পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বাপরিচয় (8) বাপর। এত সূক্ষ্ম যে কখনো কখনো তাকে মাড়িয়ে গিয়েছে পৃথিবী, তবু সেটা অনুভব করতে পারি নি। ওর মুণ্ডটা উল্কাপিণ্ড দিয়ে তৈরি । এখনকার বড়ো বড়ো পণ্ডিতেরা এই মত স্থির করেছেন যে ধূমকেতুর সূর্যের ধাঁধা অনুচরেরই দলে। কয়েকটা থাকতে পারে যারা পরিবারভুক্ত নয় যারা আগঙুক । একবার একটি ধূমকেতুর প্রদক্ষিণপথে ঘটল অপঘাত । বুধের কক্ষপথের পাশ দিয়ে যখন সে চলছিল তখন বুধের সঙ্গে টানাটানিতে তার পথের হয়ে গেল গোলমাল। রেলগাড়ি রেলচু্যত হলে আবার তাকে রেলে ঠেলে তোলা হয়। কিন্তু টাইমটেবলের সময় পেরিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তাই ঘটল । ধূমকেতুটা আপন পথে যখন ফিরল। তখন তার নির্দিষ্ট সময় হয়েছে উত্তীর্ণ। ধূমকেতুকে যে-পরিমাণ নড়িয়ে দিতে বুধগ্রহের যতখানি টানের জোর লেগেছিল তাই নিয়ে চলল অঙ্ককষা। যার যতটা ওজন সেই পরিমাণ জোরে সে টান লাগায় এটা জানা কথা, এর থেকেই বেরিয়ে পড়ল বুধগ্রহের ওজন । দেখা গেল। তেইশটা বুধগ্রহের বাটখারা চাপাতে পারলে তবেই তা পৃথিবীর ওজনের সমান হয়। বুধগ্রহের পরের রান্তাতেই আসে শুক্রগ্রহের প্রদক্ষিণের পালা। তার ২২৫ দিন লাগে সূর্য ঘুরে আসতে। অর্থাৎ আমাদের সাড়ে-সাত মাসে তার বৎসর। ওরে মেরুদণ্ডী-ঘোরা ঘূর্ণিপাকের বেগ কতটা তা নিয়ে এখনো তর্ক শেষ হয় নি। এই গ্রহটি বছরের এক সময়ে সূর্যান্তের পরে পশ্চিম দিগন্তে দেখা দেয়, তখন তাকে বলি সন্ধ্যাতরা, আবার এই গ্রহই আর-এক সময়ে সূর্য ওঠবার আগে পূব দিকে ওঠে, তখন তাকে শুকতারা বলে জানি । কিন্তু মোটেই এ তারা নয়, খুব জ্বলজ্বল করে বলেই সাধারণের কাছে তারা খেতাব পেয়েছে। এর আয়তন পৃথিবীর চেয়ে অল্প-একটু কম। এই গ্রহের পথ পৃথিবীর পথের চেয়ে আরো তিন কোটি মাইল সূর্যের কাছে। সেও কম নয়। যথোচিত দূর ধাঁচিয়ে আছে। তবু এর ভিতৱকার খবর ভালো করে পাই নে। সে সূর্যের আলোর প্রখর আবরণের জন্যে নয়। বুধকে ঢেকেছে৷ সূর্যেরই আলো, আর শুক্রকে ঢেকেছে। এর নিজেরই ঘন মেঘ। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন শুক্রগ্রহের যে উত্তাপ তাতে জলের বিশেষ রূপান্তর হয় না। কাজেই ওখানে জলাশয় আর মেঘ দুইয়ের অস্তিত্বই আশা করতে পারি। মেঘের উপরিতলা থেকে যতটা আন্দাজ করা যায় তাতে প্ৰমাণ হয়। এই গ্রহের অক্সিজেন-সম্বল নিতান্তই সামান্য । ওখানে যে-গ্যাসের স্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া যায় সে হচ্ছে আঙ্গারিক গ্যাস । মেঘের উপরিতলায় তার পরিমাণ পুথিবীর ঐ গ্যাসের চেয়ে বহু হাজার গুণ বেশি। পৃথিবীর এই গ্যাসের প্রধান ব্যবহার লাগে গাছপালার খাদ্য জোগাতে । এই আঙ্গারিক গ্যাসের ঘন আবরণে গ্রহটি যেন কম্বলচাপা । তার ভিতরের গরম বেরিয়ে আসতে পারে না। সুতরাং শুক্রগ্রহের উপরিতল ফুটন্তু জলের মতো কিংবা তার চেয়ে বেশি উষ্ণ । শুক্ৰে জোলো বাম্পের সন্ধান যে পাওয়া গেল না সেটা আশ্চর্যের কথা । শুক্রের ঘন মেঘ তা হলে কিসের থেকে সে কথা ভাবতে হয় । সম্ভব এই যে মেঘের উচ্চস্তরে ঠাণ্ডায় জল এত জমে গেছে যে তার থেকে বাপ পাওয়া যায় না । এ কথাটা বিশেষ করে ভেবে দেখবার বিষয়। পৃথিবীতে সৃষ্টির প্রথম যুগে যখন গলিত বস্তুগুলো ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বাধতে লাগল। তখন অনেক পরিমাণে জোলো বাষ্প আর আঙ্গারিক গ্যাসের উদ্ভব হল ! তাপ আরো কমলে পর জোলো বাষ্প জল হয়ে গ্ৰহতলে ।সমূদ্র বিস্তার করে দিলে। তখন বাতাসে যে-সব গ্যাসের প্রাধান্য ছিল তারা নাইট্রোজেনের মতো সব নিক্রিয় গ্যাস । অক্সিজেন গ্যাসটা তৎপর জাতের মিশুক, অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে মিশে যৌগিক পদাৰ্থ তৈরি করা তার স্বভাব। এমনি করে নিজেকে সে রূপান্তরিত করতে থাকে । তৎসত্ত্বেও পৃথিবীর হাওয়ায় এতটা পরিমাণ অক্সিজেন বিশুদ্ধ হয়ে টিকল কী করে। তার প্রধান কারণ পৃথিবীর গাছপালা । উদ্ভিদেরা বাতাসের আঙ্গারিক গ্যাস থেকে অঙ্গার পদার্থ নিয়ে নিজেদের জীবকোষ তৈরি করে, মুক্তি দেয় অক্সিজেনকে । তার পরে প্রাণীদের নিশ্বাস ও লতাপাতার পচানি থেকে আবার আঙ্গারিক গ্যাস উঠে আপনি তহবিল পূরণ করে । পৃথিবীতে সম্ভবত