই দিব কার গলে । ঝাপ দিয়ে মরিব আজ যুমনার জলে ৷ রাই অনাবশ্যক এইরূপ একটা দুঃসাধ্য দুঃসাহসিক ব্যাপার ঘটাইবার জন্য মুহুর্তের মধ্যে কৃতসংকল্প হইয়া উঠিলেন। কিন্তু অবশেষে সখীদের সহিত রফা করিয়া বলিলেন— যেই সাজে আছি। আমি এই বৃন্দাবনে সেই সাজে যাব আমি কৃষ্ণদরশনে ৷ দীড়া লো দাঁড়া লো সই বলে সহচরী। ধরে যাও, ফিরে চাও রাধিকাসুন্দরী।