পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় GRC আ, এই দুটাের সঙ্গে মিশে দুই দিকে দুই ওকার লাগিয়ে দিল, হয়ে দাঁড়ালো ‘জোলোঁ । অকারে বা অযুক্ত বর্ণে যে-সব শব্দের শেষ সেইসব শব্দের প্রান্তে অ বাসা পায় না, তার দৃষ্টান্ত পূর্বে দিয়েছি। ব্যতিক্রম আছে ত প্রত্যয়-ওয়ালা শব্দে, যেমন : গত হত। ক্ষত। আর কতকগুলি সর্বনাম ও অব্যয় শব্দে, যেমন : যত তত কত যেন কেন হেন । আর 'এক শো’ অর্থের ‘শত’ শব্দে । কিন্তু এ কথাটাও ভুল হল। বানানের ছলনা দেখে মনে হয় অন্তত ঐ কটা জায়গায় অ বুঝি টিকে আছে। কিন্তু সে ছাপার অক্ষরে আপনার মান বঁচিয়ে মুখের উচ্চারণে ওকারের কাছে আত্মসমর্পণ 3G, 3GIC: RC5 C5 C5 (pirit অকারের অত্যন্ত অনাদর ঘটেছে বাংলার বিশেষণ শব্দে। বাংলাভাষায় দুই অক্ষরের বিশেষণ শব্দ প্রায়ই অকারান্ত হয় না, তাদের শেষে থাকে আকার একার বা ওকার । এর ব্যতিক্রম অতি অল্পই। প্ৰথমে সেই ব্যতিক্রমের দৃষ্টান্ত যতগুলি মনে পড়ে দেওয়া যাক । রঙ বোঝায় যে শব্দে, যেমন : লাল নীল শ্যাম । স্বাদ বোঝায় যে শব্দে, যেমন : টক ঝাল, সংখ্যাবাচক শব্দ ; এক থেকে দশ ; তার পরে, বিশন্ত্রিশ ও ষাট । এইখানে একটি কথা বলা আবশ্যক । এইরকম সংখ্যাবাচক শব্দ কেবলমাত্র সমাসে খাটে, যেমন : একজন দশঘর দুইমুখে তিনহাপ্তা। কিন্তু বিশেষ্য পদের সঙ্গে জোড়া না লাগিয়ে ব্যবহার করতে গেলেই ওদের সঙ্গে "টি" বা টা’, ‘খান’ বা 'খানি যোগ করা যায়, এর অন্যথা হয় না। কখনো কখনো বা বিশেষ অর্থেই প্রত্যয় জোড়া হয়, যেমন : একই লোক, দুইই বোকা। কিন্তু এই প্রত্যয় আর বেশি দূর চালাতে গেলে 'জন' শব্দের সহায়তা দরকার হয়, যেমন : পাঁচজনই দশজনেই। 'জন ছাড়া অন্য বিশেষ্য চলে না ; “পাচ গোরুই দশ চৌকিই অবৈধ, ওদের ব্যবহার করা দরকার হলে সংখ্যাশব্দের পরে টিটা খানি খানা জুড়তে হবে, যথা : দশটা গোরুই, পাঁচখানি তক্তাই। এক দুই -এর বর্গ ছাড়া আরো দুটি দুই অক্ষরের সংখ্যাবাচক শব্দ আছে, যেমন : আধ্য এবং দেড় । কিন্তু এরাও বিশেষ্যশব্দ-সহযোগে সমাসে চলে, যেমন : অধমোন দেড়পোয় । সমাস ছাড়া বিশেষণ রূপ : দেড় আধা । সমাসসংশ্লিষ্ট একটা শব্দের দৃষ্টান্ত দেখাই : জোড়হাত । সমাস ছাড়ালে হবে “জোড়া হাত । ‘হেঁট বিশেষণ শব্দটি ক্রিয়াপদের যোগে অথবা সমাসে চলে ; হেঁটমুণ্ড, কিংবা হেঁটি-করা, হেঁটি-হওয়া । সাধারণ বিশেষণ অর্থে ওকে ব্যবহার করি নে, বলি নে ‘হেঁট মানুষ । বস্তুত ‘হেঁট হওয়া’ ‘হেঁট করা জোড়া ক্রিয়াপদ, জুড়ে লেখাই উচিত। "মাঝ’ শব্দটাও এই জাতের, বলি : মাঝখানে মােঝদরিয়া। এ হল সমাস । আর বলি : মাঝ থেকে । এখানে ‘থেকে অপাদানের চিহ্ন, অতএব মাঝ থেকে’ শব্দটা জোড়া শব্দ । বলি নে ; মােঝ গোরু, মােঝ ঘর । এই মােঝ শব্দটা খাটি বিশেষণ রূপ নিলে হয় ‘মেঝো । দুই অক্ষরের হসন্ত বাংলা বিশেষণের দৃষ্টান্ত ভেবে ভেবে আরো কিছু মনে আনা যেতে পারে, কিন্তু অনেকটা ভাবতে হয়। অপর পক্ষে বেশি খুঁজতে হয় না, যেমন : বড়ো ছোটাে মেঝো সেজো ভালো কালো ধলো রাঙা সাদা ফিকে খাটাে রোগা মোটা বেঁটে কুঁজে বাকা সিধে কানা খোড়া বেঁচো নুলো ন্যাক খাদ্য ট্যারা কটা গোটা ন্যাড়া খ্যাপা মিঠে উস কন্যা খাসা তোফা কঁচা পাকা খাটি মেকি কড়া চোখ রেখা ভিজে হাজা শুকো ওঁড়ো বুড়ো ওঁচা খেলো ছ্যাদা ঝুটাে ভীতু উচুনিচু কালাহাবা বোকা ঢাঙা বেঁটে ঠােটা ঘনে । বাংলা বর্ণমালায়ই আর উসবচেয়ে উদ্যমশীল স্বরবর্ণ। রাসায়নিক মহলে অক্সিজেন গ্যাস নানা পদার্থের সঙ্গে নানা বিকার ঘটিয়ে দিয়ে নিজেকে রূপান্তরিত করে, ই স্বরবর্ণটা সেইরকম । অন্তত আকে বিগড়িয়ে দেবার জন্যে তার খুব উদ্যম, যেমন : থলি+আ=থলে, করি+আ=িকরে। ইআ প্রত্যয়ের-ই পূর্ববর্তী একটা বৰ্ণকে ডিঙিয়ে শব্দের আদি ও অন্তে বিকার ঘটায়, তার দৃষ্টান্ত : জাল+ইআ = জেলে, বালি + ইত্মা = বেলে, মাটি +ইআ = মোট, লাঠি+ইআল= লেঠেল । পরে যেখানে আকার আছেই। সেখানে আ'-এ হত না দিয়ে নিজেকেই বদলে ফেলেছে, তার দৃষ্টিান্ত যথা : মিঠাই== মেঠাই, বিড়াল= বেড়াল, শিয়াল= শেয়াল, কিতাব=কেতাব, খিতাব= খেতাব । আবার নিজেকে বজায় রেখে আকারটাকে বিগড়িয়ে দিয়েছে, তার দৃষ্টান্ত দেখো ; হিসাব=হিসেবে, নিশান=নিশেন, বিকাল=বিকেল, বিলাত=বিলেত। ই কোনো উৎপাত করে নি এমন দৃষ্টিতও