পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বাপরিচয় (SS ঘড়ানির মাত্রা অনুসারে চল্লিশ পঞ্চাশ ঘটি কোটি হতে পারে। বিজলি বাতির সলতে-তারের ভিতর দিয়ে ইলেকট্রনের ঠেসাঠেসি ভিড় চলতে থাকে, তবেই সে জ্বলে। তারের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে যতগুলি ইলেকট্রন একসঙ্গে যাত্রা করে আমাদের গণিতশাস্ত্রে সেই সংখ্যার কী নাম আছে। আমি তা তো জানি নে। যা হােক এটা দেখা গেল যে, অতিপরিমাণুদের দুরন্ত চাঞ্চল্য পজিটিভ-নেগেটিভে সন্ধি করে সংযত হয়ে আছে তাই বিশ্বে আছে শান্তি। ভালুকওয়ালা বাজায় ডুগডুগি, তারই তালে ভালুক নাচে, আর নানা খেলা দেখায়। ডুগডুগিওয়ালা না। যদি থাকে, পোষ্যমান ভালুক যদি শিকলি কেটে স্বধৰ্ম পায় তা হলে কামড়িয়ে আঁচড়িয়ে চার দিকে অনৰ্থপাত করতে থাকে । আমাদের সর্বাঙ্গে এবং দেহের বাইরে এই পোষ্যমান বিভীষিকা নিয়ে অদৃশ্য ডুগডুগির ছন্দে চলেছে সৃষ্টির নাচ ও খেলা । সৃষ্টির আখড়ায় দুই খেলোয়াড়। তাদের ভীষণ দ্বন্দ্ব মিলিয়ে বিশ্বচরাচরের রঙ্গভূমি সরগরম করে রেখেছে । কোনো কোনো বিজ্ঞানী পরমাণুজগৎকে সৌরমণ্ডলীর সঙ্গে তুলনীয় করে বললেন, পরমাণুর কেন্দ্র ঘিরে ভিন্ন ভিন্ন চক্রপথে ঘুর খাচ্ছে ইলেকট্রনের দল। আর-এক পণ্ডিত প্রমাণ করলেন যে, ঘূর্ণিপাক-খাওয়া ইলেকট্রনরা তাদের এক কক্ষপথ থেকে আর-এক কক্ষপথে ঠাঁই বদল করে, আবার ফেরে আপনি নির্দিষ্ট পথে । পরমাণুলোকের যে-ছবি সীেরলোকের ছাদে, তাতে আছে। পজিটিভ বৈদ্যুতাওয়ালা একটা কেন্দ্রবন্ত, আর তার চার দিকে ইলেকট্রনদের প্রদক্ষিণ । এ মত মেনে নেবার বাধা আছে। ইলেকট্রন যদি একটানা পথে চলত তা হলে ক্রমে তার শক্তি ক্ষয় হয়ে ক্রমে পথ খাটাে করে সে পড়ত গিয়ে কেন্দ্রবস্তুর উপরে। পরমাণুর সর্বনাশ ঘটাত । এখন এই মত দাড়িয়েছে, ইলেকট্রনের ডিম্বাকার চলবার পথ একটি নয়, একাধিক । কেন্দ্র থেকে এই কক্ষগুলির দূরত্ব নির্দিষ্ট। কেন্দ্রের সব চেয়ে কাছের যে পথ, কোনো ইলেকট্রন তা পেরিয়ে যেতে পারে না। ইলেকট্রন বাইরের পথ থেকে ভিতরের পথে দর্শন দেয়। কেন দেয় এবং হঠাৎ কখন দেখা দেবে তার কোনো বাধা নিয়ম পাওয়া যায় না। তেজ শোষণ করে ইলেকট্রন ভিতরের পথ থেকে বাইরের পথে লাফিয়ে যায়, এই লাফের মাত্রা নির্ভর করে শোষিত তেজের পরিমাণের উপর । ইলেকট্রন তেজ বিকীর্ণ করে কেবল যখন সে তার বাইরের পথ থেকে ভিতরের পথে আবির্ভূত হয়। ছাড়া-পাওয়া এই তেজকেই আমরা পাই আলোরূপে । যতক্ষণ একই কক্ষে চলতে থাকে ততক্ষণ তার শক্তি-বিকিরণ বন্ধ। এ মতটা ধরে-নেওয়া একটা মত, কোনো কারণ দেখানো যায় না । মতটা মেনে নিলে তবেই বোঝা যায় পরমাণু কেন টিকে আছে, বিশ্ব কেন বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। এসব কথার পিছনে দুরূহ তত্ত্ব আছে, সেটা বােঝবার অনেক দেরি। আপাতত কথাটা শুনে রাখা পূর্বেই বলেছি বিজ্ঞানীরা খুব দৃঢ়স্বরে ঘোষণা করেছিলেন যে, বিরোনব্বইটি আদিভূত বিশ্বসৃষ্টির মৌলিক পদার্থ। অতিপরিমাণুদের সাক্ষ্যে আজ সে কথা অপ্রমাণ হয়ে গেল। তবু এখনো রয়ে গেল @ मन ऎ9°क्षेि । একদা মৌলিক পদার্থের খ্যাতি ছিল যে তাদের গুণের নিত্যতা আছে। তাদের যতই ভাঙা যাক কিছুতেই তাদের স্বভাবের বদল হয় না। বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায়ে দেখা গেল তাদের চরম ভাগ করলে বেরিয়ে পড়ে দুই জাতীয় বৈদুতিওয়ালা কণাবস্তুর জুড়িমৃত্য। যারা ‘মৌলিক পদার্থ 'নামধাৱী তাদের স্বভাবের বিশেষত্ব রক্ষা করেছে এই সব বৈদ্যুতেরা বিশেষ সংখ্যায় একত্র হয়ে। এইখানেই যদি থামত তা হলেও পরমাণুদের রূপনিত্যতার খ্যাতি টিকে যেত। কিন্তু ওদের নিজের দলের থেকেই বিরুদ্ধ সাক্ষ্য পাওয়া গেল। একটা খবর পাওয়া গেল যে, হালকা যে-সব পরমাণু তাদের মধ্যে ইলেকট্রনপ্রোটনের ঘোরাঘুরি নিত্যনিয়মিতভাবে চলে আসছে বটে। কিন্তু অত্যন্ত ভারী যারা, যাদের মধ্যে স্ট্রন-প্রোটনসংঘের অতিরিক্ত ঠেসাঠেসি ভিড়, যেমন ঘুরেনিয়ম বা রেডিয়াম, তারা আপন তহবিল