পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छेिन गौ Sb তাকে এই প্রথম দেখা গেল। ধরা পড়ে গেল আরণ্যক, যে যুক্তি মানে না, যে মোহ মানে। বনের একটা মায়া আছে, গাছপালার নিঃশব্দ চক্রান্ত, আদিম প্ৰাণের মন্ত্রকানি । দিনে দুপুরে বঁা বা করে তার উদাত্ত সুর, রাতে দুপুরে মন্ত্রগতীয় ধ্বনি, গুঞ্জন করতে থাকে জীব-চেতনায়, আদিম প্রাণের গৃঢ় প্রেরণায় বুদ্ধিকে দেয় আবিষ্ট করে । জিয়লজির চর্চার মধ্যেই ভিতরে ভিতরে এই আরণ্যক মায়ার কাজ চলছিল, খুঁজছিলুম রেডিয়ামের কণা, যদি কৃপণ পাথরের মুঠির মধ্য থেকে বের করা যায় ; দেখতে পেলুম অচিরাকে, কুসুমিত শালগাছের ছায়ালোকের বন্ধনে। এর পূর্বে বাঙালি মেয়েকে দেখেছি। সন্দেহ নেই। কিন্তু সব কিছু থেকে স্বতন্ত্ৰ ভাবে এমন একান্ত করে তাকে দেখবার সুযোগ পাই নি। এখানে তার শ্যামল দেহের কোমলতায় বনের লতাপাতা আপন ভাষা যোগ করে দিল । বিদেশিনী রূপসী তো অনেক দেখেছি, যথোচিত ভালোও লেগেছে। কিন্তু বাঙালি মেয়ে এই যেন প্রথম দেখলুম, ঠিক যো-জায়গায় তাকে সম্পূৰ্ণ দেখা যেতে পারে, এই নিভৃত বনের মধ্যে সে নানা পরিচিত-অপরিচিত বান্তবের সঙ্গে জড়িয়ে মিশিয়ে নেই। দেখে মনে হয় না, সে বেশী দুলিয়ে ডায়োসিশনে পড়তে যায়, কিংবা বেথুন কলেজের ডিগ্রিধারিণী, কিংবা বালিগন্জের টেনিসপটিতে উচ্চ কলহস্যে চা পরিবেশন করে। অনেকদিন আগে ছেলেবেলায় হরু ঠাকুর কিংবা রাম বসুর যে গান শুনে তার পরে ভুলে গিয়েছিলুম, যে-গান আজ রেডিয়োতে বাজে না, গ্রামোফোনে পাড়া মুখরিত করে না, জানি নে কেন মনে হল সেই গানের সহজ রাগিণীতে ঐ বাঙালি মেয়েটির রূপের ভূমিকা- মনে রইল সই মনের বেদনা। এই গানের সুরে যে-একটি করুশ ছবি আছে, সে আজ রােপ নিয়ে আমার চোখে স্পষ্ট ফুটে উঠল। এও সম্ভব হল । কোন প্রবল ভূমিকম্পে পৃথিবীর-যে তলায় লুকোনো আগ্নেয় সামগ্ৰী উপরে উঠে পড়ে, জিয়লজি শাস্ত্ৰে তা পড়েছি, নিজের মধ্যে দেখলুম। সেই নীচের তলার অন্ধকারের তপ্তবিগলিত জিনিসকে হঠাৎ উপরের আলোতে । কঠোর বিজ্ঞানী নবীনমাধবের অটল অন্তঃন্তরে এই উলটাপালট আমি কোনোদিন আশা করতে পারি নি । বুঝতে পারছি, যখন আমি রোজ বিকেলবেলায় এই পথ দিয়ে আমার কাজে ফিরেছি, ও আমাকে দেখেছে, অন্যমনস্ক আমি ওকে দেখি নি । বিলেতে যাবার পর থেকে নিজের চেহারার উপর একটা গর্ব জন্মেছে । ও, হাউ হ্যান্ডসম- এই প্ৰশক্তি কানাকানিতে আমার অভ্যন্ত হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু বিলোতফেরত আমার কোনো কোনো বন্ধুর কাছে শুনেছি, বাঙালি মেয়ের রুচি, আলাদা, তারা মোলায়েম মেয়েলি রূপই পুরুষের রূপে খোজে। চলিত কথা হচ্ছে- কীর্তিকের মতো চেহারা। বাঙালি কাৰ্তিক আর যাই হােক, কোনো পুরুষে দেবসেনাপতি নয়। প্যারিসে একজন বান্ধবীর মুখে শুনেছি, বিলিতি সাদা রঙ রঙের অভাব ; ওরিয়েন্টালের দেহে গরম আকাশ যে রঙ ঐকে দেয়। সে সত্যিকার রঙ, সে ছায়ার রঙ, ঐ রঙই আমাদের ভালো লাগে ; এ কথাটা বঙ্গোপসাগরের ধারে বোধ হয় খাটে না। এতদিন এসব আলোচনা আমার মনেই ওঠে নি। কয়েকদিন ধরে আমাকে ভাবিয়েছে। রোদো-পোড়া আমার রঙ, লম্বা আমার প্রাণসার দেহ, শক্ত আমার বাহু, দ্রুত আমার গতি, শুনেছি। দৃষ্টি আমার তীক্ষ, নাক চিবুক কপাল নিয়ে সুস্পষ্ট জোরালো আমার চেহারা। এপস্টাইন পাথরে আমার মূর্তি গড়েতে চেয়েছিল, সময় দিতে পারিনি। কিন্তু বাঙালিকে আমি মায়ের খোকা বলে জানি, আর মায়েরা তাদের কোলের ধনকে মোমে-গড়া পুতুলের মতো দেখতেই ভালোবাসে। এসব কথা মনের মধ্যে ঘুলিয়ে উঠে আমাকে স্নাগিয়ে তুলছিল। আগেভাগেই কল্পনায় ঝগড়া করছিলাম। অচিরার সঙ্গে, বলছিলুম, “তুমি যাকে বলে সুন্দর সে বিসর্জনের দেবতা, তোমাদের অব। যদি বা পায় সে, টেকে না। বেশিদিন 'বলছিলুম, “আমি বড়ো বড়ো দেশের স্বয়ংঘরসভার মালা উপেক্ষা করে এসেছি, আর ভূমি আমাকে উপেক্ষা করবে ? গায়ে পড়ে এই বানানো বাগড়া এমনি ছেলেমানুষ যে, একদিন হোসে উঠেছি আপনি উন্মায়। এ দিকে বিজ্ঞানীর যুক্তি কাজ করছে ভিতরে ভিতরে। মনকে জানাই, এটাও একটা মন্ত কথা, আমার যাতায়াতের পথের ধারে ও বসে থাকে- একান্ত নিতৃতই যদি ওর প্রার্থনীয় DzELY BBB BBB S LBB LLLBBBBBBBBLBBBBBL BBBS BB BYzBB