পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ዕቅbr রবীন্দ্র-রচনাবলী যুগ ধরে নিষ্ঠুর পরীক্ষা । শেষকালে এল মনোবাহী মানুষ। লেজের বাহুল্য গেল ঘুচে, হাড়মাংস হল পরিমিত, কড়া চামড়াটা নরম হয়ে এল ত্বকে । না রইল। শিঙ, না রইল ক্ষুর, না রইল নখের জোৱ, চার পা এসে ঠেকাল দুটিমাত্র পায়ে। বোঝা গেল, বিধাতা তার হাতিয়ার চালাচ্ছেন সৃষ্টির যুগটাকে ক্রমশ সূক্ষ্ম করে আনবার জন্যে। স্কুলে সূক্ষ্মে জড়িয়ে আছে মানুষ। মনের সঙ্গে মাংসের চলেছে। ঠেলাঠেলি, মারামারি । বিধাতা পুনশ্চ মাথা নাড়ছেন, উহু, হল না। লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, এটাও টিকবে না ; এ আপনিই আপনাকে নিকেশ করে দেবে আশ্চৰ্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে । যাবে কয়েক লক্ষ বছর কেটে । মাংস পড়বে ঝরে, মন উঠবে একেশ্বর হয়ে । সেই বিশুদ্ধ মনের যুগে তোমার মাস্টারমশায় বসেছেন শরীররিক্ত ক্লাসে । মনে করে দেখো, তার শিক্ষা দেবার প্রণালী হচ্ছে ছাত্রদের মধ্যে নিজেকে মেলাতে থাকা মনের উপর মন বিছিয়ে, বাইরের বাধা নেই বললেই হয় । স্কুল বুদ্ধির বাধাও নেই ? সেটা না থাকলে বুদ্ধি মাত্রই হয়ে পড়ে বেকার । ভালো-মন্দ বোকা-বুদ্ধিমানের ভেদ আছেই। চরিত্র আছে। নানা রকমের । ভাবের বৈচিত্ৰ্য আছে, ইচ্ছার স্বাতন্ত্র্য আছে। এখন তিনিই ভালো মাস্টার যিনি সেই অনেকের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেন, শিক্ষা এখন অন্তরে অস্তরে। দাদামশায়, ইস্কুলটা কোথায় আছে সেটা ঠিক মনে আনতে পারছি নে । পৃথিবীতে তিনটে বাসা আছে- এক সমুদ্রতলে, আর এক ভূতলে, আর আছে আকাশে যেখানে সূক্ষ্ম হাওয়া আর সূক্ষ্মতর আলো । এইখানটা আজ আছে খালি আগামী যুগের জন্যে। তা হলে তোমার ক্লাস চলেছে সেই হাওয়ায় সেই আলোয় । কিন্তু, ছাত্রদের চেহারাটা কিরকম । বুঝিয়ে বলা শক্ত, তাদের আকার নিশ্চয় আছে, কিন্তু আকারের আধার নেই। তা হলে বোধ হচ্ছে নানা রঙের আলোয় তারা গড়া । সেইটেই সম্ভব। তোমাদের বিজ্ঞান-মাস্টার তো সেদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বজগতে সূক্ষ্ম আলোর কণাই বহুরূপী হয়ে স্কুল রূপের ভান করছে। সেদিন আলো আপন আদিম সূক্ষ্মীরূপেই প্ৰকাশ পাবে। ক্লাসে তোমরা সবাই আলো করে বসবে। সেদিন ওটিন মো-ওয়ালারা একেবারে দেউলে হয়ে গেছে । দেউলে কেন, আলো হয়ে গেছে । দেউলে হয়ে যাওয়ার মানেই তো আলো হয়ে যাওয়া । আমি কোন রঙের আলো হব, দাদামশায় । সোনার রঙের । আর তুমি ? আমি একেবারে বিশুদ্ধ রেডিয়ম । সেদিন আলোয় আলোয় লড়াই হবে না তো ? ইলেকট্রন নিয়ে হবে না কি কড়াকড়ি । ভাবনা ধরিয়ে দিলে। লীগ অব লাইটস-এর দরকার হবে বোধ হচ্ছে। ইলেকট্রন নিয়ে টানাটানির গুজব এখনই শুনতে পাচ্ছি। ভালোই তো দাদামশায় । বীররসের কবিতা তোমার ভাষায় উজ্জ্বল বর্ণেবর্ণিত হবে । ঐ যাঃ, ভাষা qK3(K (Vb ? শব্দের ভাষা নিছক ভাবের ভাষায় গিয়ে পৌঁছাবে, ব্যাকরণ মুখস্থ করতে হবে না। आश, शॉन १ গান হবে রঙের সংগত । বড়ো সহজ হবে না । তান যখন ঠিকরে পড়তে থাকবে, কলক মারবে আকাশের দিকে দিকে । তখনকার তানসেনরা দিগন্তে অরোরা বোরিয়ালিস বানিয়ে দেবে। আর, তোমার গদ্যকাব্য কী হবে বলে তো। তাতে লোহার ইলেকট্রনও মিশবে, আবার সোনারও। সেদিনকার দিদিমা পছন্দ করবে না । আমার ভরসা আছে সেদিনকার আধুনিক নাতনিরা মুগ্ধ হয়ে যাবে।