পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন সী। ●●● গুটিয়ে নিয়ে। পাশে ঘাসের উপর পড়ে আছে একখানা খাতা, বোধ হয় ডায়ারি । বুকের মধ্যে ধৰ্ক করে উঠল, থমকিয়ে গেলুম। দেখলুম যেন বিকেলের স্নান রৌদ্রে গড় একটি সোনার প্রতিমা । চেয়ে রইলুম গাছের গুড়ির আড়ালে দাড়িয়ে। অপূর্ব ছবি এক মুহুর্তে চিহ্নিত হয়ে গেল মনের চিরস্মরণীয়াগারে। আমার বিস্তৃত অভিজ্ঞতার পথে অনেক অপ্রত্যাশিত মনোহরের দরজায় ঠেকেছে৷ মন, পাশকাটিয়ে চলে গেছি, আজি মনে হল জীবনের একটা কোন চরমের সংস্পর্শে এসে পৌঁছলুম। এমন করে ভাবা, এমন করে বলা আমার একেবারে অভ্যন্ত নয়। যে আঘাতে মানুষের নিজের অজানা একটা অপূর্ব স্বরূপ ছিটিকিনি খুলে অবরিত হয়, সেই আঘাত আমাকে লািগল কী করে। অত্যন্ত ইচ্ছা করছিল ওর কাছে গিয়ে কথার মতো কথা একটা কিছু বলি। কিন্তু জানি নে কী কথা । যে পরিচয়ের সর্বপ্রথম কথা, যে কথায় জানিয়ে দেবে খৃস্টীয় পুরাণের প্রথম সৃষ্টির বাণী- আলো হোক, ব্যক্ত হোক যা অব্যক্ত । আমি মনে মনে ওর নাম দিলুম- অচিরা। তার মানে কী । তার মানে এক মুহুর্তেই যার প্রকাশ, বিদ্যুতের মতো । একসময়ে মনে হল অচিরা যেন জানতে পেরেছে কে একজন দাড়িয়ে আছে আড়ালে । স্তবন্ধ উপস্থিতির একটা নিঃশব্দ শব্দ আছে বুঝি । একটু তফাতে গিয়ে কোমরবন্ধ থেকে ভুজালি নিয়ে একান্ত মনোযোগের ভান করে মাটি খোচাতে লাগলুম। বুলিতে যা হয় কিছু দিলুম পুরে, গোটা কয়েক কাকরের ঢেলা ৷ চলে গেলুম মাটির দিকে কুঁকে পড়ে কী যেন সন্ধান করতে করতে। কিন্তু নিশ্চয় মনে জানি র্যাকে ভোলাতে চেয়েছিলুম তিনি ভোলেননি। মুগ্ধ পুরুষচিত্তের বিহবলতার আরো অনেক দৃষ্টিান্ত আরো অনেকবার তার গোচর হয়েছে সন্দেহ নেই। আশা করলুম। আমার বেলায় এটা তিনি উপভোগ করলেন, সকৌতুকে কিংবা সগৰ্বে, কিংবা হয়তো বা একটু মুগ্ধ মনে । কাছে যাবার বেড়া যদি আর-একটু ফাক করাতুম তা হলে কী জানি री श्ठ । ब्रश कन्नडन, ना ब्रांप्शन खान कद्मष्ठा ? অত্যন্ত চঞ্চল মনে চলেছি আমার বাংলাঘরের দিকে এমন সময় চোখে পড়ল দুইটুকরোয় ছিন্নকরা একখানা চিঠির খাম। তাতে নাম লেখা, ভবতোষ মজুমদার আই.সি. এস.ছাপরা । তার বিশেষত্ব এই যে, এতে টিকিট আছে, কিন্তু সে টিকিট ডাকঘরের ছাপ নেই। বুঝতে পারলুম (ছড়া চিঠির খামের মধ্যে একটা ট্র্যাজেডির ক্ষতচিহ্ন আছে। পৃথিবীর ছেড়া স্তর থেকে তার বিপ্লবের ইতিহাস বের করা আমার কাজ। সেইরকম কাজে লাগলুম (ছড়া খামটা নিয়ে। ইতিমধ্যে ভাবনা ধরিয়ে দিয়েছে আমার নিজের অন্তঃকরণটা। নিজের অপ্ৰমত্ত কঠিন মনটাকে চিনে নিয়েছি বলে স্পষ্ট ধারণা ছিল। আজ এই প্রথম দেখলুম তার পাশের পাড়াতেই লুকিয়ে বসে আছে বুদ্ধিশাসনের বহির্ভূত একটা অবােধ । নির্জন অরণ্যের সুগভীর কেন্দ্ৰন্থলে একটা সুনিবিড় সম্মোহন আছে যেখানে চলছে তার বুড়ো বুড়ো গাছপালার কানে কানে চক্রান্ত, যেখানে ভিতরে ভিতরে উচ্ছসিত হচ্ছে সৃষ্টির আদিম প্ৰাণের মন্ত্রগুঞ্জরণ। দিনে দুপুরে বঁা বঁা করে ওঠে তার সুর উদাত্ত পর্দায়, রাতে দুপুরে তার মন্ত্ৰগভীর ধ্বনি । স্পাদিত হতে থাকে জীবচেতনায়, বুদ্ধিকে দেয় আবিষ্ট করে। জিয়লজি-চৰ্চার ভিতরে ভিতরেই মনের আন্তভীেম প্রদেশে ব্যাপ্ত হচ্ছিল এই আরণ্যক মায়ার কাজ । হঠাৎ স্পষ্ট হয়ে উঠে সে এক মুহুর্তে আমার দেহমানকে আবিষ্ট করে দিল যখনই দেখলুম। অচিরাকে কুসুমিত ছায়ালোকের পরিবেষ্টনে । বাঙালি মেয়েকে ইতিপূর্বে দেখেছি সন্দেহ নেই। কিন্তু তাকে এমন বিশুদ্ধ স্বপ্রকাশ স্বাতন্ত্র্যে দেখি নি। লোকালয়ে যদি এই মেয়েটিকে দেখতুম তা হলে যাকে দেখা যেত নানা লোকের সঙ্গে নানা ঈশ্বন্ধে জড়িত বিমিশ্রিত এ মেয়ে সে নয়, এ দেখা দিল পরিবিস্তৃত নির্জন সবুজ নিবিড়তার পরিপ্রেক্ষিতে একান্ত স্বকীয়তায়। মনে হল না বেশী দুলিয়ে এ কোনো কালে ডায়ােসিশনে পর্সেন্টেজ মীখতে গেছে, শাড়ির উপরে গাউন বুলিয়ে ডিগ্রি নিতে গেছে কনভোকেশনে, বালিগঞ্জে