পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

टिन जी Sp কন্যাকর্তাদের মনকে সাত্মনা দেবার জন্যে। ওর কোনো যথার্থ মানে নেই।” “একেবারে মানে যে নেই, এ কথা নিশ্চিত স্থির করলেন কী করে ।” “এটা গণিতের প্রব্লেম- তাও হইয়ার ম্যাথমেটিকস বললে যা বোঝায়, তা নয়। পূর্বেই শোনা গেছে, আপনি ছত্রিশ বছরের ছেলেমানুষ। হিসেব করে দেখলুম, এর মধ্যে আপনার মা অন্তত পাঁচ-সাতবার আপনাকে বলেছেন, “‘বাবা, ঘরে বউ আনতে চাই।” আপনি বলেছেন, “তার আগে চাই লোহার সিন্দুকে টাকা আনতে ’ মা চোখের জল মুছে চুপ করে রইলেন। তার পরে ইতিমধ্যে আপনার আর-সব হয়েছে, কেবল ফাসি ছিল বাকি । শেষকালে এখানকার রাজসরকারে যখন মোটা মাইনের পদ জুটল, মা আবার বললেন, “বাবা, এবার বিয়ে করতে হবে, আমার আর কদিন বা সময় আছে । আপনি বললেন, “আমার জীবন আর আমার সায়ান্স এক, সে আমি দেশকে উৎসর্গ করব । আমি কোনোদিন বিয়ে করব না৷ ”হতাশ হয়ে আবার তিনি চোখের জল মুছে বসে আছেন । আপনার ছত্ৰিশ বছর বয়সের গণিতফল গণনা করতে আমার গণনায় ভুল হয়েছে কি না বলুন, সত্যি করে বলুন ।” এ মেয়ের সঙ্গে অনাবধানে কথা কওয়া বিপদজনক । কিছুদিন আগেই একটা ব্যাপার ঘটেছিল। প্রসঙ্গক্রমে অচিরা আমার্কে বলেছিল, “আমাদের দেশে মেয়েদের আপনারা পান সংসারের সঙ্গিনীরূপে । সংসারে যাদের দরকার নেই, এ দেশের মেয়েরাও তাদের কাছে অনাবশ্যক । কিন্তু বিলেতে যারা বিজ্ঞানে তপস্বী, তাদের তো উপযুক্ত তপস্বিনী জোটে, যেমন ছিল অধ্যাপক কুরির সধর্মিণী মাদাম কুরি । সেরকম কোনো মেয়ে আপনি সে দেশে থাকতে পান নি ?” মনে পড়ে গেল ক্যাথরিনের কথা । একসঙ্গে কাজ করেছি। লন্ডনে থাকতে । এমন-কি, আমার একটা রিসর্চের বইয়ে আমার নামের সঙ্গে তার নামও জড়িত ছিল । মানতে হল কথাটা । অচিরা বললে, “তাকে আপনি বিয়ে করলেন না কেন । তিনি কি রাজি ছিলেন না ।” আবার মানতে হল, “হা, প্ৰস্তাব উঠার দিক থেকেই উঠেছিল।” “তবে ?” “আমার কাজ যে ভারতবর্ষের। শুধু সে তো বিজ্ঞানের নয়।” “অর্থাৎ ভালোবাসার সফলতা আপনার মতো সাধকের কামনার জিনিস নয় । মেয়েদের জীবনের চরম লক্ষা ব্যক্তিগত, আপনাদের নৈর্ব্যক্তিক ।” এর জবাবটা হঠাৎ মুখে এল না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে অচিরা বললে, “বাংলা সাহিত্য আপনি বোধ হয় পড়েন না । কচ ও দেবযানী বলে একটা কবিতা আছে। তাতে ঐ কথাই আছে, মেয়েদের ব্রত হচ্ছে পুরুষকে বাধা, আর পুরুষদের ব্ৰত সে-বাধন, কাটিয়ে অমরলোকের রাস্তা বানানো। কচ বেরিয়ে পড়েছিল দেবযানীর অনুরোধ এড়িয়ে, আপনি কাটিয়ে এসেছেন মায়ের অনুনয়। একই কথা। মেয়েপুরুষের এই চিরকালের দ্বন্ধে আপনি জয়ী হয়েছেন। জয় হােক আপনার পৌরুষের । কঁদুক মেয়েরা, সে-কান্না আপনারা নিন পূজার নৈবেদ্য। দেবতার উদ্দেশে আসে। নৈবেদ্য, কিন্তু দেবতা থাকেন নিরাসক্ত ।” অধ্যাপক এই আলোচনার মূল লক্ষ্য কিছুই বুঝলেন না। সগৰ্বে বললেন, “দিদির মুখে গভীর সত্য কেমন বিনা চেষ্টায় প্রকাশ পায়, বাইরের লোকে শুনলে মনে করবে-” উঠার কেবলই ভয়, বাইরের লোক তার নাতনিকে ঠিক বুঝতে পারবে না। অচিরা বললে, “বাইরের লোক মেয়েদের জেঠামি সইতে পারে না, তাদের কথা তুমি ভেবো না। তুমি আমাকে ঠিক বুঝলেই श्न ।।” p অচিরা খুব বড়ো কথাও বলে থাকে হাসির হলে, কিন্তু আজ সে কী গভীর। আমার একটা কথা আন্দাজে মনে হল, ভাবতোষ ওকে বুঝিয়েছিল যে, সে যে ভারত সরকারের উচ্চ গগনের জ্যোতির্লোক থেকে বাৰু এনেছে, তারও লক্ষ্য খুব উচ্চ এবং নিঃশ্বাের্থ। ব্রিটিশ রাষ্ট্রশাসনের ভাণ্ডার হতেই সে শক্তি ংগ্ৰহ করতে পারবে দেশের কাজে লাগাতে। এত সহজ নয় অচিরাকে ছলনা করা। সে যে ভোলে