পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O3 রবীন্দ্র-রচনাবলী কর্তর ভূত বুড়ে কর্তার মরণকালে দেশসূদ্ধ সবাই বলে উঠল, “তুমি গেলে আমাদের কী দশা হবে।” শুনে তারও মনে দুঃখ হল। ভাবলে, “আমি গেলে এদের ঠাণ্ডা রাখবে কে ?” তা বলে মরণ তো এড়াবার জো নেই। তবু দেবতা। দয়া করে বললেন, “ভাবন কী। লোকটা ভূত হয়েই এদের ঘাড়ে চেপে থািক-না। মানুষের মৃত্যু আছে, ভূতের তো মৃত্যু নেই।” R দেশের লোক ভারি নিশ্চিন্তু হল । কেননা ভবিষ্যৎকে মানলেই তার জন্যে যত ভাবনা, ভূতকে মানলে কোনো ভাবনাই নেই ; সকল ভাবনা ভূতের মাথায় চাপে। অথচ তার মাথা নেই, সুতরাং কারো জন্যে মাথাব্যথাও নেই। তবু স্বভাবদােষে যারা নিজের ভাবনা নিজে ভাবতে যায় তারা খায় ভূতের কানমলা। সেই কানমলা না যায় ছাড়ানো, তার থেকে না যায় পালানো, তার বিরুদ্ধে না চলে নালিশ, তার সম্বন্ধে না আছে বিচার । দেশসুন্ধ লোক ভূতগ্ৰস্ত হয়ে চােখ বুজে চলে। দেশের তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন, “এই চােখ বুজে চলাই হচ্ছে জগতের সবচেয়ে আদিম চলা। একেই বলে অদৃষ্ট্রের চালে চলা।। সৃষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কীটাগুরা এই চলা চলত ; ঘাসের মধ্যে, গাছের মধ্যে, আজও এই চলার আভাস প্রচলিত।" শুনে ভূতগ্ৰস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে। তাতে অত্যন্ত আনন্দ পায়। ভূতের নায়েব ভূতুড়ে জেলখানার দারোগী। সেই জেলখানার দেয়াল চােখে দেখা যায় না। এইজন্যে ভেবে পাওয়া যায় না, সেটাকে ফুটাে করে কী উপায়ে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই জেলখানায় যে ঘানি নিরন্তর ঘোরাতে হয় তার থেকে এক ছটাক তেল বেরোয় না। যা হাটে বিকোতে পারে, বেরোবার মধ্যে বেরিয়ে যায় মানুষের তেজ। সেই তেজ বেরিয়ে গেলে মানুষ ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তাতে করে ভূতের রাজত্বে আর কিছুই না থােক- অন্ন হােক, বস্ত্ৰ হােক, স্বাস্থ্য হােকশান্তি থাকে । কত-যে শান্তি তার একটা দৃষ্টান্ত এই যে, অন্য সব দেশে ভূতের বাড়াবাড়ি হলেই মানুষ অস্থির হয়ে ওঝার খোজ করে। এখানে সে চিন্তাই নেই। কেননা ওঝাকেই আগেভাগে ভূতে পেয়ে বসেছে। V এই ভাবেই দিন চলত, ভূতশাসনতন্ত্র নিয়ে কারো মনে দ্বিধা জগত না ; চিরকালই গর্ব করতে পারত যে, এদের ভবিষ্যৎটা পোষা ভেড়ার মতো ভূতের খোঁটায় বাধা, সে ভবিষ্যৎ ভ্যাও করে না, ম্যাও করে না, চুপ করে পড়ে থাকে মাটিতে, যেন একেবারে চিরকালের মতো মাটি । কেবল অতি সামান্য একটা কারণে একটু মুশকিল-বাধল। সেটা হচ্ছে এই যে, পৃথিবীর অন্য দেশগুলোকে ভূতে পায় নি। তাই অন্য সব দেশে যত ঘানি ঘোরে তার থেকে তেল বেরোয় তাদের ভবিষ্যতের রথচক্রেটাকে সচল করে রাখবার জন্যে, বুকের রক্ত পিষে ভূতের খর্পাের ঢেলে দেবার জন্যে নয়। কাজেই মানুষ সেখানে একেবারে জুড়িয়ে যায় নি। তারা ভয়ংকর সজাগ আছে । 8 এ দিকে দিব্যি ঠাণ্ডায় ভূতের রাজ্য জুড়ে “খোকা ঘুমোলো, পাড়া জুড়োলো । সেটা খোকার পক্ষে আরামের, খোকার অভিভাবকের পক্ষেও ; আর পাড়ার কথা তো বলাই V fv, “If g (Ff