পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(7& রবীন্দ্র-রচনাবলী তাদের অনেকটাই আরো অনেক উচুতে পৌঁছয় না। খুব সম্ভব সব চেয়ে হালকা দুটাে গ্যাস অর্থাৎ ইলিয়াম এবং হাইড্রোজেনে মিশনো সেখানকার হাওয়া । বাতাসের ঘনত্ব কমতে কমতে ক্রমশই বাতাস অনেক উফের্ম উঠে গিয়েছে। বাহির থেকে পৃথিবীতে যে উত্মপাত হয় পৃথিবীর হাওয়ার ঘর্ষণে তা জ্বলে ওঠে, তাদের অনেকেরই এই জ্বলন প্রথম দেখা দেয় ১২০ মাইল উপরে। ধরে নিতে হবে তার উৰ্ব্বে আরো অনেকখানি বাতাস আছে। যার ভিতর দিয়ে আসতে আসতে তবে এই জ্বলনের অবস্থা ঘটে। সূর্যের আলো নয় কোটি মাইল পেরিয়ে আসে পৃথিবীতে। গ্ৰহবেষ্টনকারী আকাশের শূন্যতা পার হয়ে আসতে তেজের বেশি ক্ষয় হবার কথা নয়। যে প্রচণ্ড তেজ নিয়ে সে বায়ুমণ্ডলের প্রত্যন্ত দেশে পেঁৗছয় তার আঘাতে সেখানকার হাওয়ার পরমাণু নিশ্চয়ই ভেঙেচুরে ছারখার হয়ে যায়- কেউ আস্ত থাকে না । বাতাসের সর্বোচ্চ ভাগে ভাঙা পরমাণুর যে স্তরের সৃষ্টি হয় তাকে নাম দেওয়া হয় (F2) gቕ S W..g ! সেখানকার খরচের পর বাকি সূর্যকিরণ নীচের ঘনতর বায়ুমণ্ডলকে আক্রমণ করে, সেখানেও পরমাণুভাঙা যে স্তরের উদ্ভব হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে। (F1) এফ ১ স্তর। আরো নীচে আরো ঘন বাতাসে সূর্যকিরণের আঘাতে পঙ্গু পরমাণুর আরো একটা যে স্তর দেখা দেয়, তার নাম (E)। ই স্তর। সূর্যকিরণের বেগনি-পারের রশ্মি পরমাণু ভাঙচুরের কাজে সব চেয়ে প্রধান উদ্যোগী। উচ্চতর স্তরে উপদ্রব শেষ করতে করতে বেগনি-পারের রশ্মি অনেকখানি নিঃস্ব হয়ে নীচের হওয়ায় অল্প পৌঁছয় । সেটা আমাদের রক্ষে । বেশি হলে সইত না । সূর্যকিরণ ছাড়া আরো অনেক কালাপাহাড় দূর থেকে আসে বাতাসকে অদৃশ্য গদাঘাত করতে । যেমন উল্কা, তাদের কথা পূর্বেই বলা হয়েছে। এরা ছুটে আসে গ্রহ-আকাশের ভিতর দিয়ে এক সেকেণ্ডে দশ থেকে একশো মাইল বেগে । হাওয়ার ঘর্ষণে তাদের মধ্যে তাপ জেগে ওঠে, তার মাত্রা হয় তিন হাজার থেকে সাত হাজার ফারেনহাইট ডিগ্রি পর্যন্ত ; তাতে করে বেগনি-পারের আলোর তীক্ষ বাণ তৃণমুক্ত হয়ে আসে, বাতাসের অণুগুলোর গায়ে পড়ে তাদের জ্বলিয়ে চুরমার করে দেয় । এ ছাড়া আর-এক রশ্মিবির্ষণের কথা পূর্বেই বলা হয়েছে। সে কসমিক রশ্মি । বিন্ধে সে-ই হচ্ছে সব চেয়ে প্রবল শক্তির বাহন । পৃথিবীর বাতাসে আছে অক্সিজেন নাইট্রোজেন প্রভৃতি গ্যাসের কোটি কোটি অণুকণা, তারা অতি দ্রুতবেগে ক্রমাগতই ঘোরাঘুরি করছে, পরম্পরের মধ্যে সংঘাত চলছেই। যারা হালকা কণা তাদের দৌড় বেশি। সমগ্র দলের যে বেগ তার চেয়ে স্বতন্ত্র ছুটকো অণুর বেগ অনেক বেশি। সেইজন্যে পৃথিবীর বাহির আঙিনার সীমা থেকে হাইড্রোজেনের খুচরো অণু প্রায়ই পৃথিবীর টান কাটিয়ে বাইরে দৌড় দিচ্ছে। কিন্তু দলের বাইরে অক্সিজেন নাইট্রোজেনের অণুকণার গতি কখনো ধৈর্যহারা পলাতকার বেগ পায় না। সেই কারণে পৃথিবীর বাতাসে তাদের দৈন্য ঘটে নি ; কেবল তরুণ বয়সে যে হাইড্রোজেন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে প্রধান গ্যাসীয় সম্পত্তি,ক্ৰমে ক্ৰমে সেটার অনেকখানিই সে খুঁইয়ে GFM বড়ো বড়ো ডানাওয়ালা পাখি শুধু ডানা ছড়িয়েই অনেকক্ষণ ধরে হাওয়ার উপরে ভেসে বেড়ায়, বুঝতে পারি পাখিকে নির্ভর দিতে পারে এতটা ঘনতা আছে বাতাসের । বস্তুত কঠিন ও তরল জিনিসের মতোই হাওয়ারও ওজন মেলে। আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত হাওয়া আছে অনেক মাইল ধরে । সেই হাওয়ার চাপ এক ফুট লম্বা ও এক ফুট চওড়া জিনিসের উপর প্রায় সাতাশ মণ। একজন সাধারণ মানুষের শরীরে চাপ পড়ে প্রায় ৪০০ মণের উপর। তবুও তা টের পাই নে। যেমন উপর থেকে তেমনি নীচের থেকে, আবার আমাদের শরীরের মধ্যে যে হাওয়া আছে তার থেকে সমানভাবে বাতাসের চাপ আর ঠেলা লাগছে বলে বাতাসের ভার আমাদের পীড়া দিচ্ছে না । পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আপনি আবরণে দিনের বেলায় সূর্যের তাপ অনেকটা ঠেকিয়ে রাখে, আর