পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় O যেমন আছে শব্দের বাছাই তেমনি আছে ভাবপ্রকাশের বাছাইয়ের কাজ । বাউল বলতে চেয়েছে, চার দিকে অচিন্তনীয় অপরিসীম রহস্য, তারই মধ্যে চলেছে জীবনযাত্রা সে বললে পরান আমার স্রোতের দীিয়া (আমায় ভাসাইলা কোন ঘটে)। আগে আন্ধার পাছে আন্ধার, আন্ধার নিসুইং-ঢালা। আন্ধারমাঝে কেবল বাজে লাহরেরই মালা । তার তলতে কেবল চলে নিসুইৎ রাতের ধারা, সাথের সাথি চলে বাতি, নাই গোকুলকিনারা। নানা রহস্যে একলা-জীবনের গতি, যেন চার দিকের নিসুৎ অন্ধকারে স্রোতেভাসানো প্ৰদীপের মতো- এমন সহজ উপমা মিলবে কোথায় । একটা শব্দ-বাছাই লক্ষা করা যাক ; লহরেরই মালা । উর্মি নয়, তরঙ্গ নয়, ঢেউ নয়, শব্দ জাগাচ্ছে জলে ছােটাে ছােটাে চাঞ্চল্য, ইংরেজিতে যাকে বলে ripples ; অন্ধকারের তলায় তলায় রাত্রির ধারা চলেছে। এ ভাবটা মনে হয় যেন আধুনিক কবির ছায়াচ-লাগা। রাত্রি স্তব্ধ হয়ে আছে, এইটেই সাধারণত মুখে আসে। তার প্রহরগুলি নিঃশব্দ নির্লক্ষ্য স্রোতের মতো বয়ে চলেছে, এ উপমাটায় হলের টাকশালের ছাপ লেগেছে বলেই মনে হয় । শব্দ-বাছাই ভাব-বাছাইয়ের শিল্পকাজ চলেছে পৃথিবীর সাহিত্য জুড়ে । সঙ্গে সঙ্গে ছন্দে চলেছে ধ্বনির কাজ । সেটা গদ্যে চলে অলক্ষ্যে, পদ্যে চলে প্ৰত্যক্ষে । মুখে মুখে প্রতিদিনের ব্যবহারের ভাষায় কলাকীেশালের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু মানুষ দলবাধা জীব | একলার ব্যবহারে সে আটপৌরে, দলের ব্যবহারে সুসজ্জিত । সকলের সঙ্গে আচরণে মানুষের যে সৌজন্য সেই তার ব্যবহারের শিল্পকার্য। তাতে যত্নপূর্বক বাছাই সাজাই আছে। সর্বজনীন ব্যবহারে ব্যক্তিগত খেয়ালের যথেচ্ছাচার নিন্দনীয়। এ ক্ষেত্রে মানুষ নিজেকে ও অন্যকে একটা চিরন্তন আদর্শের দ্বারা সম্মান দেয় । সাহিত্যকে কদাচিৎ শ্ৰীভ্রষ্ট সৌজন্যভ্রষ্ট করায় প্রকাশ পায় সমাজের বিকৃতি, প্রকাশ পায় কোনো সাময়িক বা মারাত্মক ব্যাধির লক্ষণ। ভাষা অবতীর্ণ হয়েছে মানুষকে মানুষের সঙ্গে মেলাবার উদ্দেশ্যে । সাধারণত সে মিলন নিকটের এবং প্রত্যহের । সাহিত্য এসেছে মানুষের মনকে সকল কালের সকল দেশের মনের সঙ্গে মুখোমুখি করবার কাজে । প্রকৃত জগৎ সকল কালের সকল স্থানের সকল তথ্য নিয়ে, সাহিত্যজগৎ সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষের কল্পনাপ্রবণ মন নিয়ে। এই জগৎ-সৃষ্টিতে যে-সকল বড়ো বড়ো রূপকার আপনি বিশ্বজনীন প্রতিভা খাটিয়েছেন সেই সব সৃষ্টিকর্তাদেরকে মানুষ চিরস্মরণীয় বলে স্বীকার করেছে। বলেছে তারা অমর। পঞ্জিকার গণনা অনুসারে অমর নয়। মাহেঞ্জাদারের ভগ্নাবশেষ যখন দেখি তখন বোঝা যায়, তারই মতো এমন অনেক সভ্যতা মাটির তলায় লুপ্ত হয়ে গেছে। সেদিনকার বিলুপ্ত সভ্যতাকে র্যারা একদিন বাণীরূপ দিয়েছিলেন তাদের সেই বাণীও নেই, সেই স্মৃতিও নেই। কিন্তু যখন তারা বর্তমান ছিলেন তখন তাদের কীর্তির যে মূল্য ছিল সে কেবল উপস্থিত কালের নয়, সে নিত্যকালের । সকল কালের সকল মানুষের চিত্তমিলনবেদিকায় উৎসর্গ করা তাদের দান সেদিন অমরতার স্বাক্ষর পেয়েছিল, আমরা সে সংবাদ জানি আর নাই জানি । S SR সাধু ভাষার সঙ্গে চলতি ভাষার প্রধান প্ৰভেদ ক্রিয়াপদের চেহারায় । যেমন সাধু ভাষার ‘করিতেছি। হয়েছে। চলতি ভাষায় 'করছি । r এরও মূল কথাটা হচ্ছে আমাদের ভাবাটা হসন্তবর্ণের শক্ত মুঠোয় আঁটিবাধা । ‘করিতেছি এলানো iLYSr BBB DLLL SDDDDSS