পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V)0 রবীন্দ্র-রচনাবলী সতেরো বছর আমি তার সতেরো বছরের জানা । কত আসাযাওয়া, কত দেখাদেখি, কত বলাবলি, তারই আশেপাশে কত স্বপ্ন, কত অনুমান, কত ইশারা ; তারই সঙ্গে সঙ্গে কখনো বা ভোরের ভাঙা ঘুমে শুকতারার আলো, কখনো বা আষাঢ়ের ভরসন্ধ্যায় চামেলিফুলের গন্ধ, কখনো বা বসন্তের শেষ প্রহরে ক্লান্ত নহবতের পিলুবারোয়া ; সতেরো বছর ধরে এই সব গাথা পড়েছিল তার মনে । আর, তারই সঙ্গে মিলিয়ে সে আমার নাম ধরে ডাকত। ঐ নামে যে মানুষ সাড়া দিত সে তো একা বিধাতার রচনা নয়। সে যে তারই সতেরো বছরের জানা দিয়ে গড়া ; কখনো আদরে কখনো অনাদরে, কখনো কাজে কখনো অকাজে, কখনো সবার সামনে কখনো একলা আড়ালে, কেবল একটি লোকের মনে মনে জানা দিয়ে গড়া সেই মানুষ । তার পরে আরো সতেরো বছর যায় । কিন্তু এর দিনগুলি, এর রাতগুলি, সেই নামের রাখিবন্ধনে আর তো এক হয়ে মেলে না, এরা ছড়িয়ে পড়ে । তাই এরা রোজ আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “আমরা থাকব। কোথায় । আমাদের ডেকে নিয়ে ঘিরে রাখবে কে ।” আমি তার কোনো জবাব দিতে পারি নে, চুপ করে বসে থাকি আর ভাবি । আর, ওরা বাতাসে উড়ে চলে যায়। বলে, “আমরা খুঁজতে বেরোলেম ।” 'काएक ।” . ܫ কাকে সে এরা জানে না । তাই কখনো যায় এ দিকে, কখনো যায় ও দিকে ; সন্ধ্যাবেলাকার খাপছাড়া মেঘের মতো অন্ধকারে পাড়ি দেয়, আর দেখতে পাই নে । কাৰ্তিক ১৩২৬ প্ৰথম শোক বনের ছায়াতে যে পথটি ছিল সে আজ ঘাসে ঢাকা । সেই নির্জনে হঠাৎ পিছন থেকে কে বলে উঠল, “আমাকে চিনতে পার না ?” আমি ফিরে তার মুখের দিকে তাকালেম । বললেম, “মনে পড়ছে, কিন্তু ঠিক নাম করতে পারছি ( " সে বললে, “আমি তোমার সেই অনেক কালের, সেই পঁচিশ বছর বয়সের শোক ৷” তার চোখের কোণে একটু ছলছল আভা দেখা দিলে, যেন দিঘির জলে টাদের রেখা । অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেম । বললেম, “সেদিন তোমাকে শ্রাবণের মেঘের মতো কালো দেখেছি, আজি যে দেখি আখিানের সোনার প্রতিমা । সেদিনকার সব চোখের জল কি হারিয়ে ফেলেছি ।" কোনো কথাটি না বলে সে একটু হাসলে ; বুঝলেম, সবটুকু রয়ে গেছে ঐ হাসিতে। বর্ষার মেঘ শরতে শিউলি ফুলের হাসি শিখেনিয়েছে। শ্ৰমিকাস করলে, “আমর সেই পঁচিশ বছরের যৌবনকে কি আজও তোমার কাছে রেখে r সে বললে, “এই দেখে-না। আমার গলার হার ” দেখলেম, সেদিনকার বসম্ভের মালার একটি পাপড়িও খসে নি ।