পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বপরিচয় 286 তাদেরই মধ্যে একটি । এরা ক্রমশ আপনি তেজ ছড়িয়ে দিয়ে ঠাণ্ডা হয়ে গ্রহের আকার ধরেছে । আকাশে নক্ষত্রের দূরত্ব, সংখ্যা ও গতি হিসাব করে দেখা গেছে যে প্রায় পাঁচ-ছ হাজার কোটি বছরে একবারমাত্র এরকম অপঘাত ঘটতেও পারে । গ্রহ সৃষ্টির এই মত মেনে নিলে বলতে হবে যে গ্ৰহপরিচয়ওয়ালা নক্ষত্রসৃষ্টি এই বিশ্বে প্রায় অঘটনীয় ব্যাপার। কিন্তু ব্ৰহ্মাণ্ডের অণ্ডগোলকসীমা কেঁপে উঠতে উঠতে নক্ষত্রেরা ক্রমশই পরস্পরের কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে, এ মত যদি স্বীকার করতে হয় তা হলে পূর্বযুগে আকাশগোলক যখন সংকীর্ণ ছিল তখন তারায় তারায় ঠোকাঠুকির ব্যাপার সদা-সর্বদা ঘটত বলে ধরে নিতে হয় । সেই নক্ষত্র-মেলার ভিড়ের দিনে অনেক নক্ষত্রেরই ছিন্ন অংশ থেকে গ্রহের উৎপত্তিসম্ভাবনা ছিল এ কথা যুক্তিসংগত । যে অবস্থায় আমাদের সূর্য অন্য সূর্যের ঠেলা খেয়েছিল সেই অবস্থােটা সেই সংকুচিত বিশ্বের দিনে এখনকার হিসাবমতে দূর সম্ভাবনীয় ছিল না বলেই মনে করে নিতে হবে । ধারা এই মত মেনে নেন নি তঁদের অনেকে বলেন যে, প্রত্যেক নক্ষত্রের বিকাশের বিশেষ অবস্থায় ক্রমশ এমন একটা সময় আসে যখন সে পাকা শিমুল।ফলের মতো ফোেট গিয়ে প্রচণ্ড বেগে চারিদিকে পুঞ্জ পুঞ্জ অগ্নিবাস্প ছড়িয়ে ফেলে দেয়। কোনো কোনো নক্ষত্র থেকে হঠাৎ এরকম জ্বলন্ত গ্যাস বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। ছোটাে একটি নক্ষত্র ছিল, কয়েক বছর আগে তাকে ভালো দূরবীন ছাড়া কখনো দেখা যায় নি। এক সময় হঠাৎ দীপ্তিতে সে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের প্রায় সমতুল্য হয়ে উঠল। আবার কয়েক মাস পরে আন্তে আন্তে তার প্রবল প্ৰতাপ এত ক্ষীণ হয়ে গেল যে, পূর্বের মতোই তাকে দূরবীন ছাড়া দেখাই গেল না। উজ্জ্বল অবস্থায় অল্প সময়ের মধ্যে এই নক্ষত্রটি পুঞ্জপুঞ্জ যে জ্বলন্ত বাষ্পচারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে সেইগুলিই আন্তে আন্তে ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বেঁধে গ্ৰহ-উপগ্রহের সৃষ্টি ঘটাতে পারে বলে অনুমান করা অসংগত নয়। এই মত স্বীকার করলে বলতে হবে যে কোটি কোটি নক্ষত্র এই অবস্থার ভিতর দিয়ে গিয়েছে, অতএব সৌরজগতের মতোই আপন আপন গ্রহদল নিয়ে কোটি কোটি নক্ষত্ৰজগৎ এই বিশ্ব পূৰ্ণ করে আছে । পৃথিবীর সব চেয়ে কাছে আছে যে নক্ষত্র তারও যদি গ্রহমণ্ডলী থাকে। তবে তা দেখতে হলে যত বড়ো দূরবীনের দরকার या थाङ९ उदि श् नि । অল্প কিছুদিন হল কেমব্রিজের এক তরুণ পণ্ডিত লিটলটন সৌরজগৎ-সৃষ্টি সম্বন্ধে একটি নূতন মত প্রচার করেছেন। পূর্বেই বলেছি আকাশে অনেক জোড়নক্ষত্র পরস্পরকে প্ৰদক্ষিণ করছে। এর মতে আমাদের সূর্যেরও একটি জুড়ি ছিল। ঘুরতে ঘুরতে আর-একটা ভবঘুরে জ্যোতিষ্ক এসে এই অনুচরের গায়ে পড়ে ধাক্কা মেরে তাকে অনেক দূরে ছিটকে ফেলে দিয়ে চলে গেল। চলে যেতে যেতে পরস্পর আকর্ষণের জোরে মস্ত বড়ো একটা জ্বলন্ত বাম্পের টানা সূত্র বের হয়ে এসেছিল ; তারই ভিতর মিশিয়ে গিয়েছিল। এদের উভয়ের উপাদানসামগ্ৰী । এই বাস্পসূত্রের যে অংশ সূর্যের প্রবল টানে আটকা পড়ে গেল সেই বন্দী-করা গ্যাসের থেকেই জন্মেছে আমাদের গ্রহমণ্ডলী। এরা আয়তনে ছোটাে বলেই ঠাণ্ডা হয়ে আসতে দেরি করলে না ; তাপ কমতে কমতে গ্যাসের টুকরোগুলো প্ৰথমে হুল তরল, তার পর আরো ঠাণ্ড হতেই তাদের শক্ত হয়ে ওঠবার দিন এল। এ কথা মনে রেখো। এ-সকল আন্দাজি মতকে নিশ্চিত প্রমাণের মধ্যে ধরে নেওয়া চলবে না । বলা আবশ্যক, সূর্যের সমন্তটাই গ্যাস। পৃথিবীর যে-সব উপাদান মাটি ধাতু পাথরে শক্ত, তাদের সমতই সূর্যের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তাপে আছে গ্যাসের অবস্থায়। বর্ণলিপিব্যন্ত্রের রেখাপাত থেকে তার ॐभsों शशि शई । কিরীটিকার অতি সূক্ষ্ম গ্যাস-আবরণের কথা পূর্বেই বলা হয়েছে। সেই স্তর পেরিয়ে যত ভিতরে যাওয়া যাবে, ততই দেখা দেবে ঘনতর গ্যাস এবং উষ্ণতর তাপ । সূর্যের উপরিতলের তাপমাত্রা প্ৰায় দশ হাজার ফারেনহাইট ডিগ্রির মাপে, অবশেষে নীচে নামতে নামতে এমন স্তরে পৌঁছব যেখানে ঠাসা গ্যাসের আর স্বচ্ছতা নেই। এই জায়গায় তাপমাত্রা এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ ডিগ্রির চেয়ে বেশি। অবশেষে কেন্দ্রে গিয়ে পাওয়া যাবে প্রায় সাত কেটি বিশ লক্ষ ডিগ্রির তাপ । সেখানে সূর্যের দেহবন্তু কঠিন লোহা-পাথরের চেয়ে অনেক বেশি ঘন অথচ গ্যাসধর্মী ।