পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t রবীন্দ্র-রচনাবলী VO) এমন সময়ে দ্বারে এল রাজদূত, গান থেমে গেল । আচার্য কঁাপিতে কঁািপতে আসন থেকে উঠে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহারাজের কী আদেশ।” দূত বললে, “তােমার মেয়ের ভাগ্য প্রসন্ন, মহারাজ তাকে ডেকেছেন।” আচার্য জিজ্ঞাসা করলেন, “কী ইচ্ছা তার ” দূত বললে, “আজ রাত পােয়ালে রাজকন্যা কাম্বোজে পতিগৃহে যাত্রা করবেন, মাধবী ঠার সঙ্গিনী হয়ে যাবে।” রাত পোয়ালো, রাজকন্যা যাত্রা করলে । মহিষী মাধবীকে ডেকে বললে, “আমার মেয়ে প্রবাসে গিয়ে যাতে প্ৰসন্ন থাকে সে ভার তোমার উপরে ।” মাধবীর চােখে জল পড়ল না, কিন্তু অনাবৃষ্টির আকাশ থেকে যেন রৌদ্র ঠিকরে পড়ল। 8 রাজকন্যার ময়ূরপংখি আগে যায়, আর তার পিছে পিছে যায় মাধবীর পাকি। সে পান্ধি কিংখাবে ঢাকা, তার দুই পাশে পাহারা। পথের ধারে ধুলোর উপরে ঝড়ে-ভাঙা অশ্বথডালের মতো পড়ে রইলেন আচার্য, আর স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইল কুমারসেন । পাখিরা গান গাইছিল পলাশের ডালে ; আমের বোলের গন্ধে বাতাস বিহবল হয়ে উঠেছিল। পাছে রাজকন্যার মন ‘প্রবাসে কোনোদিন ফাগুনসন্ধ্যায় হঠাৎ নিমেষের জন্য উতলা হয়, এই চিন্তায় রাজপুরীর লোকে নিশ্বাস ফেললে । re Seys পুনরাবৃত্তি সেদিন যুদ্ধের খবর ভালো ছিল না । রাজা বিমর্ষ হয়ে বাগানে বেড়াতে গেলেন । দেখতে পেলেন, প্রাচীরের কাছে গাছতলায় বসে খেলা করছে একটি ছোটাে ছেলে আর একটি ছোটো মেয়ে । রাজা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কী খেলছ ”, তারা বললে, “আমাদের আজকের খেলা রামসীতার বনবাস ।” রাজা সেখানে বসে গেলেন । ছেলেটি বললে, “এই আমাদের দণ্ডকবন, এখানে কুটির বাধছি।” সে একরাশ ভাঙা ডালপালা খড় ঘাস জুটিয়ে এনেছে, ভারি ব্যস্ত । আর, মেয়েটি শাক পাতা নিয়ে খেলার ইড়িতে বিনা আগুনে রাধছে ; রাম খাবেন, তারই আয়োজনে সীতার এক দণ্ড সময় নেই। রাজা বললেন, “আর তো সব দেখছি, কিন্তু রাক্ষস কোথায়।” ছেলেটিকে মানতে হল, তাদের দণ্ডকাবনে কিছু কিছু ত্রুটি আছে। রাজা বললেন, “আচ্ছা, আমি হব রাক্ষস ।” ছেলেটি ঠাকে ভালো করে দেখলে । তার পরে বললে, “তোমাকে কিন্তু হেরে যেতে হবে ।”