পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা WONOA রাজপুত্ত্বর রাজপুত্ত্বর চলেছে নিজের রাজ্য ছেড়ে, সাত রাজার রাজ্য পেরিয়ে, যে দেশে কোনো রাজার রাজ্য নেই সেই দেশে । সে হল যে কালের কথা সে কালের আরম্ভও নেই, শেষও নেই। " শহরে গ্রামে আর-সকলে হাটবাজার করে, ঘর করে, ঝগড়া করে, যে আমাদের চিরকালের রাজপুত্ত্বর সে রাজ্য ছেড়ে ছেড়ে চলে যায়। ८फको राप्त । কুয়োর জল কুয়োতেই থাকে, খাল বিলের জল খাল বিলের মধ্যেই শান্ত । কিন্তু, গিরিশিখরের জল গিরিশিখরে ধরে না, মেঘের জল মেঘের বাধন মানে না। রাজপুত্ত্বরকে তার রাজ্যটুকুর মধ্যে ঠেকিয়ে রাখবে কে । তেপান্তর মাঠ দেখে সে ফেরে না, সাতসমূদ্র তেরোনদী পার হয়ে যায়। মানুষ বারে বারে শিশু হয়ে জন্মায় আর বারে বারে নতুন করে এই পুরাতন কাহিনীটি শোনে । সন্ধ্যাপ্ৰদীপের আলো স্থির হয়ে থাকে, ছেলেরা চুপ করে গালে হাত দিয়ে ভাবে, “আমরা সেই রাজপুত্ত্বর । তেপান্তর মাঠ যদি-বা ফুরোয়, সামনে সমুদ্র । তারই মাঝখানে দ্বীপ, সেখানে দৈত্যপুরীতে রাজকন্যা বাধা আছে । পৃথিবীতে আর-সকলে টাকা খুঁজছে, নাম খুঁজছে, আরাম খুঁজছে, আর যে আমাদের রাজপুত্ত্বর সে দৈত্যপুরী থেকে রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে বেরিয়েছে। তুফান উঠল, নীেকো মিলল না, তবু সে পথ भूअछि । এইটেই হচ্ছে মানুষের সব-গোড়াকার রূপকথা আর সব-শেষের । পৃথিবীতে যারা নতুন জন্মেছে, দিদিমার কাছে তাদের এই চিরকালের খবরটি পাওয়া চাই যে, রাজকন্যা বন্দিনী, সমুদ্র দুৰ্গম, দৈত্য দুৰ্জয়, আর ছোটাে মানুষটি একলা দাড়িয়ে পণ করছে, “বন্দিনীকে উদ্ধার করে আনব।” বাইরে বনের অন্ধকারে বৃষ্টি পড়ে, ঝিল্লি ডাকে, আর ছোটাে ছেলেটি চুপ করে গালে হাত দিয়ে ভাবে, “দৈত্যপুরীতে আমাকে পাড়ি দিতে হবে।” R সামনে এল অসীম সমুদ্র, স্বপ্নের-ঢেউ-তোলা নীল ঘুমের মতো । সেখানে রাজপুত্ত্বর ঘোড়ার উপর থেকে নেমে পড়ল । কিন্তু, যেমনি মাটিতে পা পড়া আমনি এ কী হল। এ কোন জাদুকরের জাদু। এ যে শহর । ট্রাম চলেছে। আপিসমুখো গাড়ির ভিড়ে রাস্তা দুৰ্গম । তালপাতার বঁাশি-ওয়ালা গলির ধারে উলঙ্গ ছেলেদের লোভ দেখিয়ে বাঁশিতে ফু দিয়ে চলেছে। আর, রাজপুত্ত্বরের এ কী বেশ । এ কী চাল। গায়ে বোতামখোলা জামা, ধুতিটা খুব সাফ নয়, জুতোজোড়া জীৰ্ণ । পাড়াগায়ের ছেলে, শহরে পড়ে, টিউশনি করে বাসা খরচ চালায় । Ergas (KR তার বাসার পাশের বাড়িতেই । টাপাফুলের মতো রঙ নয়, হাসিতে তার মানিক খসে না। আকাশের তারার সঙ্গে তার তুলনা হয় না, তার তুলনা নববর্ধার ঘাসের আড়ালে যে নামহারা ফুল ফোটে তারই সঙ্গে । মা-মরা মেয়ে বাপের আদরের ছিল । বাপ ছিল গরিব, অপাত্রে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইল না, মেয়ের বয়স গেল বেড়ে, সকলে নিন্দে করলে । বাপ গেছে মরে, এখন মেয়ে এসেছে ঘুড়োয় বাড়িতে ।