পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88v রবীন্দ্র-রচনাবলী যুগান্তরে পিতামহ যখন মানবসমাজে দুর্বলতাকেই মহিমান্বিত করবার কাজে কবিসৃষ্টি করেছিলেন। তখন সেই সৃষ্টির ছাঁচ পেয়েছিলেন এই পাখির থেকেই। সেদিন একটা সাহিত্য সম্মিলন গোছের ব্যাপার হল তার সভামণ্ডপে ; সভাপতিরূপে কবিদের আহবান করে বলে দিলেন, তোমরা মনে মনে উড়তে থাকো শূন্যে, আর ছন্দে ছন্দে গান করো বিনা কারণে, যা-কিছু কঠিন তা তরল হয়ে যাক, যা-কিছু বলিষ্ঠ তা এলিয়ে পড়ে যাক আর্দ্র হয়ে - কবিসম্রাট, আজ পর্যন্ত তুমি তার কথা রক্ষা করে be bलड३ शत शउलिन ना हैI5 दलाल श । আধুনিক যুগ শুকিয়ে শক্ত হয়ে আসছে, মোমের ছাচ আর মিলবেই না। এখন সেদিন নেই যখন নারীদেবতার জলের বাসাটি দোল খেত পদ্মে, যখন মনোহর দুর্বলতায় পৃথিবী ছিল অতলে নিমগ্ন । সৃষ্টি ঐ মেলায়েমের ছন্দে এসেই থামল না কেন । গোটা কয়েক যুগ যেতে না যেতেই ধরণীদেবী আর্ত বাক্যে আবেদনপত্র পাঠালেন চতুর্মুখের দরবারে । বললেন, ললনাদের এই লকারবহুল ললিত্য আর তো সহ্য হয় না। স্বয়ং নারীরাই করুণ কল্লোলে ঘোষণা করতে লাগল, ভালো লাগছে না । উৰ্ব্বলোক থেকে প্রশ্ন এল, কী ভালো লাগছে না। সুকুমারীরা বললে, বলতে পারি। নে - কী চাই। — কী চাই তারও সন্ধান পাচ্ছি নে ; ওদের মধ্যে পাড়াকুদৃলিরও কি অভিব্যক্তি হয় নি। আগাগোড়াই কি সুবচনীর পালা ! কোদলের উপযুক্ত উপলক্ষটি না থাকাতেই বাক্যবাণের টংকার নিমগ্ন রইল অতলে, বঁটার কাঠির অন্ধুর স্থান পেল না অকুলে। এত বড়ো দুঃখের সংবাদে চতুর্মুখ লজ্জিত হলেন বোধ করি ? লজ্জা বলে লজ্জা ! চার মুণ্ড ইট হয়ে গেল ! স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলেন রাজহংসের কোটি-যোজন-জোড়া ডানাদুটাের পরে পুরো একটা ব্ৰহ্মযুগ। এ দিকে আদিকালের লোকবিশ্রুত সাধবী পরম-পানকৌড়িনী, শুভ্রতায় যিনি ব্ৰহ্মার পরমহংসের সঙ্গে পাল্লা দেবার সাধনায় হাজার বার করে জলে ডুব দিয়ে দিয়ে চঞ্চঘর্ষণে পালকগুলোকে উটািসার করে ফেলছিলেন, তিনি পর্যন্ত বলে উঠলেন, নির্মলতাই যেখানে নিরতিশয় সেখানে শুচিতার সর্বপ্রধান সুখটাই বাদ পড়ে, যথা, পরকে খোটা দেওয়া ; শুদ্ধসত্ত্ব হবার মজাটাই থাকে না । প্রার্থনা করলেন, হে দেব, মলিনতা চাই, ভূরিপরিমাণে, অনতিবিলম্বে এবং প্রবল বেগে । বিধি তখন অস্থির হয়ে লাফিয়ে উঠে বললেন, ভুল হয়েছে, সংশোধন করতে হবে । বাস রে, কী গলা । মনে হল মহাদেবের মহাবৃষভটার ঘাড়ে এসে পড়েছে মহাদেবীর মহাসিংহটা- অতিলৌকিক সিংহনাদে আর বৃষগর্জনে মিলে দুলোকের নীলমণিমণ্ডিত ভিতটাতে দিলে ফাটল ধরিয়ে । মজার আশায় বিষ্ণুলোক থেকে ছুটে বেরিয়ে এলেন নারদ । তার টেকির পিঠ থাবড়িয়ে বললেন, বাবা টেকি, শুনে রাখো ভাবীলোকের বিশ্ব-বেসুরের আদিমন্ত্র, যথাকলে ঘর ভাঙবার কাজে লাগবে । ক্ষুব্ধ ব্ৰহ্মার চার গলার ঐকতান আওয়াজের সঙ্গে যোগ দিলে দিঙনগেরা শুড় তুলে, শব্দের ধাক্কায় দিগঙ্গানাদের বেণীবন্ধ খুলে গিয়ে আকাশ আগাগোড়া ঠাসা হয়ে গেল এলোচুলে- বোধ হল কালো-পাল-তোলা বোমতয়ী ছুটিল কালপুরুষের pl | হাজার হােক, সৃষ্টিকর্তা পুরুষ তো বটে। পীেরুষ চাপা রইল না। তঁর পিছনের দাড়িওয়ালা দুই মুখের চার নাসাফলক উঠল। ফুলে, ইপিয়ে-ওঠা বিরাট হাপরের মতো। চার নাসারন্ধ থেকে একসঙ্গে ঝড় দুটিল আকাশের চার দিককে তাড়না করে। ব্ৰহ্মাণ্ডে সেই প্রথম ছাড়া পেল দুর্জয়াশক্তিমান বেসুরপ্রবাহ- গো-টো গা-গা হুড়ামুড়, দুৰ্গাড় গড়গড়, ঘড়ঘড় ঘড়াও । গন্ধৰ্বোরা কাধে তাম্বুরা নিয়ে দলে দলে দৌড় দিল ইন্দ্ৰলোকের খিড়কির আঙিনায়, যেখানে শচীদেবী জানান্তে মন্দারকুজেছায়ায় পারিজাতকেশরের ধূপধুমে চুল শুকোতে যান। ধরাণীদেবী ভয়ে কম্পান্বিত ; ইষ্টমন্ত্ৰ জপতে জপতে ভাবতে লাগলেন, ভুল করেছি বা । সেই বেসুরে ঝড়ের উল্টোপাল্টা ধাক্কায় কামানের মুখের তপ্ত গোলার মতো ধকধক শব্দে