পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তির উপায় SOS জিজ্ঞাসা করলুম, বাবাজি, খাবে কিছু ? কপালে চোখ তুলে বললে, গুরুর কৃপা যদি হয়। মাঝে মাঝে দেখি মাথার নীচে পুঁথি রেখে নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছেন, ডাকের শব্দে ও-গাছের পাখি একটাও বাকি নেই। নাকের সামনে রেখে আসিব কলার ছড়াটা । পুষ্প । লোকটার পরিচয় নিতে হবে তো। মাখন। নিশ্চয় নিশ্চয় । হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবে, আমার চেয়ে মজা । পুষ্প। ভালো হল। হনুমানের সঙ্গে অঙ্গদ চাই। ওকে তোমারই হাতে তৈরি করে নিতে হবে। শেওড়াফুলির হাট উজাড় করে কলার কঁদি আনিয়ে নেব । মাখন। শুধু কলার কাদির কর্ম নয়। পুষ্প । তা নয় বটে। যে কারখানায় তুমি নিজে তৈরি সেখানকার দুই-চাকাওয়ালা যন্ত্রের তলায় ওকে ফেলা চাই । মাখন। দয়াময়ী, জীবের প্রতি এত হিংসা ভালো নয় । পুষ্প। ভয় নেই, আমি আছি, হঠাৎ অপঘাত ঘটতে দেব না। আপাতত কলার ছড়াটা ওকে দিয়ে st মাখন। আমাদের দেশে মেয়েরা থাকতে সন্ন্যাসী না খেয়ে মরে না। কিন্তু, ও লোকটা ভুল করেছে- বৈরাগির ব্যাবসা ওর নয়, ওর চেহারায় জালুষ নেই। নিতান্ত নিজের স্ত্রী ছাড়া ওর খবরদারি করবার মানুষ মিলবে না । পুষ্প । তোমার অমন চেহারা নিয়ে তুমি ছ। বছর চালালে কী করে । মাখন। ময়রার দোকানে মাছি তাড়িয়েছি, পেয়েছি বাসি লুচি তেলে-ভাজা, যার খদের জোটে না। যাত্রার দলে ভিত্তি সেজেছি, জল খেতে দিয়েছেন অধিকারী মুড়কি আর পচা কলা । সুবিধে পেলেই মা মাসি পাতিয়ে মেয়েদের পাঁচালি শুনিয়ে দিয়েছি। যখন পুরুষরা কাজে চলেগেছে ওরে ভাই, জানকীরে দিয়ে এসো বনওরে রে লক্ষ্মণ, এ কী কুলক্ষণ, বিপদ ঘটেছে বিলক্ষণ । মা-জননীদের দুই চক্ষু দিয়ে অঞধারা ঝরেছে।-দু-চার দিনের সঞ্চয় নিয়ে এসেছি। আমাকে ভালোবাসে সবাই। জ্যাঠাইমা আমার যদি দুটাে বিয়ে না দিত তা হলে চাই কি আমার নিজের স্ত্রীও হয়তো আমাকে ভালোবাসতে পারত। বাইরে থেকে বুঝতে পারবে না, কিন্তু আমারও কেমন অল্পেতেই মন গলে যায় । এই দেখে-না, এখন তোমাকে মা-অঞ্জনা বলতে ইচ্ছে করছে। পুষ্প । সেই ভালো, আমার নাতির সংখ্যা বেড়ে চলেছে, দিদির পদটা বড় বেশি ভারী হয়ে উঠল। আচ্ছা, জিগেস করি, তোমার মনটা কী বলছে । মাখন। তবে মা, কথাটা খুলে বলি। অনেক দিন পরে এ পাড়ার কাছাকাছি আসতেই প্রথম দিনেই আমার বিপদ বাধল। ফোড়নের গন্ধে। সেদিন আমাদের রান্নাঘরে পাঠ চড়েছিল- সত্যি বলি, বড়ো বোয়ের মুখ খারাপ, কিন্তু রান্নায় ওর হাত ভালো । সেদিন বাতাস ওঁকে শুকে বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছি। সারাদিন । তার পর থেকে অর্থভোজনের টানে এ পাড়া ছাড়া আমার অসাধ্য হল । বারবার মনে পড়ছে, কত দিনের কত গালমন্দ আর কত কঁটািচচ্চড়ি। একদিন দিব্যি গেলেছিলুম, এ বাড়িতে কোনোদিন আর ঢুকব না। প্রতিজ্ঞা ভেঙেছি কাল । পুষ্প । কিসে ভাঙালো । মাখন। তালের বড়ার গন্ধে। দিনটা ছট্‌ফটু করে কাটালুম। রাত্তিরে যখন সব নিশুতি, বাইরে থেকে হিটুকিনি খুলে ঢুকলুম ঘরে। খুট করে শব্দ হতেই আমার ছোটােটি এক হাতে পিদিম এক হাতে লাঠি নিয়ে ঢুকে পড়ল ঘরে। মুখে মেখে এসেছিলুম কালি, আমিই করে দাঁত খিচিয়ে ইউমাউখাউ করে উঠতেই পতন ও মূর্ত। বড়ে বউ একবার উকি মেরেই দিল দীেড়। আমি রয়ে বসে পেট ভরে আহার করে ধামাসুদ্ধ বড় নিয়ে এলুম বেরিয়ে । পুষ্প । কিছু প্ৰসাদ রেখে এলে না পতিব্ৰতাদের জন্যে ?