পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRV রবীন্দ্র-রচনাবলী দিতে হবে পাল্লা ; যেমন তেমন করে মারা সহজ, কিন্তু বিশ্বকর্মীয় চেলগিরি করা সহজ নয়। অধীয় হয়ে ফল নেই, গোড়া থেকেই কাজ শুরু করতে হবে- পথ দীর্ঘ, সাধনা কঠিন । দীক্ষা নিলুম যত্নবিদ্যায়। ডেট্রয়েটে ফোর্ডের মোটর-কারখানায় কোনোমতে ঢুকে পড়লুম। হাত পাকাছি লুম, কিন্তু মনে হচ্ছিল না খুব বেশি দূর এগোচ্ছি। একদিন কী দুর্মুদ্ধি ঘটল, মনে হল, কোর্ডকে যদি একটুখানি আভাস দিই যে, আমার উদ্দেশ্য নিজের উন্নতি করা নয়, দেশকে বাচানো, তা হলে স্বাধীনতাপূজায়ী আমেরিকার ধনসৃষ্টির জাদুকর বুৰি খুশি হবে, এমনকি, আমার রাজা হয়তো করে দেবে প্ৰশন্ত। ফোর্ড চাপা হাসি হেসে বললে, “আমার নাম হেনরি ফোর্ড, পুরাতন ইংরেজি নাম । SBLu BBL BBLLLLLL LD BLBLSSLDB0L BB LBBBLS TYS M BDBK KLDDLD S আমি ভেবেছিলুম, ভারতীয়কেও কেজো করে ভুলতে উৎসাহ হতেও পারে। একটা কথা বুঝতে পারলুম, টাকাওয়ালার দরদ টাকাওয়ালদেরই পরে। আর দেখলুম, এখানে ঢাকাতৈরির চক্রপথে শেখা বেশি দূর এগোবে না। এই উপলক্ষে একটা বিষয়ে চোখ খুলে গেল, সে হচ্ছে এই যে যত্নবিদ্যশিক্ষার আরো গোড়ায় যাওয়া চাই ; যন্মের মালমাসলো-সংগ্ৰহ শিখতে হবে । ধারণী শক্তিমানদের জন্যে জমা করে রেখেছেন তার দুর্গম জঠরে কঠিন খনিজ পদার্থ, এই নিয়ে দিগ বিজয় করেছে তারা, আর গরিবদের জন্যে রয়েছে তার উপরের তরে ফসল- হাড় বেরিয়েছে তাদের পাজরায়, চুপসে গেছে তাদের পেট । আমি লেগে গেলুম খনিজবিদ্যা শিখতে। ফোর্ড বলেছে ইংরেজ অকেজো, তার প্রমাণ হয়েছে ভারতবর্ষে - একদিন হাত লাগিয়েছিল তারা নীলের চাষে আর-একদিন চায়ের চাযে- সিবিলিয়ানের দল দপ্তরখানায় তকমাপরা "ল অ্যান্ড অর্ডার-এর ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু ভারতের বিশাল অন্তর্ভাণ্ডারের সম্পদ উদঘাটিত করতে পারে নি, কী মানবচিত্তের কী প্ৰকৃতির। বসে বসে পাটের চাষীর রক্ত নিংড়েছে। জামশেদ টাটাকে সেলাম করেছি। সমুদ্রের ওপর থেকে । ঠিক করেছি। আমার কাজ পটকা ছোড়া নয়। সিদ্ধ কাটতে যাব পাতালপুরীর পাথরের প্রাচীরে। মায়ের আঁচলধারা বুড়ো খোকদের দলে মিশে মা মা ধৰ্মনিতে মন্তরে পড়ব না, আর দেশের দরিদ্রকে অক্ষম অভুক্ত অশিক্ষিত দরিদ্র বলেই মানব, দরিদ্রনারায়ণ বুলি দিয়ে তার নামে মন্তর বানাব না। প্রথম বয়সে এরকম বচনের পুতুলীগড় খেলা অনেক খেলেছি- কবিদের কুমোরবাড়িতে স্বদেশের যে রাতা-লাগানো প্রতিমা গড়া হয়, তারই সামনে বসে বসে অনেক চোখের জল ফেলেছি। কিন্তু আর নয়, এই জাগ্ৰত বুদ্ধির দেশে এসে বান্তবকে বাস্তব বলে জেনেই শুকনো চোখে কোমর বেঁধে কাজ করতে শিখেছি। এবার গিয়ে বেরিয়ে পড়বে এই বিজ্ঞানী বাঙালি কোদাল নিয়ে কুড়ুল নিয়ে হাতুড়ি নিয়ে দেশের গুপ্তধনের তুল্লাসে, এই কাজটাকে কবির গদগদকণ্ঠের চেলারা দেশমাতৃকার পূজা বলে চিনতেই পারবে না । 'ኣም ফোর্ডের কারখানাঘর ছেড়ে তার পরে নবছর কাটিয়েছি। খনিবিদ্যা খনিজবিদ্যা শিখতে । যুরোপের নানা কেন্দ্ৰে ঘুরেছি, হাতেকলমে কাজ করেছি, দুই-একটা যন্ত্রকৌশল নিজেও বানিয়েছি- তাতে উৎসাহ পেয়েছি অধ্যাপকদের কাছে, নিজের উপরে বিশ্বাস হয়েছে, ধিক্কার দিয়েছি। ভূতপূর্ব মদ্রমুখ অকৃতাৰ্থ নিজেকে। আমার ছোটোগল্পের সঙ্গে এই সব বড়ো বড়ো কথার একান্ত যোগ নেই- বাদ দিলে চলন্ত, হয়তো ভালেই হত । কিন্তু এই উপলক্ষে একটা কথা বলার দরকার ছিল, সেটা বলি । ীেবনের গোড়ার দিকে নারীপ্রভাবের ম্যাগনেটিজমে জীবনের মেরুপ্রদেশের আকাশে যখন অরোরার রঙিন ঘটায় আন্দোলন ঘটতে থাকে, তখন আমি ছিলুম। অন্যমনস্ক, একেবারে কোমর বেঁধে অন্যমনস্ক । আমি সন্ন্যাসী, আমি কর্মযোগী- এই সব বাণীর দ্বারা মনের আগল শক্ত করে আঁটি ছিল । কন্যাদায়িকীয়া যখন আশেপাশে আনাগোনা করেছিল, আমি স্পষ্ট করেই বলেছি, কন্যায় কুটিতে যদি অকালবৈধব্যযোগ থাকে, তবেই যেন কন্যার পিতা আমার কথা চিন্তা করেন । পাশ্চাত্য মহাদেশে নারীসঙ্গ ঠেকাবার বেড়া নেই। সেখানে আমার পক্ষে দুর্যোগের বিশেষ আশঙ্কা ছিল ; আমি যে সুপুরুষ, দেশে থাকতে নারীদের মুখে সে কথা চোখের মীেন ভাষা ছাড়া অন্য কোনো