পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বাপরিচয় (VCN3 কেন্দ্ৰসম্বলভাঙা লুটপাটের কাজে । কিন্তু লক্ষ্যটি অতিসূক্ষ্ম, নিশানা করা সহজ নয়, তেজের ঢেলা বিস্তুর মারতে মারতে দৈবাৎ একটা লেগে যায়। তাই এরকম অনিশ্চিত লড়াই-প্ৰণালীর বদলে আজকাল প্ৰকাণ্ড যন্ত্র তৈরির আয়োজন হচ্ছে যাতে অতি প্ৰচণ্ড শক্তিমান বৈদ্যুত উৎপন্ন হয়ে পরমাণুর কেন্দ্ৰকেল্লার পাহারা ভেদ করতে পারে। সেখানে আছে প্রবল পালোয়ানশক্তিয় পাহারা। আজ ঠিক যে-সময়টাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারবার জন্যে সহস্ৰী যন্মের উদ্ভাবন হচ্ছে ঠিক সেই সময়টাতেই বিশ্বের সূক্ষ্মতম পদার্থের অলক্ষ্যতম মর্ম বিদীর্ণ করবার জন্যে বিরাট বৈদ্যুতবর্ষণীর কারখানা বসিল । পূর্বেই বলেছি। আলফাকশা স্বরূপ হারিয়ে হয়ে যায় হীলিয়ম গ্যাস। এটা কাজে লেগেছে পৃথিবীর বয়স প্রমাণ করতে । কোনো পাহাড়ের একখানা পাথরের মধ্যে যদি বিশেষ পরিমাণ ইলিয়ম গ্যাস দেখা যায়, তাহলে এই গ্যাসের পরিণতির নির্দিষ্ট সময় হিসাব করে ঐ পাহাড়ের জন্মকুঠি তৈরি করা যায়। এই প্ৰণালীর ভিতর দিয়ে পৃথিবীর বয়স বিচার করা হয়েছে। ওজনের শুরুত্বে হাইড্রোজেন গ্যাসের ঠিক উপরের কোঠাতেই পড়ে যে-গ্যাস তারই নাম দেওয়া হয়েছে হীলিয়ম। এই গ্যাস বিজ্ঞানীমহলে নূতন-জানা। এই গ্যাস প্রথম ধরা পড়েছিল সূৰ্যগ্রহণের সময়ে। সূৰ্য আপন চক্রসীমাটুকু ছাড়িয়ে বহুলক্ষ ক্রোশ দূর পর্যন্ত জলদিবাম্পের অতি সূক্ষ্ম উত্তরীয় উড়িয়ে থাকে, ঝরনা যেমন জলকণার কুয়াশা ছড়ায় আপনার চারিদিকে । গ্রহণের সময় সেই তার চার দিকের আগ্নেয় গ্যাসের বিস্তার দেখতে পাওয়া যায় দূরবীনে। এই দুরবিক্ষিপ্ত গ্যাসের দীপ্তিকে যুরোপীয় ভাষায় বলে করোনা, বাংলায় একে বলা যেতে পারে কিরীটিকা । কিছুকাল আগে ১৯৩৭ খৃস্টাব্দের সূর্যগ্রহণের সুযোগে এই কিরীটিকা পরীক্ষা করবার সময় বর্ণলিপির নীলসীমানার দিকে দেখা গেল তিনটি অজানা সাদা রেখা। পণ্ডিতেরা ভাবলেন হয়তো কোনো একটি আগের জানা পদার্থ অধিক দহনে নূতন দশা পেয়েছে, এটা তারই চিহ্ন কিংবা হয়তো একটা নতুন পদার্থই বা জানান দিল। এখনো তার ঠিকানা হল না । ১৮৬৮ খৃস্টাব্দের গ্রহণের সময় বিজ্ঞানীদের এইরকমই একটা চমক লাগিয়েছিল। সূর্যের গ্যাসীয় বেড়ার ভিতর থেকে একটা লিপি এল তখনকার কোনো অচেনা পদার্থের । এই নূতন খবর-পাওয়া মৌলিক পদার্থের নাম দেওয়া হল ইলিয়ম, অর্থাৎ সীেরক । কেননা তখন মনে হয়েছিল এটা একান্ত সূর্যেরই অন্তর্গত গ্যাস। অবশেষে ত্ৰিশ বছর কেটে গেলৈ পরে বিখ্যাত রসায়নী র্যামজে এই গ্যাসের আমেজ পেলেন পৃথিবীর হাওয়ায় অতি সামান্য পরিমাণে । তখন স্থির হল পৃথিবীতে এ গ্যাস দুর্লভ । তার পরে দেখা গেল উত্তর-আমেরিকার কোনো মেটে তেলের গহবরে যে-গ্যাস পাওয়া যায় তাতে ধথেষ্ট পরিমাণে ইলিয়ম আছে। তখন একে কাজে লাগাবার সুবিধে হল । অত্যন্ত হালকা বলে এতদিন হাইড্রোজেন গ্যাস দিয়ে আকাশযানগুলোর উড়নশক্তির জোগান দেওয়া হত । কিন্তু হাইড্রোজেন গ্যাস ওড়াবার পক্ষে যেমন কেজো, জ্বালাবার পক্ষে তার চেয়ে কম না। এই গ্যাস অনেক মন্ত মন্ত উড়োজাহাজকে জ্বলিয়ে মেরেছে। হীলিয়ম গ্যাসের মধ্যে প্রচ্ছন্ন দুরন্ত জ্বলনচণ্ডী নেই, অথচ হাইড্রোজেন ছাড়া সকল গ্যাসের চেয়ে এ হালকা। তাই জাহাজ-ওড়ানোকে নিরাপদ করবার জন্যে তারই ব্যবহার চলতি হয়েছে। চিকিৎসাতেও কোনো কোনো রোগে এ প্রয়োগ শুরু হল। পূর্বেই বলা হয়েছে। পজিটিভ চার্জওয়ালা পদার্থ ও নেগেটিভ চার্জওয়ালা পদার্থ পরস্পরকে কাছে টানে কিন্তু একই জাতীয় চার্জওয়ালা পরস্পরকে ঠেলে ফেলতে চায়। যতই তাদের কাছাকাছি করা যায় ততই উগ্র হয়ে ওঠে তাদের ঠেলার জোর । তেমনি বিপরীত চার্জওয়ালারা যতই পরস্পরের কাছে আসে তাদেরটানের জোর ততই বেড়ে ওঠে। এইজন্যে যে-সব ইলেকট্রন কেন্দ্রবস্তুর কাছাকাছি থাকে তাঁরা টানের জোর এড়াবার জন্যে দূরবতীদের চেয়ে দৌড়ীয় বেশি জোরে। সৌরমণ্ডলে যে-সব গ্ৰহ সূর্কের যত কাছে তাদের দৌড়ের বেগ ততই বেশি। দূরের গ্রহদের বিপদ কম, তারা অনেকটা এই ইলেকট্রন-প্রোটনের ব্যাস সমস্ত পরমাণুর পঞ্চাশ হাজার ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ পরমাণুর