পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ł8 রবীন্দ্র-রচনাবলী পালার মতো ! অনাদিকাল থেকে সৃষ্টি ও প্রলয়ের পর্যায় দিন ও রাত্রির মতো বারে বারে ফিরে ফিরে আসছে, তার আদিও নেই। অন্তও নেই, এই কল্পনাই মনে আনা সহজ । পর্সিয়ুস রাশিতে অ্যালগল নামে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আছে। তার উজ্জ্বলতা স্থির থাকে যাট ঘণ্টা। তার পরে পাঁচ ঘণ্টার শেষে তার প্রভা কমে যায় এক-তৃতীয়াংশ। আবার উজ্জ্বল হতে শুরু করে। পাঁচ ঘণ্টা পরে পূর্ণ উজ্জ্বলতা পায়, সেই ভরা ঐশ্বৰ্য থাকে বাট ঘণ্টা। এইরকম উজ্জ্বলতার কারণ ঘটায় ওর জুড়ি নক্ষত্র। প্ৰদক্ষিণের সময় ক্ষণে ক্ষণে গ্ৰহণ লাগে গ্রহণ ছাড়ে। আর-একদল তারা আছে তাদের দীপ্তি বাইরের কোনো কারণ থেকে নয়, কিন্তু ভিতরেরই কোনো জোয়ার-ভাটায় একবার কমে একবার বাড়ে । কিছুদিন ধরে সমস্ত তারাটা হয়ে যায় বিশ্বফারিত, আয়ার ক্রমে যায় সংকুচিত হয়ে। তার আলোটা যেন নাড়ীর দাবাদবানি। সিফিউস নক্ষত্রমণ্ডলীতে এই সব তারা প্রথম খুঁজে পাওয়া গেছে বলে এদের নাম হয়েছে সিফাইডুস। এদের খোজ পাওয়ার পর থেকে নক্ষত্র জগতের দূরত্ব বের করার একটা মন্ত সুবিধা হয়েছে। আরো একদল নক্ষত্রের কথা বলবার আছে, তারা নাম পেয়েছে নতুন নক্ষত্র । তাদের আলো হঠাৎ অতিদ্রুত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, অনেক হাজার গুণ থেকে অনেক লক্ষ গুণ পর্যন্ত । তার পরে ধীরে ধীরে অত্যন্ত স্নান হয়ে যায়। এক কালে এই হঠাৎ-জ্বলে-ওঠা তারাদের আবির্ভাবকে নতুন আবির্ভাব মনে করে এদের নাম দেওয়া হয়েছিল নতুন তারা । কিছুকাল পূর্বে লাসের্টি অর্থাৎ গোধিকা নামধারী নক্ষত্ররাশির কাছে একটি, যাকে বলে নতুন তারা, হঠাৎ অত্যুজ্বল হয়ে জ্বলে উঠল। পরে পরে চারটি জ্যোতির খোলস দিলে ছেড়ে । দেখা গেল ছাড়া খোলস দৌড় দিয়েছে এক সেকেন্ডে ২২০০ মাইল বেগে । এই নক্ষত্র আছে প্ৰায় ২৬০০ আলো-চলা-বছর দূরে। অর্থাৎ যে তারার গ্যাস জ্বলনের উৎপতন আজ আমাদের চোখে পড়ল এটা ঘটেছিল৷ খৃস্টজন্মের সাড়ে ছশো বছর পূর্বে। তার এই সব ছেড়ে-ফেলা গ্যাসের খোলসগুলির কী হল এ নিয়ে আন্দাজ চলেছে। সে কি ওর বন্ধন কাটিয়ে মহাশূন্যে বিবাগী হয়ে যাচ্ছে, না ওর টানে বাধা পড়ে ঠাণ্ডা হয়ে ওর আনুগত্য করে চলেছে। এই যে তারা জ্বলে-ওঠা, এ ঘটনাকে বিচার করে কোনো কোনো পণ্ডিত বলেছেন হয়তো এমনি করেই নক্ষত্রের বিস্ফোরণ থেকে ছাড়া-পাওয়া গ্যাসপুঞ্জ হতেই গ্রহের উৎপত্তি ; হয়তো সূর্য এক সময়ে এইরকম নতুন তারার রীতি অনুসারে আপনি উৎসারিত বিচ্ছিন্ন অংশ থেকেই গ্রহসন্তানদের জন্ম দিয়েছে। এ মত যদি সত্য হয় তা হলে সম্ভবত প্ৰত্যেক প্রাচীন নক্ষত্রেরই এক সময়ে একটা বিস্ফোরণের দশা আসে, আর গ্রহবংশের সৃষ্টি করে। হয়তো আকাশে নিঃসন্তান নক্ষত্র অল্পই আছে । দ্বিতীয় মত এই যে, বাহিরের একটা চলতি তারা অন্য আর-একটা তারার টানের এলাকার মধ্যে এসে পড়ে ঘটিয়েছে এই প্ৰলয় কাণ্ড । এই মত-অনুসারে পৃথিবীর উৎপত্তির আলোচনা পরে করা शg | আমাদের নক্ষত্ৰজগতে যে-সব নক্ষত্র আছে তারা নানারকমের। কেউ বা সূর্যের চেয়ে দশ হাজার গুণ বেশি আলো দেয়, কেউ বা দেয় একশো ভাগ কম। কারও বা পদার্থপূঞ্জ অত্যন্ত ঘন, কারও বা নিতান্তই পাতলা । কারও উপরিতলের তাপমাত্রা বিশ-ত্রিশ হাজার সেন্টিগ্ৰেড পরিমাণে, কারও বা তিন হাজার সেন্টিগ্রেডের বেশি নয়, কেউ বা বারে বারে প্রসারিত কুঞ্চিত হতে হতে আলো-উত্তাপের জোয়ার-ভাটা খেলাচ্ছে, কেউ বা চলেছে একা একা ; কারাও বা চলেছে জোড় বেঁধে, তাদের সংখ্যা নক্ষত্রদলের এক-তৃতীয়াংশ। জুড়ি নক্ষত্রেরা ভারাবর্তনের জালে ধরা পড়ে যাপন করছে প্ৰদক্ষিণের পালা। জুড়ির মধ্যে যার জোর কম প্ৰদক্ষিণের দায়টা পড়ে তারই পরে। যেমন সূৰ্য আর পৃথিবী | অবলা পৃথিবী যে কিছু টান দিচ্ছে না তা নয়। কিন্তু সূৰ্যকে বড়ো বেশি বিচলিত করতে পারে না। প্ৰদক্ষিণের অনুষ্ঠানটা একা সম্পন্ন করছে পৃথিবীই। যেখানে দুই জ্যোতিষ্ক প্রায় সমান জোরের সেখানে উভয়ের মাঝামাঝি জায়গায় একটা লক্ষ্য স্থির থাকে, দুই নক্ষত্র সেটাকেই প্ৰদক্ষিণ করে । এই জুড়ি নক্ষত্র হল কী করে তা নিয়ে আলাদা আলাদা মত শুনি। কেউ কেউ বলেন এর মূলে