পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বাপরিচয় 2○○ অবশেষে একদিন কী কারণে কেউ জানে না রেডিয়ামের পরমাণুযায় ফোেট, তার অল্প একটু অংশ যায় দুটে ; এই ভাঙন-ধরা পরমাণু থেকে নিঃসৃত আলফারশ্মিতে যে কণিকাগুলি প্রবাহিত হয় তারা প্রত্যেকে দুটি প্রোটন ও দুটি নট্রনের সংযোগে তৈরি। অর্থাৎ ইলিয়ম পরমাণুর কেন্দ্রবস্তুরই সঙ্গে তারা এক । বীটারশ্মি কেবল ইলেকট্রনের ধারা। গামারশ্মিতে কণা নেই ; তা আলোকজাতীয়। কেন যে এমন ভাঙচুর হয় তার কারণ আজও ধরা পড়েনি। এইটুকু অপব্যয়ের দরুন পরমাণুর বাকি অংশ আর সেই সাবেক রেডিয়ামরূপে থাকে না। তার স্বভাব যায় বদলিয়ে। দুটি ইলেকট্রন আত্মসাৎ করে আলফা কণার পরিণতি ঘটে। ইলিয়ম গ্যাসে। এই স্ফোরণ ব্যাপারকে বাইরের কিছুতে না পারে উসকিয়ে দিতে, না পারে থামাতে। চারি দিকের অবস্থা ঠাণ্ডাই থােক। আর গরমই থাকু, অন্য পরমাণুদের সঙ্গে মেলামেশাই করুক, অর্থাৎ তার বাইরের ব্যবস্থা যেরকমই হােক তার ফেটে যাওয়ার কাজটা ঘটতে থাকে ভিতরের থেকে । গড়ের উপরে রেডিয়ামের আয়ু প্ৰায় দু হাজার বছর, কিন্তু তার যে-পরমাণু থেকে একটা আলফা কণা ছুড়ে ফেলা হয়েছে তার মেয়াদ প্রায় দিন-চারেকের । তার পরে তার থেকে পরে পরে ফোরণ ঘটতে থাকে, অবশেষে গিয়ে ঠেকে সীসেতে। আলফা কণা যখন শুরু করে তার দৌড় তখন তার বেগ থাকে এক সেকেন্ডে প্রায় দশ হাজার মাইল । কিন্তু যখন তাকে কোনো বস্তুপদার্থের, এমন-কি, বাতাসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তখন দু-তিন ইঞ্চিখানেক পথ যেতে যেতেই তার চলন। সহজ হয়ে আসে। আলফা রশ্মি চলে একেবারে সোজা রেখা ধরে। কী ক'রে পারে সে একটা ভাববার কথা। কেননা বাতাসে যে অক্সিজেন বা নাইট্রোজেন পরমাণু আছে ইলিয়মের পরমাণু তার চেয়ে অনেক হালকা আর ছোটাে । এই তিন ইঞ্চি রাস্তায় বাতাসের বিস্তর ভারী ভারী অণু তাকে ঠেলে যেতে হয়। এ কিন্তু ভিড় ঠেলে যাওয়া নয়, ভিড় ভেদ করে যাওয়া । পরমাণু বলতে বোঝায় একটি কেন্দ্রবন্তু আর তাকে ঘিরে দৌড়-খাওয়া ইলেকট্রনের দল। এদের পাহারার ভিতর দিয়ে যেতে প্রচণ্ড বেগের জোর চাই। সেই জোর আছে। আলফাকণার। সে অন্য মণ্ডলীর ভিতর দিয়ে চলে যায়। অন্য পরমাণুর ভিতর দিয়ে যেতে যেতে লোকসান ঘটাতে থাকে। কোনো পরমাণু দিলে হয়তো একটা ইলেকট্রন সরিয়ে, ক্ৰমে দুটাে-তিনটে গেল হয়তো তার খসে, তখন ইলেকট্রনগুলো বাধনছাড়া হয়ে ঘুরে বেড়ায় । কিন্তু বেশিক্ষণ নয়। অন্য পরমাণুদের সঙ্গে জোড় বাধে। যে-পরমাণু ইলেকট্রন হারিয়েছে তাকে লাগে পজিটিভ বৈদ্যুতের চার্জ আর যে পরমাণু ছাড়া ইলেকট্রনটাকে ধরেছে তার চার্জ নেগেটিভ বৈদ্যুতের। তারা যদি পরম্পরের যথেষ্ট কাছাকাছি আসে তা হলে আবার হিসেব সমান করে নেয়। অসাম্য ঘুচিলে তখন বৈদ্যুতধর্মের চাঞ্চল্য শান্ত হয়ে যায়। স্বভাবত হীলিয়ম পরমাণুর থাকে দুটাে ইলেকট্রন । কিন্তু রেডিয়ম থেকে আলফা কণারূপে নিঃসৃত হয়ে সে যখন অন্য বস্তুর মধ্যে দিয়ে ছুটতে থাকে তখনকার মতো তার সঙ্গী দুটাে যায় ছিন্ন সু, অশেষ উপপ্লবের অন্ত হলে দুটা ইলেকট্রনদের মধ্যে থেকে অভাব পূরণ করে নিয়ে স্বধর্মে ফিরে আসে । এইখানে আর-একটা কথা বলে এই প্রসঙ্গ শেষ করে দেওয়া যাক । সকল বস্তুরই পরমাণুর ইলেকট্রন প্রোটন ও নুট্রন একই পদার্থ। তাদেরই ভাগ-বাটােয়ারা নিয়ে বস্তুর ভেদ । যে পরমাণুর আছে মোট ছয়টা পজিটিভ চার্জ সেই হল কার্বনের অর্থাৎ আঙ্গারিক বস্তুর পরমাণু । সাতটা ইলেকট্রনওয়ালা পরমাণু নাইট্রোজেনের, আটটা অক্সিজেনের। কেবল হাইড্রোজেন পরমাণুর আছে একটা ইলেকট্রন । আর বিরোনব্বইটা আছে য়ুরেনিয়মের । পরমাণুদের মধ্যে পজিটিভ চার্জের সংখ্যাভেদ নিয়েই তাদের জাতিভেদ । সৃষ্টির সমস্ত বৈচিত্র্য এই সংখ্যার ছন্দে । বৈদ্যুতসন্ধানীরা যখন আপনি কাজে নিযুক্ত আছেন তখন তাদের হিসাবে গোলমাল বাধিয়ে দিয়ে অকস্মাৎ একটা অজানা শক্তির অস্তিত্ব ধরা দিল। তার বিকিরণকে নাম দেওয়া হল মহাজাগতিক রশ্মি ; কসমিক রশ্মি। বলা যেতে পারে আকস্মিক রশ্মি। কোথা থেকে আসছে বোঝা গেল না। কিন্তু দেখা গৈল সর্বত্রই। কোনো বস্তু বা কোনো জীব নেই। যার উপরে এর করপেক্ষপ চলছে না। এমনকি, ঋতুস্রব্যের পরমাণুগুলোকে ঘা মেরে উত্তেজিত করে দিচ্ছে। হয়তো এরা জীবের প্রাণশক্তির সাহায্য