পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\OR রবীন্দ্র-রচনাবলী অবশেষে আমাদের সভাপতি গীের গোসাঁই বললেন, শিবুরাম, এইবার আয়নায় তোমার দ্বিপদী ছন্দের মূর্তিটা দেখো দেখি, পছন্দ হয় কি না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ফিরে ঘাড় বেঁকিয়ে শিবুরাম অনেকক্ষণ ধরে দেখলে। শেষকালে বললে, গোসাইজি, এখনাে তােমার সঙ্গে তো চেহারার মিল হচ্ছে না। গোসাইজি বললেন, শিবু, সোজা হলেই কি হল। মানুষ হওয়া এত সোজা নয়। বলি, লেজটি যাবে কোথায় । ওটার মায়া কি ত্যাগ করতে পার । শিবুরামের মুখ গেল শুকিয়ে। শেয়ালপাড়ায় দশ-বিশ গায়ের মধ্যে ওর লেজ ছিল বিখ্যাত। সাধারণ শেয়ালরা ওর নাম দিয়েছিল "খাসা-লেজুড়ি । যারা শেয়ালি-সংস্কৃত জানত তারা সেই ভাষায় ওকে বলত, "সুলেমলাঙ্গুলী” । দুদিন গেল ওর ভাবতে তিন রাত্রি ওর ঘুম হল না। শেষকালে বৃহস্পতিবারে এসে বললে, রাজি । পাটুকিলে রঙের বঁাকড়া রোয়াওয়ালা লেজটা গেল কাটা, একেবারে গোড়া ঘেঁষে। সভেরা সকলে বলে উঠল, অহাে, পশুর এ কী মুক্তি ! লেজবন্ধনের মায়া ওর এত দিনে কেটে গেল ! ধন্য ! শিবুরাম একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে । চোখের জল সামলিয়ে নিয়ে সেও অতি করুণাসুরে दवा6े, *न्मा ! সেদিন ওর আহারে রুচি রইল না, সমস্ত রাত সেই কাটা লেজের স্বপ্ন দেখলে । পরদিন শিবুরাম সভায় এসে হাজির ৷ গোসাইজি বললেন, কেমন হে শিবু, দেহটা হাল্কা বোধ হচ্ছে (VO| ? শিবুরাম বললে, আজ্ঞে, খুবই হাল্কা । কিন্তু মন বলছে, লেজ গেল তবু মানুষের সঙ্গে বর্ণভেদ তো ঘুচল না। গোসাই বললেন, রঙ মিলিয়ে সবৰ্ণ হতে চাও যদি, তবে রোয়া ঘুচিয়ে ফেলো । তিনু নাপিত এল । পােচ দিন লাগল। খুর বুলিয়ে বুলিয়ে লোমগুলো চেচে ফেলতে। রূপ যেটা ফুটে উঠল তা দেখে সভারা সবাই চুপ করে গেল । শিবুরাম উদবিগ্ন হয়ে বললে, মশায়, আপনারা কোনো কথা বলেন না কেন । সভ্যরা বললে, আমরা নিজের কীর্তিতে অবাক । শিবুরাম মনে শান্তি পেল। কাটা লেজ ও চাচা রোয়ার শোক ভুলে গেল । সভ্যরা দুই চক্ষু বুজে বললেন, শিবুরাম, আর নয় । সভা বন্ধ হল। এখনশিবু বললে, এখন আমার কাজ হবে শেয়াল-সমাজকে অবাক করা। এ দিকে শিবুরামের পিসি খেকিনি কেঁদে কেঁদে মরে । গায়ের মোড়ল হুকুইকে গিয়ে বললে, মোড়লামশায়, আজ এক বছরের উপর হয়ে গেল আমার হীেহীেকে দেখি নে কেন । বাঘ-ভালুকের হাতে পড়ল না তো ? মোড়ল বললে, বাঘ-ভালুককে ভয় কিসের ? ভয় ঐ মানুষ জানোয়ারটাকে, হয়তো তাদের ফাঁদে PGG খোজ পড়ে গেল। ঘুরতে ঘুরতে ভলণ্টিয়ারের দল এল সেই চণ্ডীমণ্ডপের বাশবনে। ডাক দিলে, হুক হুয়া । শিবুরামের বুকের মধ্যে ধড়ফড় করে উঠল, একবার গলা ছেড়ে ঐ একতানিমস্ত্ৰে যোগ দিতে ইচ্ছা! হল । বহু কষ্টে চেপে গেল । দ্বিতীয় প্রহরে বাশবনে আবার ডাক উঠল, হুক হুয়া । এবার শিবুরামের চাপা গলায় কান্নার মতো একটুখানি রব উঠল। তবু থেমে গেল । তৃতীয় প্রহরে ওরা আবার যখন ডাক ছাড়লে শিবুরাম আর থাকতে পারলে না ; ডেকে উঠল,