পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আর, আমি বুঝি জানি নে ? কী জন বলে তো । ওরা কখনো চাষী কৈবর্তর মাংস খায় না ; বিশেষত যারা গঙ্গার পশ্চিম-পারে থাকে। শাস্ত্ৰে বারণ। আর, যারা পূব-পারে থাকে ? তারা যদি জেলে কৈবর্ত হয় তো সেটা অতি পবিত্র মাংস। সেটা খাবার নিয়ম বা থাবা দিয়েছিড়ে छूिः ।

  • ाँ ९वां (कभ ।

ঐট হচ্ছে শুদ্ধ রীতি । ওদের পণ্ডিতরা ডান থাবাকে নোংরা বলে। একটি কথা জেনে রাখে। দিদি, নাপতিনীদের পরে ওদের ঘেন্না। নাপতিনীরা যে মেয়েদের পায়ে আলতা লাগায় । তা লাগালেই বা ? সাধু বাঘেরা বলে, আলতাটা রক্তের ভান, ওটা আঁচড়ে কামড়ে ছিড়ে চিবিয়ে বের করা রক্ত নয়, ওটা মিথ্যাচার। এরকম কপটাচরণকে ওরা অত্যন্ত নিন্দে করে। একবার একটা বাঘ ঢুকেছিল পাগড়িওয়ালার ঘরে, সেখানে ম্যাজেন্ট গোলা ছিল গামলায়। রক্ত মনে করে মহা খুশি হয়ে মুখ ডুবোলে তার মধ্যে। সে একেবারে পাকা রঙ । বাঘের দাড়ি গোফ, তার দুই গাল, লাল টকটকে হয়ে উঠল। নিবিড় বনে যেখানে বাঘেদের পুরুতপাড়া মোষমারা গ্রামে, সেইখানে আসতেই ওদের আঁচড়ি শিরোমণি বলে উঠল, এ কী কাণ্ড ! তোমার সমস্ত মুখ লাল কেন । ও লজায় পড়ে মিথ্যে করে বললে, গণ্ডার মেরে তার রক্ত খেয়ে এসেছি। ধরা পড়ে গেল মিথ্যে । পণ্ডিতজি বললে, নখে তো রক্তের চিহ্ন দেখি নে ; মুখ ওঁকে বললে, মুখে তো রক্তের গন্ধ নেই। সবাই বলে উঠল, ছিছি! এ তো রক্তও নয়, পিত্তও নয়, মগজও নয়, মজ্জাও নয়-নিশ্চয় মানুষের পাড়ায় গিয়ে এমন একটা রক্ত খেয়েছে যা নিরামিষ রক্ত, যা অশুচি । পঞ্চায়েত বসে গেল। কামড়বিশারদ-মশায় হুঙ্কার দিয়ে বললে, প্ৰায়শ্চিত্ত করা চাই । করতেই হল । যদি না করত । সর্বনাশ ! ও যে পাঁচ-পাঁচটা মেয়ের বাপ ; বডো বড়ো খরনখিনীর গীেরদানের বয়স হয়ে এসেছে। পেটের নীচে লেজ গুটিয়ে সাত গুণ্ডা মোষ পণ দিতে চাইলেও বর জুটবে না। এর চেয়েও ड्रॅक्ट्र ऑख्रि उाङ् । কী রকম । মলে শ্ৰাদ্ধ করবার জন্যে পুরুতে পাওয়া যাবে না, শেষকালে হয়তো বেত-জঙ্গল গা থেকে নেকড়ে-বোঘো পুরুতি আনতে হবে ; সে ভরি লজ্জা, সাত পুরুষের মাথা হেঁট । V R. I gn | শোনো একবার। বাঘের ভূত যে না খেয়ে মরবে। সে তো ময়েইছে, আবার মারবে কী করে। সেই তো আরো বিপদ। না খেয়ে মারা ভালো, কিন্তু মারে না খেয়ে বেঁচে থাকা যে বিষম দুগ্রহ। পুপূদিদিকে ভাবিয়ে দিলে। খানিকক্ষণ বাদে ভুরু কুঁচুকিয়ে বললে, ইংরেজের ভূত তা হলে খেতে পায় কী করে । , তারা বেঁচে থাকতে যা খেয়েছে তাতেই তাদের সাত জন্ম অমনি চলে যায়। আমরা যা খাই তাতে, বৈতরণী পার হবার অনেক আগেই পেট টো-টো করতে থাকে। সন্দেহ মীমাংসা হতেই পূপে জিগেস্ করলে, প্রায়শ্চিত্ত কিরকম হল। আমি বললুম, হাকবিদ্যা-বাচস্পতি বিধান দিলে যে, বাঘাচণ্ডীতলার দক্ষিণপশ্চিম কোণে কৃষ্ণপঞ্চমী তিথি থেকে শুরু করে অমাবস্যার আড়াই পহর রাত পর্যন্ত ওকে কেবল খ্যাকশেয়ালির ঘাড়ের মাংস খেয়ে থাকতে হবে ; তাও হয় ওর পিসতুতো বোন কিংবা মাসতুতো শ্যালার মেজো ছেলে ছাড়া আর কেউ শিকার করলে হবে না- আর, ওকে খেতে হবে পিছনের ডান দিকের থাবা