পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१धमा 8 বেণীর বঁাধন-তরে গাথি শ্বেতকরবীর মালা । মাধবীতে ধরল। কুঁড়ি, আর হবে না দেরিতুমি যদি এস তবে ফুটবে তোমায় ঘেরি । উঠবে জেগে রঙিনগুচ্ছ পায়ের আসনটিতে, সামনে তোমার করবে নৃত্য ময়ুর-ময়ূরীতে । বনের পথে সারি সারি রজনীগন্ধায় বাতাস দেবে আকুল করে ফাগুনি সন্ধ্যায়। বলতে বলতে মাথার উপর উড়ল ইসের দল, নাগকুমারী মুখের পরে টানল নীলাঞ্চল। ধীরে ধীরে নদীর পরে নামল নীরব পায়ে, ছায়া হয়ে গেল। কখন চাপাগাছের ছায়ে । সন্ধ্যামেঘের সোনার আভা মিলিয়ে গেল জলে । পাতল রাতি তারা-গাথা আসন শূন্যতালে। Nissa ম্যানেজারবাবু আজ তোমাকে যে গল্পটা বলব মনে করেছি। সেটা তোমার ভালো লাগবে না । তুমি বললেও ভালো লাগবে না কেন । যে লোকটার কথা বলব। সে চিতোর থেকে আসে নি কোনো রানা-মহারানার দল ছেড়েচিতোর থেকে না এলে বুঝি গল্প হয় না ? হয় বৈকি- সেইটাই তো প্রমাণ করা চাই । এই মানুষটা ছিল সামান্য একজন জমিদারের সামান্য পাইক । এমন-কি, তার নামটাই ভুলে গেছি। ধরে নেওয়া যাক সুজনলাল মিশির। একটু নামের গোলমাল হলে ইতিহাসের কোনো পণ্ডিত তা নিয়ে কোনো তর্ক করবে না । সেদিন ছিল যাকে বলে জমিদারি সেরেস্তার 'পুণ্যাহা, খাজনা-আদায়ের প্রথম দিন । কাজটা নিতান্তই বিষয়-কাজ । কিন্তু, জমিদারি মহলে সেটা হয়ে উঠেছে একটা পার্বণ। সবাই খুশি- যে খাজনা দেয় সেও, আর যে খাজনা বাক্সতে ভর্তি করে সেও। এর মধ্যে হিসেব মিলিয়ে দেখবার গন্ধ ছিল না। যে যা দিতে পারে তাই দেয়, প্রাপ্য নিয়ে কোনো তকরার করা হয় না। খুব ধুমধাম, পড়াগেয়ে সানাই অত্যন্ত বেসুরে আকাশ মাতিয়ে তোলে। নতুন কাপড় পরে প্রজারা কাছারিতে সিলাম দিতে আসে। সেই পুণ্যাহের দিনে ঢাক ঢোল সানাইয়ের শব্দে জেগে উঠে ম্যানেজারবাবু ঠিক করলেন, তিনি স্নান করবেন দুধে । চারিদিকে সমারোহ দেখে হঠাৎ তার মনে হল, তিনি তো সামান্য লোক নন । সামানা জলে তঁর অভিষেক কী করে হবে। ঘড়া ঘড়া দুধ এল গোয়ালা প্রজাদের কাছ থেকে } হল তার স্নান । নাম বেরিয়ে গেল চারি দিকে ; সেদিন তিনি সন্ধ্যাবেলায় খুশিমনে বাসার রায়াকে বসে গুড়গুড়ি টানছেন, এমন সময় মিশির সর্দার, ব্ৰাহ্মণের ছেলে, লাঠিখেলা নিয়ে খুব নাম করেছে, বললে, হুজুর আপনার নিমক তো খেয়েছি অনেককাল, কিন্তু অনেকদিন বসে আছি, আমাকে তো। কাজে লাগালেন না। যদি কিছু করবার থাকে তো হুকুম করুন। } ম্যানেজার গুড়গুড়ি টানতে লাগলেন । মনে পড়ে গেল একটা কাজের কথা । জসিম মন্ডল চর মহলের প্রজা, তার খেত ছিল পাশের জমিদারের সীমানা-ঘেঁষা। ফসল জন্মালেই প্রতিবেশী জমিদার লোকজন নিয়ে প্রজাকে আটকাত । দায়ে পড়ে জন্সিমের দুই জমিদারেরই খাতায় আর দু জায়গাতেই