পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় VO) পদ্যে আশ্রয় নিয়েছে। তবে একদা ওদেরই দলেছিল, কিন্তু এখন ‘তবু শব্দের মতো সেও অর্থ বদলিয়েছে। একটা সম্ভাবনার সঙ্গে আর-একটা সম্ভাবনাকে সে জোড়ে, যেমন : যদি যাও তবে বিপদে পড়বে। তবে এক কাজ করো ; তবে শব্দের পূর্ববতী উহ্য ব্যাপারের প্রসঙ্গে কোনো কাজ করার পরামর্শ। এই প্রসঙ্গে সবে শব্দটার উল্লেখ করা যেতে পারে। বলে থাকি, সবে এইমাত্র চলে গেছে, সবে পাঁচটা বেজেছে । এখানে সবে অব্যয়, ওতে মাত্রা বোঝায়, সকল ক্ষেত্রেই পরিমাণের সীমা বোঝাতে তার প্রয়োগ : সবে পাঁচজন । সবে ভোর হয়েছে ; অর্থাৎ সময়ের মাত্রা ভোরে এসে পৌচেছে । সেইরকম : সবে এক পোওয়া দুধ । যেমন তেমন অমন এমন কেমন তুলনাবাচক । “কেমনে শব্দের ব্যবহার পদ্যে করণকারকে । কেমন শব্দের দ্বৈতে সন্দেহ বোঝায় ; কেমন কেমন ঠেকছে। গা কেমন কেমন করছে ; একটা অনির্দিষ্ট অসুস্থ ভাব। কেমন শব্দের সঙ্গে যেন-যোগে সংশয় ঘনীভূত হয়, আর সে সংশয়টা অপ্রিয়। লোকটাকে কেমন যেন ঠেকছে ; অর্থাৎ ভালো ঠেকছে না। ভঙ্গিওয়ালা কেমন' শব্দটা আছে খোচা দেবার কাজে ; কেমন জব্দ, কেমন মারি মেরেছে, কেমন জুতো, কেমন ঠকানটাই ঠকিয়েছে। অধিকরণের বাহনরাপে 'এমনি শব্দের ব্যবহার আছে : এমনিতেই জায়গা পাই নে। খোচা দেবার ভঙ্গিতেও এই শব্দটার যোগ্যতা আছে : এমনিই কী যোগ্যতা । “যত শব্দ তার জুড়ি হারালে টিটকারির কাজে লাগে সে কথা পূর্বেই বলেছি। “অত কথাটারও তীক্ষতা আছে, যেমন : অতি চালাকি কেন, অত বাবুগিরি তোমাকে মানায় না, অত ভালোমানুযি क७ इस नीं । এ জাতীয় আরো দৃষ্টান্ত আছে, যথা ‘যে’ এবং "যেমন” । “সে এবং তেমন এর সঙ্গে যদি বিচ্ছেদ ঘটানো যায়। তবে মুখ বাঁকানোর ভঙ্গি আনে, যথা : যে মধুর বাক্য তোমার। তেমন এর সঙ্গ-বর্জিত "যেমন শব্দটাও বদমেজাজি ; যেমন তোমার বুদ্ধি । এই ধরনেরই আর-একটা দৃষ্টান্ত মনে পড়ে ; কোথাকার মানুষ হে। এ বাক্যটার চেহারা প্রশ্নেরই মতো, কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা রাখে না। এতে যে সংবাদ উহ্য আছে সে নিবাসঘটিত নয়, সে হচ্ছে লোকটার ধৃষ্টতার বা মূর্থিতার পরিচয় নিয়ে। কোথাকার সাধুপুরুষ এসে জুটল : লোকটার সাধুতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ হচ্ছে না। “যোিমতি” “তেমতি' পদ্যে আশ্ৰয় নিয়েছে। “সেইমতে “এইমতো এখনো টিকে আছে। কিন্তু "এর মতো তার মতোর ব্যবহারটাই বেশি। কারণকারকে রয়ে গেছে “কোনোমতে । অথচ "কোনোমতো বা ‘কোনমতো” শব্দটা নেই। কেন শব্দটা সর্বনাম । এর অর্থ প্রশ্নবাচক, এর রূপটা করণকারকের । ঘটনা ঘটল কেন : অর্থাৎ ঘটল কী কারণের দ্বারা । কেনে বা প্রাচীন কাব্যেও পড়েছি, গ্ৰাম্য লোকের মুখেও শোনা যায়। কেন, কেন বা, কেনই বা । ‘লোকটা কেন কঁদিছে, এ একটা সাধারণ প্রশ্ন। কেন বা কঁদছে। বললে কান্নাটা যে ব্যৰ্থ বা অবোধ্য সেইটে বলা হল । কেন বা এলে বিদেশে ; অর্থাৎ বিদেশে আসাটা নিফল । কেনই বা মরতে এখানে এলুম ; এ হল পরিতাপের ধিকার। এর মধ্যে লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, এই প্রয়োগগুলির সবগুলোই অপ্রিয়তাব্যঞ্জক। কেন তিনি তিব্বতি পড়ছেন তা নিজেই জানেন না ; এসহজ কথা । যেই বলা হল কেনই বা তিনি তিব্বতি পড়তে বসলেন অমনি বোঝা যায়, কাজটা সুবুদ্ধির মতো হয় নি। 'কেন' শব্দের এক বর্গের শব্দ যেন ‘হেন । যেন সাদৃশ্য বোঝাতে । হেন শব্দের প্রয়োগ বিশেষণে, যথা : হেন রূপ দেখি নাই কভু, হেন কােজ নেই যা সে করতে পারে না, সে-হেন লোকও CNOCAŞ M | R RUF=qaaq KU I G-3=V INNS যেন শব্দটাতে বিঘুপের ভঙ্গি লাগানো চলে ; যেন নবাব খানে ধা, যেন আহিলাদে পুতুল, যেন