পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 V8 রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বাতন্ত্র্য মিলিয়ে দেয় নিশীথের ধানাবরণে । কী জানি সুকুমারের কী মনে হল ; সে অধীর হয়ে বলে উঠল, আমাকে কিন্তু তোমার ঐ দুষ্ট অন্ধকারের ভিতর দিয়ে আমন চুপিচুপি নিয়ে যাবে না। পুজোর ছুটির দিনে যেদিন সকালে দ বাজবে, কাউকে ইস্কুলে যেতে হবে না, ছেলেরা সবাই যেদিন গেছে। রথতলার মাঠে ব্যাটবল খেলায়। সেইদিন আমি খেলার মতো করেই হঠাৎ মিলিয়ে যাব আকাশে ছুটির দিনের রোদদূরে; শুনে আমি চুপ করে রইলুম ; কিছু বললুম না। পূপেদিদি বললে, কাল থেকে সুকুমারদার কথা তুমি প্রায়ই বলছি। তার মধ্যে আমার উপঃ একটুখানি খোচা থাকে। তুমি কি মনে কর তোমার ভালোবাসার অংশ নিয়ে সুকুমারদার সঙ্গে আমার ; ছেলেবেলাকার যে ঝগড়া ছিল সেটা এখনো আছে। হয়তো একটুখানি আছে বা । সেইটেকে একেবারে ক্ষইয়ে দেব বলেই বার বার তার কথা তুলি আরো একটুখানি কারণ আছে। কী কারণ বলোই-না । কিছুদিন আগে সুকুমারের বাবা ডাক্তার নিতাই এসেছিলেন আমার কাছে বিদায় নিতে । কেন, বিদায় নিতে কেন । তোমাকে বলব মনে করেছিলুম, বলা হয় নি। আজ বলি। নিতাই চাইলে সুকুমার আইন পড়ে। সুকুমার চাইলে সে ছবি আঁকা শেখে নন্দলালবাবুর কাছে। নিতাই বললে, ছবি আঁকা বিদ্যোয় আৰু চলে, পেট চলে না । সুকুমার বললে, আমার ছবির খিদে যত পেটের খিদে তত বেশি নয়। নিতাই কিছু কড়া করে বললে, সে কথাটা তোমার প্রমাণ করে দেবার দরকার হয়নি, পেট সহজে bन यह । কথাটা বিশ্ৰী লািগল তার মনে, কিন্তু হেসে বললে, কথাটা সত্যি- এর প্রমাণ দেওয়া উচিত বাবা ভাবলে, এইবার ছেলে আইন পড়তে বসবে। সুকুমারের বরিশালের মাতামহ খেপা গোষ্ট্রে মানুষ ; সুকুমারের স্বভাবটা উঠারই ছাঁচের, চেহারারও সাদৃশ্য আছে। দুজনের পরে দুজনের ভালোবাসা পরম বন্ধুর মতো। পরামর্শ হল দুজনে মিলে ; সুকুমার টাকা পেল কিছু, কখন চলে গেট বিলেতে কেউ জানে না । বাবাকে চিঠি লিখে গেল, আপনি চান না। আমি ছবি আঁকা শিখি, শিখব না। আপনি চান অর্থকরী বিদ্যা আয়ত্ত করব, তাই করতে চললুম। যখন সমাপ্ত হবে প্ৰণাম করতে আসন আশীৰ্বাদ করবেন । কোন বিদ্যে শিখতে গোল কাউকে বলেনি। একটা ডায়ারি পাওয়া গেল তার ডেস্কে। তার থেকে বোঝা গেল, সে যুরোপে গেছে উড়ো জাহাজের মাঝিগিরি শিখতে। তার শেষ দিকটা কপি কৰি এনেছি। ও লিখছে মনে আছে, একদিন আমার ছত্রপতি পক্ষীরাজে চড়ে পুপূদিদিকে চন্দ্ৰলোক থেকে উদ্ধার করা: যাত্রা করেছিলুম আমাদের ছাদের এক ধার থেকে আর-এক ধরে । এবার চলেছি কলের পক্ষীরাঙ্গণ বাগ মানাতে। যুরোপে চন্দ্ৰলোকে যাবার আয়োজন চলেছে। যদি সুবিধা পাই যাত্রীর দলে আমি নাম লেখােব। আপাতত পৃথিবীর আকাশ-প্ৰদক্ষিণে হাত পাকিয়ে নিতে চাই। একদিন আমি তাঁর্চ দাদামশায়ের দেখাদেখি যে ছবি এঁকেছিলুম, দেখে পুপূদিদি হেসেছিল। সেইদিন থেকে দশ বছর ধর্মে ছবি আঁকা অভ্যাস করেছি, কাউকে দেখাই নি। এখনকার আঁকা দুখন ছবি রেখে গেলুম পুর্গে দাদামশায়ের জন্যে। একটা ছবি জল-স্থল-আকাশের একতান সংগত নিয়ে, আর-একটা আমি বরিশালের দাদামশায়ের। পূপের দাদামশায় ছবি দুটাে দেখিয়ে পূপেদিদির সেদিনকার হাসি যা ফিরিয়ে নিতে পারেন তো ভালোই, নইলে যেন ছিড়ে ফেলেন। আমার এবারকার যাত্রায় চন্দ্ৰলোৰ্পে