পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বাপরিচয় 20 উপরকার স্তর ঠাণ্ডা হতে হতে তেমনি কুঁচকিয়ে যেতে লাগল। কুঁচকিয়ে গেলে দুধের সর যেটুকু অসমান হয় সে আমরা গণ্যই করি নে। কিন্তু কুঁচকিয়ে-যাওয়া পৃথিবীর অন্তরের অসমানতা তেমন সামান্য বলে উড়িয়ে দেবার নয়। নীচের স্তর এই অসমানতার ভার বইবার মতো পাকা হয়নি। তাই ভালো নির্ভর না পাওয়াতে উপরের শক্ত স্তরটা ভেঙে তুবড়ে উচুনিচু হতে থাকল, দেখা দিল। পাহাড় পর্বত। বুড়ো মানুষের কপালের চামড়া কুঁচকে যেমন বলি পড়ে, তেমনি এগুলো যেন পৃথিবীর উপরকার চামড়ার বলি। সমস্ত পৃথিবীর বৃহৎ গভীরতার তুলনায় এই পাহাড় পর্বত মানুষের চামড়ার উপর বলিচিহ্নের কম বৈ বেশি নয় । প্রাচীন যুগের পৃথিবীতে কুঁচকে-যাওয়া স্তরের উচুনিচুতে কোথাও নামল গহবর, কোথাও উঠল। পর্বত। গহবরগুলো তখনো জলে ভর্তি হয় নি। কেননা তখনো পৃথিবীর তাপে জলও ছিল বাস্প হয়ে। ক্রমে মাটি হল ঠাণ্ডা, বাষ্প হল জল। সেই জলে গহবর ভরে উঠে হল ।সমূদ্র । পৃথিবীর অনেকখানি জলের বাস্প তো তরল হল ; কিন্তু হাওয়ার প্রধান গ্যাসগুলো গ্যাসই রয়ে গেল। তাদের তরল করা সহজ নয়। যতটা ঠাণ্ডা হলে তারা তরল হতে পারত ততটা ঠাণ্ডায় জল যেত জমে, আগাগোড়া পৃথিবী হত বরফের বর্মে আবৃত। মাঝারি পরিমাপের গরমে-ঠাণ্ডায় অক্সিজেন নাইট্রোজেন প্রভৃতি বাতাসের গ্যাসীয় জিনিসগুলি চলাফেরা করছে সহজে, আমরা নিশ্বাস নিয়ে বঁচেছি। পৃথিবীর ভিতরের দিকে সংকোচন এখনো একেবারে থেমে যায় নি। তারই নড়নের ঠেলায় হঠাৎ কোথাও তলার জায়গা যদি নীচে থেকে কিছু সরে যায়, তা হলে উপরের শক্ত আবরণ ভেঙে গিয়ে তার উপরে চাপ দিয়ে পড়ে, দুলিয়ে দেয় পৃথিবীর স্তরকে, ভূমিকম্প জেগে ওঠে। আবার কোনো কোনো জায়গায় ভাঙা আবরণের চাপে নীচের তপ্ত তরল জিনিস উপরে উছলে ওঠে । পৃথিবীর ভিতরের অবস্থা জানতে গেলে যতটা খুঁড়ে দেখা দরকার এখনো ততটা নীচে পর্যন্ত খোড়া হয় নি। কয়লার খোজে মানুষ মাটির যতটা নীচে নেমেছে সে এক মাইলের বেশি নয়। তাতে কেবল এই খবরটা পাওয়া গেছে যে, যত পৃথিবীর নীচের দিকে যাওয়া যায় ততই একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় গরম বাড়তে থাকে। এই উত্তাপবৃদ্ধির পরিমাণ সব জায়গায় সমান নয়, স্থানভেদে মাত্রাভেদ ঘটে । এক সময়ে একটা মত চলতি ছিল যে, ভূস্তরটা ভাসছে পৃথিবীর ভিতরকার তাপে-গলা তরল ধাতুর উপরে। এখনকার মত হচ্ছে পৃথিবীটা নিরেট, ভিতরের দিকে তাপের অস্তিত্ব দেখা যায় বটে, কিন্তু পৃথিবীর স্তরে যে-সব তেজস্ক্রিয় পদার্থ আছে, যথেষ্ট তাপ পাওয়া যাচ্ছে তাদের থেকে । তার অন্তঃকেন্দ্রের উপাদান লোহার চেয়ে নিবিড় । সম্ভবত সে স্থানটি খুব গরম, কিন্তু এতটা নয় যাতে ভিতরকার জিনিস গলে যেতে পারে । আন্দাজ করা যাচ্ছে সেখানকার জিনিসটা লোহা আর নিকেল, তারা আছে দু'হাজার মাইল জুড়ে, আর তাদের বেড়ে আছে যে একটা খোল সে পুরু দু'হাজার মাইলের উপরে । পৃথিবীর সমস্তটাই যদি জলময় হত, তা হলে তার ওজন যতটা হত। জলে স্থলে মিশিয়ে তার চেয়ে তার ওজন সাড়ে-পাচগুণ বেশি। তার উপরকার তলার পাথর জলের চেয়ে তিনগুণ বেশি ঘন । তা হলে তার ভিতরে আরো বেশি ভারী জিনিস আছে ধরে নিতে হবে । কেবল যে উপরকার চাপেই তাদের ঘনত্ব বেড়ে গেছে তা নয়। সেখানকার বস্তুপুঞ্জের ভার স্বভাবতই বেশি। পৃথিবীকে ঘিরে আছে যে বাতাস তার শতকরা ৭৮ ভাগ নাইট্রোজেন, ২১ ভাগ অক্সিজেন । আর আর যে-সব গ্যাস আছে সে অতি সামান্য । অক্সিজেন গ্যাস মিশুক গ্যাস, লোহার সঙ্গে মিশে মার্চ ধরায়, অঙ্গারপদার্থের সঙ্গে মিশে আগুন জ্বালায়- এমনি করে বায়ুমণ্ডল থেকে নিয়ত তার অনেক খরচ হতে থাকে । এ দিকে গাছপালারা বাতাসের অঙ্গরাক্স গ্যাসের থেকে নিজের প্রয়োজনে অঙ্গার আদায় করে নিয়ে অক্সিজেন-ভাগ বাতাসকে ফিরিয়ে দেয়। এ না হলে পৃথিবীর হাওয়া অঙ্গারান্ন গ্যাসে ভরে যেত, মানুষ পেত না তার নিশ্বাসের বায়ু । আকাশের অনেকটা উচু পর্যন্ত হওয়ার বেশি পরিবর্তন হয়নি। যে-সব গ্যাস মিশিয়ে হাওয়া তৈরি S 9 Se