পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓigጓ8 ζ Ο6. অরিজিৎ বললেন, কারণটা খুলে বলি। করঞ্জরের রাজকন্যা নির্মলকুমারী আমার বহুদূর সম্পর্কের আত্মীয়া। তার সঙ্গে ছেলেবেলায় একসঙ্গে খেলা করেছি। তিনি আজ বিপদে পড়েছেন। মুসলমান নবাব তার পিতার কাছে তার জন্যে দূত পাঠিয়েছিলেন। পিতা কন্যা দিতে রাজি না হওয়াতে যুদ্ধ বেধে গেল। আমি তাকে বঁচিয়ে আনব, ঠিক করেছি। তার আগে আর-কোথাও আমার বিবাহ হতে পারবে না, এই আমার পণ। করঞ্জর রাজ্যটি ছোটাে, রাজার শক্তি অল্প। বেশি দিন যুদ্ধ চলবে না জানি, তার আগেই আমাকে যেতে হবে । চলেছিলেম। সেই রাস্তায়, পথের মধ্যে তোমার পিতা আমাকে ঠেকিয়ে রাখলেন। কী করা যায়। তাই ভাবছি। মেয়েটি বললে, আপনি ভাববেন না। এখান থেকে আপনার পালাবার বাধা হবে না, আমি রাস্তা জানি। আজ রাত্রেই আপনাকে বনের বাহিরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেব। কিছু মনে করবেন না, আপনার চোখ বেঁধে নিয়ে যেতে হবে, কেননা এ বনের পথের সংকেত বাইরের লোককে জানতে দিতে চান্ডেশ্বরীদেবীর মানা আছে ; তা ছাড়া আপনার হাতে পরাব শিকল । তার যে কী দরকার পথেই अमिट 2ों(सन् । অরিজিৎ চোখবাধা হাতবাধা অবস্থায় ঘন বনের মধ্যে দিয়ে চন্দনীর পিছন-পিছন চললেন । সে রাত্রে ডাকাতের দল সবাই ভাঙি খেয়ে বেহেঁশ । কেবল পাহারায় যে সর্দার ছিল সেই ছিল জেগে । সে বললে, চন্দনী, কোথায় চলেছ । চন্দনী বললে, দেবীর মন্দিরে । ঐ বন্দীটি কে । বিদেশী, ওকে দেবীর কাছে বলি দেব। তুমি পথ ছেড়ে দাও । সে বললে, একলা কেন । দেবীর আদেশ, আর-কাউকে সঙ্গে নেওয়া নিষেধ । ওরা বনের বাইরে গিয়ে পৌঁছল, তখন রাত্রি প্রায় হয়েছে ভোর। চন্দনী অরিজিৎকে প্ৰণাম করে বললে, আপনার আর ভয় নেই। এই আমার কঙ্কণ, নিয়ে যান, দরকার হলে পথের মধ্যে কাজে লগতে পারে । অরিজিৎ চললেন দূর পথে। নানা বিষ্ম কাটিয়ে যতই দিন যাচ্ছে ভয় হতে লাগল, সময়মত হয়তো পেঁৗছতে পারবেন না । বহুকষ্টে করঞ্জর রাজ্যের যখন কাছাকাছি গিয়েছেন খবর পেলেন, যুদ্ধের ফল ভালো নয়। দুর্গ বাচাতে পারবে না। আজ হােক, কাল হােক, মুসলমানেরা দখল করে নিতে পারবে তাতে সন্দেহ নেই। অরিজিৎ আহারনিদ্ৰা ছেড়ে প্ৰাণপণে ঘোড়া ছুটিয়ে যখন দুর্গের কাছাকাছি "গয়েছেন, দেখলেন, সেখানে আগুন জ্বলে উঠেছে। বুঝলেন মেয়েরা জহরব্রত নিয়েছে। হার হয়েছে তাই সকলে চিতা জ্বলিয়েছে মরবার জন্যে । অরিজিৎ কোনোমতে দুর্গে পৌঁছলেন। তখন সমস্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। মেয়েরা আর কেউ নেই। পুরুষরা তাদের শেষ লড়াই লড়ছে । নির্মলকুমারী রক্ষা পেল। কিন্তু সে মৃত্যুর হাতে, তার হাতে নয় এই দুঃখ । তখন মনে পড়ল চন্দনী তাকে বলেছিল, তোমার কাজ শেষ হয়ে গেলে পর তোমাকে এইখানেই ফিরে আসতে হবে ; সেজন্যে, যতদিন হোক, আমি পথ চেয়ে থাকব । তার পকু দুই মাস চলে গেল। ফায়ুনের শুক্লপক্ষে অরিজিৎ সেই বনের মধ্যে পৌঁছলেন। শাখ বেজে উঠল, সানাই বাজল, সবাই পারল নতুন পাগড়ি লাল রঙের, গায়ে ওড়াল বাসক্টরঙের চাদর । উদ্ভলগ্নে অরিজিতের সঙ্গে চন্দনীর বিবাহ হয়ে গেল । এই পর্যন্ত হল আমার গল্প । তার পরে বরাবরকার অভ্যাসমত শোবার ঘরের কেদারায় গিয়ে বসিলুম । বাদলার হাওয়া বইছিল। বৃষ্টি হবে-হবে করছে। সুধাকান্ত দেখতে এলেন, দরজা জানালা ঠিকমত বন্ধ আছে কি না। এসে দেখলেন, আমি কেদারায় বসে আছি। ডাকলেন, কোনো উত্তর নেই। স্পর্শ করে বললেন, ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে, চলুন বিছানায় ।