পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80S রবীন্দ্র-রচনাবলী হাফপ্যান্ট-পরা দেবতা বিশ্বকর্ম। একদিন শরৎকালের সকালে পুজোর থালায় শিউলিফুল সাজিয়ে রাস্তায় চলেছি ; ঘাড়ের উপর এসে পড়ল বাইক-চড়া এক পাণ্ডা। তার বুলিতে একতাড়া খাতা ? বুকের পকেটে একটা লাল কালির, একটা কালো কালির ফাউন্টেনপেন! খবরের কাগজের কাটা টুকরোর বান্ডিল চায়না-কোটের দুই পকেট ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছে ; ডান হাতের কক্তিঘড়িতে স্ট্যান্ডার্ড টাইম, বা হাতে কলকাতা টাইম ; ব্যাগেই আই আর, ই, বি. আর, এ,বি, আর, এন. ডৱ আর, বি. এন. আর, বি. বি. আর, এস. আই.আর-এর টাইম-টেবিল। বুকের পকেটে নেটবই ডায়ারি-সৃদ্ধ। ধাক্কা খেয়ে মুখ থুবড়িয়ে পড়ি আর-কি। সে বললে, আকাশের দিকে তাকিয়ে চলেছ কোন চুলোয় । আমি বললুম, রাগ কোরো না, পাণ্ডাজি । মন্দিরে পুজো দিতে যাব, রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি নে ! সে বললে, তোমরা বুঝি মেঘের-দিকে-হা-করে-তাকানো রাস্তা-খোজার দল ! চলো, পথ দেখিয়ে first আমাকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে এল বিশ্বকর্মঠাকুরের মন্দিরে। হী-না করবার সময় দিলে না । কিছু জিগেস করবার আগেই বললে, রাখে। এইখানে থালা, পকেট থেকে বের করো পাচ-সিকে प्रक्रिाe । বোকার মতো পুজো দিলেম । তখনই হিসেব সে টুকে নিলে তার নোটবইয়ে । কক্তিঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললে, হয়েছে, কাজ, এখন বেরোও । সময় নেই । পরদিন থেকেই দেখি ফল ফলেছে । ভোর তখন সাড়ে চারটে | ডাকাত পড়েছে ভেবে ধড়ফড় করে ঘুম ভেঙে শুনি. অনাথতারিণী সভার সভেরা বারো-তেরো বছরের পঁচিশটা ছেলে জুটিয়ে দরজায় এসে চীৎকারস্বরে গান জুড়ে দিয়েছে যত পেটে ধরে তার চেয়ে ভর পেটে, টাকা পয়সায় পকেট পড়ছে ফেটেহিসেব খতিয়ে দেখলে বুঝতে পার অনাথজনের কত ধার তুমি ধারা । ‘তারো তারো করতে করতে ভীষণ চাটি পড়তে লাগল খোলে। মনে মনে যত খতিয়ে দেখছি তহবিলে কত টাকা বাকি, চাটি ততই কানে তালা ধরিয়ে দিলে । সঙ্গে সঙ্গে বাজল কাসর ; “তারে। তারো তারো করে নাচ জুড়ে দিলে ছেলেগুলো । অসহ্য হয়ে এল। দেরাজ খুলে থলিটা বের করলেম ! সাত দিনের না-কামানো-দাড়ি-ওয়ালা ওদের সর্দার উৎসাহিত হয়ে চাদর পেতে ধরলে ! থালি ঝাড়তে বেরোল এক টাকা, ন আনা, তিন পয়সা । মাসের দু দিন বাকি, দর্জির দেনার জনো টানাটানি করে ঐটকু রেখেছিলেম । গান ছেড়ে গাল শুরু করলে। বললে, অগাধ টাকা, চিরটা দিন পায়ের উপর পা দিয়ে গদিয়ান হয়ে বসে আছে ; ভুলেছ, যেদিন মরবে সেদিন তোমার মতো লক্ষপতির যে দর। আর আমাদের ছেড়া-টানা-পরা ভিখিরিরও সেই দর। এ কথাগুলো পুরোনো ঠেকল, কিন্তু ঐ লক্ষপতি বিশেষণটাতে শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল। এই হল শুরু । তার পরে ইতিমধ্যে পঁচিশটা সভার সভ্য হয়েছি। বাংলাদেশে সরকারি সভাপতি হয়ে দাড়ালেম । আদি ভারতীয় সংগীতসভা, কচুরিপানা-ধ্বংসন সভা, মৃতসৎকার সভা, সাহিত্যশোধন সভা, তিন চণ্ডীদাসের সমন্বয় সভা, ইক্ষুছিবড়ের পণ্যপরিণতি সভা, খন্যানে খনার লুপ্তভিটা-সংস্কারসভা, পিজরাপোলের উন্নতিসাধিনী সভা, ক্ষেীরব্যয়নিবারিণী-দাড়ি-গোফ-রক্ষণী সভা- ইত্যাদি সভার বিশিষ্ট সভ্য হয়েছি। অনুরোধ আসছে, ধনুটঙ্কারতত্ত্ব বইখানির ভূমিকা লিখতে, নব্যগণিতপাঠের অভিমত দিতে, ভুবনাডাঙায় ভবভূতির জন্মস্থাননির্ণয় পুস্তিকার গ্রন্থকারকে আশীর্বাদ