পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

800 রবীন্দ্র-রচনাবলী ভূমিকম্পের জবৰ্দস্তির যোগে মাটিকে হী করিয়ে কবিরাজি বড়ির মতো পাহাড়গুলোকে গিলিয়ে খাওয়ানো- এর মধ্যে মেয়েলি কিছু নেই, সে কথা মােন কি না। মানি বৈকি । জলে ওঠে কলধ্বনি, হাওয়ায় বঁশি বাজে সেঁ-সো- কিন্তু বিচলিত ডাঙা যখন ডাক পাড়তে থাকে তখন ভারতের সংগীত শাস্ত্রটাকে পিণ্ডি পাকিয়ে দেয় । তোমার মুখ দেখে বোধ হচ্ছে, কথািট ভালো লাগছে না। কী ভাবিছ বলেই ফেলো-না । আমি ভাবছি, আর্ট মাত্রেরই একটা পুরাগত বনেদী আছে যাকে বলে ট্র্যাডিশন । তোমার বেসুরধ্বনির আর্টকে বনেদি বলে প্রমাণ করতে পার কি। খুব পারি। তোমাদের সুরের মূল ট্র্যাডিশন মেয়ে-দেবতার বাদ্যযন্ত্রে। যদি বেসুরের উদ্ভব খুঁজতে চাও তবে সিধে চলে যাও পৌরাণিক মেয়েমহল পেরিয়ে পুরুষদেবতা জটাধারীর দরজায়। কৈলাসে বীণাযন্ত্র বে-আইনি, উর্বশী সেখানে নাচের বায়না নেয় নি । যিনি সেখানে ভীষণ বেতালে তাণ্ডবনৃত্যু করেন তার নদীভৃঙ্গী ফুকতে থাকে শিঙে, তিনি বাজান ব্যবমবম গ্যালবাদ্য, আর কড়াকড়ি কড়াকড় ডমরু। ধ্বসে পড়তে থাকে কৈলাসের পিণ্ড পিণ্ড পাথর। মহাবে সুরের আদি-উৎপত্তিটা স্পষ্ট হয়েছে Qo श6302 | মনে রেখে সুরের হার, বেসুরের জিত, এই নিয়েই পালা রচনা হয়েছে। পুরাণে দক্ষযজ্ঞের । একদা যজ্ঞসভায় জমা হয়েছিলেন দেবতারা- দুই কানে কুণ্ডল, দুই বাহুতে অঙ্গদ, গলায় মণিমালা। কী বাহার ! ঋষিমুনিদের দেহ থেকে আলো পড়ছিল ঠিকরিয়ে। কণ্ঠ থেকে উঠছিল অনিন্দ্যসুন্দর সুরে সুমধুর সামগান, ত্ৰিভুবনের শরীর রোমাঞ্চিত। হঠাৎ দুড়দাড় করে এসে পড়ল বিশ্ৰীবিরূপের বেসূরি দল, শুচিসুন্দরের সীেকুমাৰ্য মুহুর্তে লণ্ডভণ্ড । কুগ্ৰীর কাছে সুশ্ৰীর হার, বেসুরের কাছে সুরেরপুরাণে এ কথা কীর্তিত হয়েছে কী আনন্দে, কী অট্টহাস্যে, অন্নদামঙ্গলের পাতা ওলটালেই তা টের পাবে। এই তো দেখছ বেসুরের শাস্ত্রসম্মত ট্র্যাডিশন। ঐ-যে তুন্দিলতনু গজানন সর্বাগ্রে পেয়ে থাকেন পুজো, এটাই তো চােখ-ভোলানো দুর্বল ললিতকলার বিরুদ্ধে স্থূলতম প্রোটেসটি। বর্তমান যুগে ঐ গণেশের শুড়ই তো চিমনি-মূর্তি ধরে পাশ্চাত্য পণ্যযজ্ঞশালায় বৃংহিতধ্বনি করছে গণনায়কের এই কুৎসিত বেসুরের জোরেই কি ওরা সিদ্ধিলাভ করছে না। চিন্তা করে দেখোঁ । দেখব । যখন করবে। তখন এ কথাটাও ভেবে দেখো, বেসুরের অজেয় মাহাত্ম্য কঠিন ডাঙাতেই । সিংহ বলো, ব্যাঘ্র বলো, বলদ বলে, যাদের সঙ্গে সগৰ্বে বীরপুরুষদের তুলনা করা হয় তারা কোনো কালে ওস্তাদজির কাছে গলা সাধে নি। এ কথায় তোমার সন্দেহ আছে কি । তিলমাত্র না । এমনকি, ডাঙার অধম পশু যে গর্দভ, যত দুর্বল সে হোক-না, বীণাপাণির আসরে সে সাক্রোিদ করতে যায় নি, এ কথা তার শত্ৰু মিত্র এক বাক্যে স্বীকার করবে। ७ों पद्मस । ঘোড়া তো পোষ্যমান জীব- লাথি মারবার যোগ্য খুর থাকা সত্ত্বেও নির্বিবাদে চাবুক খেয়ে মরে- তার উচিত ছিল, আস্তাবলে খাড়া দাড়িয়ে বিঝিটখাম্বাজ আলাপ করা। তার টিহিঁহিঁহি শব্দে সে রাশি রাশি। সফেন চন্দ্ৰবিন্দুবর্ষণ করে বটে, তবু বেসুরো অনুনাসিকে সে ডাঙার সম্মান রক্ষা করতে ভোলে না। আর গজরাজ, তার কথা বলাই বাহুল্য। পশুপতির কাছে দীক্ষাপ্রাপ্ত এই সমস্ত স্থলচর জীবের মধ্যে কি একটাও কোকিলকণ্ঠ বের করতে পাের। ঐ-যে তোমার বুলডগ ফ্রেডি চীৎকারে ঘুমছাড়া করে পাড়া, ওর গলায় দয়া করে বা মজা করে বিধাতা যদি দেন শ্যামা-দোয়েলের শিস, ও তা হলে নিজের মধুর কণ্ঠের অসহ্য ধিক্কারে তোমার চলতি মোটরের তলায় গিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে এ আমি বাজি রাখতে পারি। আচ্ছা, সত্যিা করে বলে কালীঘাটের পাঠা যদি কর্কশ ভাভা না করে রামকেলি