পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V রবীন্দ্র-রচনাবলী সূর্যের দূরত্বের কথাটা অঙ্ক দিয়ে বলবার চেষ্টা না করে একটা কাল্পনিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলা যত । আমাদের দেহে যে-সব অনুভূতি ঘটছে আমাদের কাছে তার খবর-চালাচালির ব্যবস্থা করছে অসম স্পৰ্শনাড়ী। এই নাড়ীগুলি আমাদের শরীর ব্যাপ্ত করে মিলেছে। মস্তিষ্কে গিয়ে। টেলিগ্রাফের তু মতো তাদের যোগে মস্তিকে খবর আসে, আমরা জানতে পারি কোথায় পিঁপড়ে কামড়াল, জিৰে । খাদ্য লাগল সেটা মিষ্টি, যে দুধের বাটি হাতে তুললুম। সে গরম । আমাদের শরীরটা হাওড়া থেকে বর্ধমানের মতো প্রশস্ত নয়, তাই খবর পেতে দেরি লাগে না। তবু অতি অল্প একটু সময় লাগেই সে এতই অল্প যে তা মাপা শক্ত। কিন্তু পণ্ডিতেরা তাও মেপেছেন। তারা পরীক্ষা করে স্থির করেছেন যে মানুষের শরীরের মধ্য দিয়ে দৈহিক ঘটনা-অনুভূতিতে পৌঁছয় সেকেন্ডে প্রায় একশো ফুট বেগে। মনে করা যাক, এমন একটা দৈত্য আছে, পৃথিবী থেকে হাত বাড়ালে যার হাত সূর্যে পেঁৗছতে পারে। দুঃসাহসী দৈত্যের হাত যতই শক্ত হােক, সূর্যের গা ছোবামাত্রই যাবে পুড়ে। কিন্তু পুড়ে যাওয়ার যে ক্ষতি ও যন্ত্রণা নাড়ীযোগে সেটা টের পেতে তার লাগবে প্রায় একশো ষাট বছর। তার আগেই সে মারা যায় তো জানবেই না । সূর্যের ব্যাস ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার মাইল; ১১০টি পৃথিবী পাশাপাশি এক সরল রেখায় রাখলে সূর্যের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছতে পারে। সূর্যের ওজন পৃথিবীর চেয়ে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার গুণ বেশি, তাই নিজের দিকে সে টান দিতে পারে। সেই পরিমাণ ওজনের জোরে । এই টানের জোরে সূর্য পৃথিবীকে আপনি আয়ত্তে বেঁধে রাখে, কিন্তু দৌড়ের জোরে পৃথিবী আপনি স্বাতন্ত্র্য রাখতে পেরেছে গোল আলুর ঠিক মাঝখান দিয়ে উপর থেকে নীচে পর্যন্ত যদি একটা শলা চালিয়ে দেওয়া যায় আর সেই শলাটার চার দিকে যদি আলুটাকে ঘোরানো যায়, তা হলে সেই ঘোরা যেমন হয়। সেইরকম হয় ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীর একবার করে ঘুরা-খাওয়া। আমরা বলি, পৃথিবী আপনি মেরুদণ্ডের চার দিকে ঘুরছে। আমাদের শল্যাফোড়া আলুটার সঙ্গে পৃথিবীর তফাত এই যে, তার এরকম কোনো শলা নেই মেরুদণ্ড কোনো দণ্ডই নয় । যে জায়গাটাতে শলা থাকতে পারত কাল্পনিক সোজা লাইনের সেই জায়গাটাকেই বলি মেরুদণ্ড । যেমন লাটিম । সে ঘোরে। আপন মাঝখানের এমন একটা খাড়া লাইনের চার দিকে যে-লাইনটা মনে-করে-নেওয়া । মেরুদণ্ডের চার দিকে পৃথিবীর এক পাক ঘুরতে লাগে চব্বিশ ঘণ্টা। সূর্যও আপনি মেরুদণ্ডের চার দিকে ঘোরে। ঘুরতে কতক্ষণ লাগে তা যে উপায়ে জানা গেছে সে কথা বলি। খুব ভোরে যখন আলোতে চোখ ধাধায় না। তখন সূর্যের দিকে তাকালে হয়তো দেখা যাবে সূর্যের গায়ে কালো কালে দাগ আছে। এক-একটি কালো দাগ সময়ে সময়ে এত বড়ো হয়ে প্রকাশ পায় যে, সমস্ত গ্রহ, উপগ্রহ একত্র করলেও তার সমান হয় না । ছোটো দাগগুলি মিলিয়ে যেতে বেশিদিন লাগে না, কিন্তু বাড়ী বড়ো দাগ দু-তিন সপ্তাহ থাকে। দূরবীন দিয়ে দেখলে মনে হয় যেন এরা ক্রমাগত ডান দিকে ঘুরে যাচ্ছে, কিন্তু আসলে ঘুরছে এদের সবাইকে গায়ে নিয়ে সূর্য। এই কালো দাগের অনুসরণ করে এই ঘুরে যাওয়ার সময়টার হিসাব পাওয়া গেছে ; প্রমাণ হয়েছে যে, পৃথিবী ঘোরে চব্বিশ ঘণ্টায়, সূর্য ঘোরে ছবিবশ দিনে । সূর্যের দাগগুলো সূর্যের বাইরের আবরণে প্ৰকাণ্ড আবর্তগহবর। সেখান দিয়ে ভিতর থেকে উত্তওঁ গ্যাস কুণ্ডলী আকারে ঘুরতে ঘুরতে উপরে বেরিয়ে আসছে। এর কেন্দ্ৰপ্ৰদেশ ঘোর কালো, তার নাম আমত্রা ; তার চার দিকে কম-কালো বেষ্টনী, তার নাম পেনামাত্রা। এদের কালো দেখতে হয়েছে চার পাশের দীপ্তির তুলনায়- সেই আলো যদি বন্ধ করা যেত তা হলে অতি তীব্ৰ দেখা যেত। এদের জ্যোতি । সূর্যের যে দাগ খুব বড়ো তার কোনো-কোনোটার আমন্ত্রর এক পার থেকে আর-এক পারের মাপ পঞ্চাশ হাজার মাইল, দেড় লক্ষ মাইল তার পেনামন্ত্রার মাপ। সূর্যের এই সব দাগের কমা-বাড়ার প্রভাব পৃথিবীর উপরে নানারকমে কাজ করে। যেমন আমাদের আবহাওয়ায়। প্রায় এগারো বছরের পালাক্রমে সূর্যের দাগ বাড়ে কমে। পরীক্ষায় দেখা গেছে বনস্পতির গুড়ির মধ্যে এই দাগি বৎসরের সাক্ষ্য আঁকা পড়ে। বড়ো গাছের গুড়ি কাটলে তার মধ্যে