পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छेिन मी (OSY “সেও ভালো, যাকে বলে মন্দর ভালো ।” “কাণ্ডটা কী দেখলেন তো ?” আমি বললুম, “আমার সামনে লক্ষ্য করবার বিষয় কেবল একটিমাত্রই ছিল, আর কিছুই ছিল না।” এইটুকু ঠাট্টায় অচিরা সত্যই বিরক্ত হয়ে বললে, “আপনার আলাপ ক্রমেই যদি আমন ইশারাওয়ালা হয়ে উঠতে থাকে তা হলে ফিরিয়ে আনব ডাক্তার সেনগুপ্তকে, তার স্বভাব ছিল গভীর।” আমি বললুম, “আচ্ছা তা হলে কাণ্ডটা কী হয়েছিল বলুন।” “ঠাকুর যে ভাত রোধেছিল সে কড়াকড়ে, আন্ধেক তার চাল। আমি বললুম, দাদু, এ তো তোমার চলবে না। দাদু অমনি বলে বসলেন, জান তো ভাই, খাবার জিনিস শক্ত হলে ভালো করে চিবোবার দরকার হয়, তাতেই হজমের সাহায্য করে। পাছে আমি দুঃখ করি দাদুর জেগে উঠল সায়েলের বিদ্যে। নিমকিতে নুনের বদলে যদি চিনি দিত তা হলে নিশ্চয় দাদু বলত, চিনিতে শরীরের এনার্জি বাড়িয়ে দেয় ।” - “দাদু, ও দাদু, তুমি ওখানে বসে বসে কী পড়ছি। আমি যে এদিকে তোমার চরিত্রে অতিশয়োক্তি-অলংকার আরোপ করছি, আর নবীনবাবু সমস্তই বেদবাক্য বলে বিশ্বাস করে নিচ্ছেন।” কিছু দূরে পোড়ো মন্দিরের সিঁড়ির উপরে বসে অধ্যাপক বিলিতি ত্রৈমাসিক পড়ছিলেন। অচিরার ডাক শুনে সেখান থেকে উঠে আমাদের কাছে বসলেন । ছেলেমানুষের মতো হঠাৎ আমাকে জিগগোসা করলেন, “আচ্ছা নবীন, তোমার কি বিবাহ হয়েছে।” কথাটা এতই সুস্পষ্ট ভাবব্যঞ্জক যে আর কেউ হলে বলত 'না', কিংবা ঘুরিয়ে বলত । আমি আশাপ্ৰদ ভাষায় উত্তর দিলুম, “না, এখনো হয় নি।” অচিরার কাছে কোনো কথা এড়ায় না । সে বললে, “ঐ এখনো শব্দটা সংশয়গ্ৰস্ত কন্যাকর্তাদের মনকে সাত্মনা দেবার জন্যে, ওর কোনো যথার্থ অর্থ নেই ।” “একেবারেই নেই নিশ্চিত ঠাওরালেন কী করে "|” “ওটা গণিতের প্রব্লেম, সেও হাইয়ার ম্যাথম্যাটিকস নয়। পূর্বেই শোনা গেছে আপনি ছত্রিশ বছরের ছেলেমানুষ। হিসেব করে দেখলুম। এর মধ্যে আপনার মা অন্তত পাঁচ-সাতবার বলেছেন, “‘বাবা ঘরে বউ আনতে চাই।” আপনি জবাব করেছেন, “তার পূর্বে ব্যাঙ্কে টাকা আনতে চাই।” মা চোখের জল মুছে চুপ করে রইলেন, তার পরে মাঝখানে আপনার আর-সব ঘটেছিল কেবল ফাসি ছিল বাকি । শেষকালে এখানকার রাজসরকারের মোটা মাইনের কাজ। জুটল। মা বললেন, “এইবার বউ নিয়ে এসো ঘরে । বড়ো কাজ পেয়েছ।” আপনি বললেন, “বিয়ে করে সে কাজ মাটি করতে পারব না।” আপনার ছত্রিশ বছরের গণিতফল গণনা করতে ভুল হয়েছে কি না বলুন ।” এ মেয়ের সঙ্গে অনাবধানে কথা বলা নিরাপদ নয়। কিছুদিন আগেই আমার একটা পরীক্ষা হয়ে গৈছে । কথায় কথায় অচিরা আমাকে বলেছিল, “আমাদের দেশের মেয়েরা আপনাদের সংসারের সঙ্গিনী হতে পারে। কিন্তু বিলেতে যারা জ্ঞানের তাপস তাদের তপস্যার সঙ্গিনী তো জোটে, যেমন ছিলেন অধ্যাপক কুরির সাধর্মিণী মাদাম কুরি। আপনার কি তেমন কেউ জোটে নি।” জুড়ে গেল ক্যাথরিনকে। সে এইকালে আমার বিজ্ঞােনর এবং জীবনযাত্রার সাহচর্য করতে অচিরা জিগগোসা করলে, “আপনি কেন তাকে বিয়ে করতে চাইলেন না।” কী উত্তর দেব ভাবছিলুম, অচিরা বললে, “আমি জানি কেন। আপনার সত্যভঙ্গ হবে এই ভয় ছিল ; নিজেকে আপনার মুক্ত রাখতেই হবে। আপনি যে সাধক। আপনি তাই নিষ্ঠুর, নিষ্ঠুর নিজের ঐতি, নিষ্ঠর তার পরে যে আপনার পথের সামনে আসে। এই নিষ্ঠুরতায় আপনার বীরত্ব ୩.ଅର୍ବ୍ବାଅ ।” কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার সে বললে, “বাংলাসাহিত্য বােধ হয় আপনি পড়েন না। কচ ও দেবযানী বলে একটা কবিতা আছে। তার শেষ কথাটা এই মেয়েদের ব্ৰত পুরুষকে বাধা, আর