পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q"8 রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্যে শূন্যতাই বেশি। একটা মানুষের দেহের সমন্ত পরমাণু যদি ঠেসে দেওয়া হয়, তা হলে তা থেকে একটা অদৃশ্যপ্রায় বস্তুবিন্দু তৈরি হবে। দুই প্রোটনের পরস্পরের প্রতি বিমুখতার জোর যে কত, রসায়নী ফ্রেডরিক সডি তার হিসাবক বলেছেন, এক গ্র্যাম পরিমাণ প্রোিটন যদি ভূতলের এক মেরুতে রাখা যায়। আর তার বিপরীত মেরুতে থাকে। আর এক গ্র্যাম প্রোটন তা হলে এই সুদূর পথ পেরিয়ে গিয়ে তাদের উভয়েরই ঠেলা মারার জোর হবে প্রায় ছশো মণের চাপে । এই যদি বিধি হয় তা হলে বোঝা শক্ত হয় পরমাণুকেন্দ্রের অতি সংকীর্ণ মণ্ডলীর মধ্যে একটির বেশি প্রোটন কেমন করে ঘেঁষাৰ্ঘেষি মিলে থাকতে পারে। এই নিয়ম অনুসারে হাইড্রোজেন যার পরমাণুকেন্দ্ৰে একেশ্বর প্রোটনের অধিকার, সে ছাড়া বিশ্বে আর কোনো পদাৰ্থ তো টিকতেই পারে না ; তা হলে তো বিশ্বজগৎ হয়ে ওঠে। হাইড্রোজেনময়। এদিকে দেখা যায় যুরেনিয়ম ধাতু বহন করেছে ৯২টা প্রোটন, ১৪৬টা নাইেট্রন । এত বেশি ভিড় সে সামলাতে পারে না। এ কথা সত্য, ক্ষণে ক্ষণে সে তার কেন্দ্ৰভাণ্ডার থেকে বৈদ্যুৎকণার বোঝা হালকা করতে থাকে। ভারী কিছু পরিমাণ কমলে সে রূপ নেয় রেডিয়ামের, আরো কমলে হয়৷ পলেনিয়ম, অবশেষে সীসের রূপ ধরে স্থিতি পায় । ওজন এত হেঁটে ফেলেও স্থিতি পায় কী করে এ সন্দেহ তো দূর হয় না। বিকিরণের পালা শেষ করে সমস্ত বাদসাদ দিয়েও সীসের দখলে বাকি থাকে ৮২টা প্রোটন। পজিটিভ বৈদ্যুতের স্বজাতি-ঠেলা-মােরা মেজাজ নিয়ে এই প্রোটনগুলো পরমাণুলোকের শান্তিরক্ষা করে কী করে, দীর্ঘকাল ধরে এ প্রশ্নের ভালো জবাব পাওয়া গেল না । কেন্দ্রের বাইরে এদের ঝগড়া মেটে না, কেন্দ্রের ভিতরটাতে এদের মৈত্রী অটুট, এ একটা বিষম সমস্যা । 季 এই রহস্যভেদের উপযোগী করে যন্ত্রশক্তির বল বৃদ্ধি করা হল। পরমাণুর কেন্দ্রগত প্রোটন-লক্ষ্যের বিরুদ্ধে পরীক্ষকেরা হাঁ-ধমী বৈদ্যুতিকণার দল লাগিয়ে দিলেন ; যত জোরের বৈদ্যুতিকণা তাদের ধাক্কা দিলে তার বেগ সেকেন্ডে ৬৭২০ মাইল। তবু কেন্দ্ৰস্থিত প্রোটন আপন প্রোটনধর্ম রক্ষা করলে, আক্রমণকারী বৈদ্যুতের দলকে ছিটিকিয়ে ফেললে। বৈদ্যুত তাড়নার জোর বাড়িয়ে দেওয়া হল । বিজ্ঞানী লগালেন ধাক্কা ৭৭০০ মাইলের বেগে, শিকারটিকে হার মানাতে পারলেন না । অবশেষে ৮২০০ মাইলের তাড়া খেয়ে বিরুদ্ধশক্তি নরম হবার লক্ষণ দেখালে । ছিটকোনো-শক্তির বেড়া ডিঙিয়ে আক্রমণশক্তি পৌঁছল কেন্দ্ৰদুর্গের মধ্যে। দেখা গেল দুটি সমধর্মী বৈদ্যুতিকণা যত কাছে গিয়ে পৌঁছলে তাদের ঠেলাঠেলি যায়চুকে সে হচ্ছে এক ইঞ্চির বহু কোটি ভাগ ঘেষাৰ্ঘেষিতে । তা হলে ধরে নিতে হবে ঐ নৈকট্যের মধ্যে প্রোটনদের পরম্পর ঠেলে ফেলার শক্তি যত তার চেয়ে প্রভূত বড়ো একটা শক্তি আছে, টেনে রাখবার শক্তি। ঐ শক্তি পরমাণুমহলে প্রোটনকেও যেমন টানে নাটুনকেও তেমনি টানে, অর্থাৎ বৈদ্যুতের চার্জ যার আছে আর যার নেই উভয়ের ‘পরেই তার সমান প্রভাব। পরমাণুকেন্দ্ৰবাসী এই অতিপ্ৰবল আকর্ষণশক্তি সমস্ত বিশ্বকে কুসুম। পরমাণুর মহাকার ঘরোয় বিকা ব্ৰিটিছে যে শাসন সেই শস্যই বিৰে বিরক্ত R আধুনিক ইতিহাস থেকে এর উপমা সংগ্রহ করে দেওয়া যাক । চীন রিপাব্লিকের শান্তি নষ্ট করে কতকগুলি একাধিপত্যলোলুপ জাদরেল পরম্পর লড়াই ক’রে দেশটাকে ছারখার করে দিচ্ছিল । রাষ্ট্রের কেন্দ্ৰস্থলে এই বিরুদ্ধদলের চেয়ে প্রবলতর শক্তি যদি থাকত তা হলে শাসনের কাজে এদের সকলকে এক করে রাষ্ট্রশক্তিকে বলিষ্ঠ ও নিরাপদ করে রাখা সহজ হত। পরমাণুর রাতন্ত্রে সেই বড়ো শক্তি আছে সকল শক্তির উপরে, তাই যারা স্বভাবত মেলে না তারাও মিলে বিশ্বের শান্তি রক্ষা হচ্ছে। এর থেকে দেখতে পাচ্ছি বিশ্বের শক্তি পদার্থটি ভালোমানুযি শান্তি নয়। যত সব দুরন্তদের মিলিয়েনিয়ে তবে একটা প্রবল মিল হয়েছে। যারাস্বতন্ত্রভাবে সর্বািনশে তারাই মিলিতভাবে সৃষ্টির বাহন। পরমাণুর ইতিহাসে রেডিয়ামের অধ্যায়ের মূল্য বেশি, সেইজন্যে একটু বিশদ করে তার কথাটা বলে নিই - রেডিয়াম লোহা প্রভৃতির মতোই ধাতুদ্রব্য। এর পরমাণুগুলি ভারে এবং আয়তনে বড়ো ।