পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সাবেককেলে ভদ্রঘরে আমার জন্ম, মেয়েদের সম্বন্ধে আমার সংকোচ ঘুচিতে চায় না। আমার জর্মন ডিগ্রি উচুদরের ছিল। সেটা এখানে সরকারী কাজে বাতিল। তাই সুর্যের্গ করে। ছোটােনাগপুরে চন্দ্ৰবংশীয় এক রাজার দরবারে কাজ নিয়েছি। সৌভাগ্যক্রমে ৬ষ্ঠার ‘ ছেলে দেবিকাপ্ৰসাদ কিছুদিন কেমব্রিজে পড়াশুনো করেছিলেন। দৈবাৎ জুরিকে তঁর সঙ্গে আমার দেখা। ষ্ঠাকে বুঝিয়েছিলুম আমার প্ল্যান। শুনে উৎসাহিত হয়ে ঠাদের স্টেটে আমাকে লাগিয়ে দিলেন জিয়লজিকাল সর্ভের কাজে খনি-আবিষ্কারের প্রত্যাশায়। এত বড়ো কাজের ভার আনাড়ি সিভিলিয়নকে না দেওয়াতে সেক্রেটারিয়টের উপরন্তরে বায়ুমণ্ডল বিক্ষুব্ধ হয়েছিল। দেবিকাপ্রসাদ শক্ত ধাতের লোক, বুড়ে রাজার মন টলমল করা সত্ত্বেও টিকে গেলুম। এখানে আসবার আগেমা বললেন, “ভালো কাজ পেয়েছ, এবার বাবা বিয়ে করো।” আমি বললুম, অর্থাৎ ভালো কাজ মাটি করে । তার পরে বোবা পাথরকে প্রশ্ন করে করে বেড়াচ্ছিলুম পাহাড়ে জঙ্গলে । সে সময়টাতে পলাশফুলের রাঙা রঙে বনে বনে নেশা লেগে গিয়েছে। শালগাছে অজস্ৰ মাজরী, মীেমাছিদের অনবরত গুজন । ব্যাবসাদারেরা মীে সংগ্রহে লেগেছে, কুলের পাতা থেকে জমা করছে তসর-রেশমের গুটি, সাওতালরা কুড়চ্ছে পাকা মহুয়া ফল। বিরবির শব্দে হালকা নাচের ওড়না ঘুরিয়ে চলেছিল একটি ছিপছিপে নদী। শুনেছি। এখানকার কোনো অধিবাসিনী তার নাম দিয়েছেন তনিকা। র্তার কথা * शव । q দিনে দিনে বুঝতে পারছি এ জায়গাটা ঝিমিয়ে-পড়া ঝাপসা চেতনার দেশ, এখানে একলা মনের मूल का यादी काळ व्या काळी का काळ या काळ न कार्ल u মনটাতে একটু আবেশের ঘোর লািগছিল। ক্ষণে ক্ষণে টিলে হয়ে আসছিল কাজের চাল। নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছিলুম, ভিতর থেকে কষে জোর লাগাচ্ছিলুম দাড়ে। ভয় হচ্ছিল ট্রপিকাল মাকড়সার জালে জড়িয়ে পড়ছি বুঝি। শয়তান ট্রপিক্স জন্মকাল থেকে এদেশে হাতপাখার হাওয়ায় ডাইনে বায়ে হারের মন্ত্র চালাচ্ছে আমাদের ললাটে, মনে মনে পণ করছি এর স্বেদসিক্ত জাদু এড়াতেই হবে। বেলা পড়ে এল। এক জায়গায় মাঝখানে চর ফেলে নুড়ি পাথর ঠেলে ঠেলে দুই শাখায় ভাগ হয়ে চলে গিয়েছে নদী । সেই বালুর দ্বীপে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে সারি সারি বকের দল। দিনাবসানে তাদের এই ছুটির ছবি দেখে রোজ আমি চলে যাই আমার কাজের বঁাক ফেরাতে । বুলিতে মাটি পাথর অভ্রের টুকরো নিয়ে সেদিন ফিরছিলুম আমার বাংলাঘরে, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার কাজে। অপরায়ু আর সন্ধ্যার মাঝখানে দিনের যে একটা ফালতো পোড়ো সময় থাকে। সেইখানটাতে একলা মানুষের মন এলিয়ে পড়ে। তাই আমি নিজেকে চেতিয়ে রাখবার জন্যে এই সময়টা লাগিয়েছি পরখ করার কাজে । ডাইনামো দিয়ে বিজলি বাতি জ্বালাই, কেমিক্যাল নিয়ে মাইক্রসকোপ নিয়ে নিক্তি নিয়ে বসি । এক-একদিন রাত দুপুর পেরিয়ে যায়। আজ একটা পুরোনো পরিত্যক্ত তামার খনির খবর পেয়ে দ্রুত উৎসাহে তারই সন্ধানে চলেছিলুম। কাকগুলো মাথার উপর দিয়ে বঁাকে বঁাকে উড়ে চলেছে।ফিকে আলোর আকাশে কাকা শব্দে। অদূরে একটা টিবির উপরে তাদের পঞ্চায়েত বসবার পড়েছে হঁকডাক । হঠাৎ বাধা পড়ল আমার কাজের রাস্তায় । পাঁচটা গাছের চক্রমণ্ডলী ছিল বনের পথের ধারে একটা উচু ডাঙার পরে। সেই বেষ্টনীর মধ্যে কেউ বসে থাকলে কেবল একটিমাত্র অবকাশে তাকে দেখা যায়, হঠাৎ চোখ এড়িয়ে যাবারই কথা। সেদিন মেঘের মধ্যে দিয়ে একটি আশ্চৰ্য দীপ্তি বিছুরিত হয়েছিল । সেই গাছগুলোর র্যাকটার ভিতর দিয়ে রাঙা আলোর ছোরা চিরে ফেলেছিল ভিতরকার gig ঠিক সেই আলোর পথে বসে আছে মেয়েটি গাছের ওঁড়িতে হেলান দিয়ে, পা দুটি বুকের কাছে