পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'SSbr রবীন্দ্র-রচনাবলী দুপুরবেলায় কেবল একটুখনের জন্যে সে সূর্যকে দেখে আর মনে মনে বলে, “কিছুই বোঝা গোল नां |” বর্যমেঘের ছায়া দুইসার বাড়ির মধ্যে ঘন হয়ে ওঠে, কে যেন গলির খাতা থেকে তার আলোটাকে পেলিলের আঁচড় দিয়ে কেটে দিয়েছে। বৃটির ধারা শানের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে, বর্ষ ডমরু বাজিয়ে যেন সাপ খেলাতে থাকে। পিছল হয়, পথিকদের ছাতায় ছাতায় বেধে যায়, ছাদের উপর থেকে ছাতার উপরে হঠাৎ নালার জল লাফিয়ে পড়ে চমকিয়ে দিতে থাকে। গলিটা অভিভূত হয়ে বলে, “ছিল খটখােট শুকনো, কোনো বালাইছিল না। কিন্তু, কেন অকারণে এই ধারাবাহী উৎপাত।” ফায়ুনে দক্ষিণের হাওয়াকে গলির মধ্যে লক্ষ্মীছাড়ার মতো দেখতে হয় ; ধুলো আর ছেড়া কাগজগুলো এলোমেলো উড়তে থাকে। গালি হতবুদ্ধি হয়ে বলে, “এ কোন পাগলা দেবতার মাতলামি ।” তার ধারে ধারে প্রতিদিন যে-সব আবর্জন এসে জমে- মাছের আঁশ, চুলোর ছাই, তরকারির খোসা, মরা ইদুর, সে জানে এই সব হচ্ছে বাস্তব। কোনোদিন ভুলেও ভাবে না, “এ সমন্ত কেন।” অথচ, শরতের রোদন্দুর যখন উপরের বারান্দায় আড় হয়ে পড়ে, যখন পুজোর নহবত ভৈরবীতে বাজে, তখন ক্ষণকালের জন্যে তার মনে হয়, “এই শানবাধা লাইনের বাইরে মন্ত একটা কিছু আছে বা ' এ দিকে বেলা বেড়ে যায় ; ব্যস্ত গৃহিণীর আঁচলটার মতো বাড়িগুলোর কাধের উপর থেকে রোদদূরখানা গলির ধারে খসে পড়ে ; ঘড়িতে নটা বাজে ; ঝি কোমরে কুড়ি করে বাজার নিয়ে আসে ; রান্নার গন্ধে আর ধোয়ায় গলি ভরে যায় ; যারা আপিসে যায়। তারা ব্যস্ত হতে থাকে। গলি তখন আবার ভাবে, “এই শানবাধা লাইনের মধ্যেই সব সত্য । আর, যাকে মনে ভাবছি মন্ত একটা কিছু সে মন্ত একটা স্বল্প ' Va Seos একটি চাউনি গাড়িতে ওঠবার সময় একটুখানি মুখ ফিরিয়ে সে আমাকে তার শেষ চাউনিটি দিয়ে গেছে। এই মন্ত সংসারে ঐটুকুকে আমি রাখি কোনখানে । দণ্ড পল মুহুর্ত অহরহ পা ফেলবে না, এমন একটু জায়গা আমি পাই কোথায়। মেঘের সকল সোনার রঙ যে সন্ধ্যায় মিলিয়ে যায়। এই চাউনি কি সেই সন্ধ্যায় মিলিয়ে যাবে। নাগকেশরের সকল সোনালি রেণু যে বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়। এও কি সেই বৃষ্টিতেই ধুয়ে যাবে। সংসারের হাজার জিনিসের মাঝখানে ছড়িয়ে থাকলে এ থাকবে কেন- হাজার কথার আবর্জনায়, হাজার বেদনার ভূপে । তার ঐ এক চকিতের দান সংসারের আর-সমস্তকে ছাড়িয়ে আমারই হতে এসে পৌচেছে। একে আমি রাখব গানে গেঁথে ছন্দে বেঁধে ; আমি একে রাখব সৌন্দর্যের অমরাবতীতে । পৃথিবীতে রাজার প্রতাপ, ধনীর ঐশ্বৰ্য হয়েছে মরবারই জন্যে। কিন্তু, চোখের জলে কি সেই অমৃত নেই যাতে এক নিমেষের চাউনিকে চিরকাল বঁচিয়ে রাখতে পারে। গানের সুর বললে, “আচ্ছা, আমাকে দাও । আমি রাজার প্রতাপকে স্পর্শ করি নে, ধনীর ঐশ্বর্যকেও না, কিন্তু ঐ ছোটাে জিনিসগুলিই আমার চিরদিনের ধন ; ঐগুলি দিয়েই আমি অসীমের গলার হার গাথি।” । अशग्रता ७७.२७ ।।