পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা OV সে ওঠে না। কালো মেয়ে কানের উপর কালো চুলে একটি শিরীষ,ফুল পরেছে, গোধূলিতে যেন প্রথম 可河1 রাজপুত্র ঘোড়া থেকে নেমে তাকে বললে, “তোমার ঐ কনের শিরীষ,ফুলটি আমাকে দেবে ?” যে হরিণী ভয় জানে না। এ বুঝি সেই হরিণী। ঘােড় বেঁকিয়ে একবার সে রাজপুত্রের মুখের দিকে চেয়ে দেখলে। তখন তার কালো চোখের উপর একটা কিসের ছায়া আরো ঘন কালো হয়ে নেমে এল- ঘুমের উপর যেন স্বপ্ন, দিগন্তে যেন প্রথম শ্রাবণের সঞ্চার। মেয়েটি কান থেকে ফুল খসিয়ে রাজপুত্রের হাতে দিয়ে বললে, “এই নাও।” রাজপুত্র তাকে জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি কোন পয়ী আমাকে সত্য করে বলে ।” শুনে একবার মুখে দেখা দিল বিস্ময়, তার পরেই আশ্বিন-মেঘের আচমকা বৃষ্টির মতো তার হাসির উপর হাসি, সে আর থামতে চায় না । রাজপুত্ৰ মনে ভাবল, “স্বপ্ন বুঝি ফলল- এই হাসির সুর যেন সেই বাঁশির সুরের সঙ্গে মেলে।” রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়ে দুই হাত বাড়িয়ে দিলে ; বললে, “এসো।” সে তার হাত ধরে ঘোড়ায় উঠে পড়ল, একটুও ভাবল না। তার জলভরা ঘড়া ঘাটে রইল পড়ে। শিরীষের ডাল থেকে কোকিল ডেকে উঠল, কুহু কুহু কুহু কুহু । রাজপুত্র মেয়েটিকে কানে কানে জিজ্ঞাসা করলে,“তোমার নাম কী ।” সে বললে, “আমার নাম কাজরী ।” উদাস-ঝোরার ধারে দুজনে গেল সেই পোড়ো মন্দিরে। রাজপুত্র বললে, “এবার তোমার ছদ্মবেশ (PG NG " সে বললে, “আমরা বনের মেয়ে, আমরা তো ছদ্মবেশ জানি নে ৷” রাজপুত্র বললে, “আমি যে তোমার পরীর মূর্তি দেখতে চাই।” পরীর মূর্তি ! আবার সেই হাসি, হাসির উপর হাসি। রাজপুত্ৰ ভাবলে, “এর হাসির সুর এই ঝরনার সূরের সঙ্গে মেলে, এ আমার এই ঝরনার পরী ।” (? রাজার কানে খবর গেল, রাজপুত্রের সঙ্গে পরীর বিয়ে হয়েছে। রাজবাড়ি থেকে ঘোড়া এল, হাতি úȘ. 5ेन ७ळ ! কােজর জিজ্ঞাসা করলে, “এ-সব কেন ?” রাজপুত্র বললে, “তোমাকে রাজবাড়িতে যেতে হবে।” তখন তার চোখ ছলছলিয়ে এল । মনে পড়ে গেল, তার ঘাড়া পড়ে আছে সেই জলের ধারে ; মনে পড়ে গেল, তার ঘরের আঙিনায় শুকোবার জন্যে ঘাসের বীজ মেলে দিয়ে এসেছে ; মনে পড়ল, তার * আর ভাই শিকারে চলে গিয়েছিল, তাদের ফেরবার সময় হয়েছে ; আর মনে পড়ল, তার বিয়েতে একদিন যৌতুক দেবে বলে তার মা গাছতলায় ঠাত পেতে কাপড় বুনছে, আর গুনগুন করে গান *B (2) रक्षल, “ना, उशिी यात्र ना ।।” কিন্তু ঢাক ঢোল বেজে উঠল ; বাজল বাঁশি, কঁাসি, দামামা- ওর কথা শোনা গেল না। চতুর্দোেলা থেকে কাজরী যখন রাজবাড়িতে নামল, রাজমহিষী কপাল চাপড়ে বললে, “এ কেমনতরো পত্নী ?” রাজার মেয়ে বললে, “ছি ছি, কী লজা ?” মহিষীর দাসী বললে, “পরীর বেশিটাই বা কী রকম।” রাজপুত্র বললে, “চুপ করো, তোমাদের ঘরে পরী ছদ্মবেশে এসেছে।”