পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sae রবীন্দ্র-রচনাবলী সরিয়ে নিয়ে যাওয়াই ভালো, এজন্যে উনি আমাকে ধন্যবাদ দেবেন।” রেবতী দেখলে, নীলার ছটফট করবার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না, নিজেকে সে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টমাত্র করলে না, বেশ যেন আরামে ওর বক্ষ আশ্রয় করে রইল । ওর গলা জড়িয়ে রইল বিশেষ একটা আসক্তভাবে । যেতে যেতে বললে, “ভয় নেই বিজ্ঞানী সাহেব, এটা নারীহরণের রিহার্সলমাত্রলঙ্কাপারে যাচ্ছি নে, ফিরে আসব তোমার নেমন্তয়ে ।” রেবতী ছিড়ে ফেললে সেই লেখাটা । হালদারের বাহুর জোর এবং অসংকুচিত অধিকার-বিস্তারের নিজের বিদ্যাভিমান ওর কাছে আজ বৃথা হয়ে গেল। আজ সান্ধ্যভোজ একটা নামজাদা রেস্টোরাতে । নিমন্ত্রণকর্তা স্বয়ং রেবতী ভট্টাচাৰ্য, তার সম্মানিত পার্শ্ববর্তিনী নীলা । সিনেমার বিখ্যাত নটী এসেছে গান গাইতে । টেস্ট প্রোপোজ করতে উঠেছে বন্ধুবিহারী, গুণগান হচ্ছে রেবতীর আর তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে নীলার। মেয়েরা খুব জোরের সঙ্গে সিগারেট টানছে প্রমাণ করতে যে তারা সম্পূৰ্ণ মেয়ে নয়। প্রৌঢ়া মেয়েরা যৌবনের মুখোশ পরে ইঙ্গিতে ভজিতে অট্টহাস্যে উচ্চকণ্ঠে পরস্পর গা-টেপটিপিতে যুবতীদের ছাড়িয়ে যাবার জন্যে মাতামতির ঘোড়দৌড় চালিয়েছে। হঠাৎ ঘরে ঢুকল সোহিনী। স্তব্ধ হয়ে গেল ঘরসুদ্ধ সবাই। রেবতীর দিকে তাকিয়ে সোহিনী বললে, “চিনতে পারছি নে ৷ ডক্টর ভট্টাচাৰ্য বুঝি ? খরচের টাকা চেয়ে পাঠিয়েছিলে, পাঠিয়ে দিয়েছি গোল শুক্রবারে ; এই তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি কিছু অকুলোন হচ্ছে না। এখন একবার উঠতে হচ্ছে, আজ রাত্রেই ল্যাবরেটরির ফর্দ অনুসারে জিনিসপত্র মিলিয়ে দেখব ।” “আপনি আমাকে অবিশ্বাস করছেন ?” “এতদিন অবিশ্বাস তো করি নি। কিন্তু লজ্জাশরাম যদি থাকে বিশ্বাসরক্ষার কথা তুমি আর মুখে ՔGN] *II " রেবতী উঠতে যাচ্ছিল, নীলা তাকে কাপড় ধরে টেনে বসিয়ে দিলে। বললে, “আজি উনি বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করেছেন, সকলে যান আগে, তার পরে উনি যাবেন ।” এর মধ্যে একটা নিষ্ঠুর ঠোকর ছিল । সার আইজাক মায়ের বড়ো পেয়ারের, ওর মতো এতবড়ো বিশ্বাসী আর কেউ নেই, তাই সকলকে ছাড়িয়ে ল্যাবরেটরির ভার ওর উপরেই। আরো একটু দেগে দেবার জন্যে বললে, “জান মা ? অতিথি আজ পয়ষট্টিজন, এ ঘরে সকলকে ধরে নি, এক দল আছে পাশের ঘরে- ঐ শুনিছ না হো হো লাগিয়েছে ? মাথা-পিছু পিচিশ টাকা ধরে নেয়, মদ না খেলেও মদের দাম ধরে দিতে হয় । খালি গেলাসের জরিমানা কম লািগল না। আর কেউ হলে মুখ চুপসে যেত ।। ওঁর দরাজ হাত দেখে ব্যাঙ্কের ডিরেক্টরের তাক লেগে গেছে । সিনেমার গাইয়েকে কত দিতে হয়েছে জান ?- তার এক রাত্তিরের পাওনা চারশো টাকা ।” রেবতীর মনের ভিতরটা কাটা কইমাছের মতো ধড়ফড় করছে ; শুকনো মুখে কথাটি নেই। সোহিনী জিজ্ঞাসা করলে, “আজকের সমারোহটা কিসের জন্যে ।” “তা জান না বুঝি ? অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে তো বেরিয়ে গেছে, উনি জাগানী ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, তারই সম্মানে এই ভোজ। লাইফ মেম্বারশিপের ছশো টাকা সুবিধেমত পরে শুধে দেবেন।” “সুবিধে বোধ হয়। শীঘ্র হবে না।” রেবতীর মনটার মধ্যে স্টীমরোলার চলাচল করছিল । সোহিনী তাকে জিজ্ঞাসা করলে, “তা হলে এখন তোমার ওঠবার সুবিধে হবে না।” রেবতী নীলার মুখের দিকে তাকালে। তার কুটিল কটাক্ষের খোচায় পুরুষমানুষের অভিমান জেগে উঠল । বললে, “কেমন করে যাই, নিমন্বিতেরা সব-” ” L সোহিনী বললে, “আচ্ছা, আমি ততক্ষণ এখানে বসে রইলুম। নাসেরউল্লা, তুমি দরজার কাছে হাজির থাকো ।”