পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা 986 এতে মানুষের মনে বড়ো রাগ হল । বললে, “একেই বলে অকৃতজ্ঞতা। দানাপানি খাওয়াই, মোটা মাইনের সইস আনিয়ে আট প্রহর ওর পিছনে খাড়া রাখি, তবু মন পাই নে ৷” মন পাবার জন্যে সইসগুলো এমনি উঠে-পড়ে ডাণ্ডা চালালে যে, ওর আর লাথি চলল না। মানুষ তার পাড়াপড়শিকে ডেকে বললে, “আমার এই বাহনটির মতো এমন ভক্ত বাহন আর নেই।” তারা তারিফ করে বললে, “তই তো, একেবারে জলের মতো ঠাণ্ডা। তোমারই ধর্মের মতো " একে তো গোড়া থেকেই ওর উপযুক্ত দাত নেই, নখ নেই, শিঙ নেই, তার পরে দেয়ালে এবং তদভাবে শূন্যে লাথি ছোড়াও বন্ধ। তাই মনটাকে খোলসা করবার জন্যে আকাশে মাথা তুলে সে চিহি চিহ্যি করতে লাগল। তাতে মানুষের ঘুম ভেঙে যায় আর পাড়াপড়শিরাও ভাবে, আওয়াজটা তো ঠিক ভক্তিগদগদ শোনাচ্ছে না। মুখ বন্ধ করবার অনেক রকম যন্ত্র বেরোল। কিন্তু, দম বন্ধ না করলে মুখ তো একেবারে বন্ধ হয় না । তাই চাপা আওয়াজ মুমূর্যুর খাবির মতো মাঝে মাঝে বেরোতে থাকে। একদিন সেই আওয়াজ গেল ব্ৰহ্মার কানে । তিনি ধ্যান ভেঙে একবার পৃথিবীর খোলা মাঠের দিকে তাকালেন । সেখানে ঘোড়ার চিহ্ন নেই। পিতামহ যমকে ডেকে বললেন, “নিশ্চয় তোমারই কীর্তি ! আমার ঘোড়াটিকে নিয়েছ।” যম বললেন, “সৃষ্টিকর্তা, আমাকেই তোমার যত সন্দেহ। একবার মানুষের পাড়ার দিকে তাকিয়ে দেখো ।” ব্ৰহ্মা দেখেন, অতি ছোটাে জায়গা, চার দিকে পাচিল তোলা, তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ক্ষীণস্বরে ঘোড়াটি চিহি চিহ্যি করছে। হৃদয় তার বিচলিত হল। মানুষকে বললেন, “আমার এই জীবকে যদি মুক্তি না দাও। তবে বাঘের মতো। ওর নখদন্ত বানিয়ে দেব, ও তোমার কোনো কাজে লাগবে না ।” মানুষ বললে, “ছি ছি, তাতে হিংস্রতার বড়ো প্রশ্ৰয় দেওয়া হবে । কিন্তু, যাই বল, পিতামহ, তোমার এই প্ৰাণীটি মুক্তির যোগাই নয় । ওর হিতের জন্যেই অনেক খরচে আস্তাবল বানিয়েছি। খাসা আস্তাবল ।” ব্ৰহ্মা জেদ করে বললেন, “ওকে ছেড়ে দিতেই হবে ।” মানুষ বললে, “আচ্ছা, ছেড়ে দেব। কিন্তু, সাত দিনের মেয়াদে ; তার পরে যদি বল, তোমার মাঠের চেয়ে আমার আস্তাবল ওর পক্ষে ভালো নয়, তা হলে নাকে খত দিতে রাজি আছি।” মানুষ করলে কী, ঘোড়াটাকে মাঠে দিলে ছেড়ে ; কিন্তু, তার সামনের দুটাে পায়ে কযে রশি বঁধিল । তখন ঘোড়া এমনি চলতে লাগল যে, ব্যাঙের চাল তার চেয়ে সুন্দর। ব্ৰহ্মা থাকেন। সুদূর স্বৰ্গে ; তিনি ঘোড়াটার চাল দেখতে পান, তার হাটুর বঁাধন দেখতে পান না । দুঃর্তির এই উলে মতাে চালচলন যেথে লজ্জার লাল হয়ে উঠলেন। বললেন, "ভুল rt (S ” মানুষ হাত জোড় করে বললে, “এখন এটাকে নিয়ে করি কী । আপনার ব্ৰহ্মলোকে যদি মাঠ থাকে তো। বরঞ্চ সেইখানে রওনা করে দিই ।” ব্ৰহ্মা ব্যাকুল হয়ে বললেন, “যাও, যাও, ফিরে নিয়ে যাও তোমার আস্তাবলে ।” মানুষ বললে, “আদিদেব, মানুষের পক্ষে এ যে এক বিষম বোঝা ।” ব্ৰহ্মা বললেন, “সেই তো মানুষের মনুষ্যত্ব ।” Ôኞማffig »©S¢