পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ësir রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বতন্ত্র শব্দে “আপদ কিংবা বিপদ বলতে যে বিশেষ ঘটনা বোঝায়, যুক্ত শিল্পে ঠিক তা বোঝায়। না। “আপদবিপদ সমষ্টিগত, ওর মধ্যে অনির্দিষ্টভাবে নানাপ্রকার দুর্যোগের সম্ভাবনার সংকেত আছে। ‘ধারধোর শব্দে ধার করার উপরেও আর কিছু অস্পষ্টভাবে উদ্যাবৃত্ত থাকে। হয়তো, কাউকে ধরে পড়া। রূপক অর্থে শুধু ছাই শব্দে তুচ্ছতা বোঝায় যথেষ্ট, এই অর্থে "হাই শব্দের ব্যবহার হয়ে থাকে , যেমন : কী ছাই বাকছ। কিন্তু "ছাইভস্ম কী যে বকহ, এতে প্ৰলাপের বহর যেন বড়ো করে WikiGet R | “হাঁড়িকুড়ি' শব্দ সংক্ষেপে পাকশালার বহুবিধ আয়োজনের ছবি এনে দেয়। এরকম স্থলে তন্নতায় বর্ণনার চেয়ে অস্পষ্ট বর্ণনার প্রভাব বেশি। মামলা-মকদ্দমা শব্দটা ব্রিটিশ আদালতের দীর্ঘপ্রলম্বিত বিপত্তির দ্বিপদী প্রতীক। এইজাতীয় শব্দের কতকগুলি নমুনা দেওয়া গেল : মাথামুণ্ডু মালমসলা গোনাগুতি চালচলন বাধাৰ্ছিদা হাঁসিতামাশা বিয়োথাওয়া দেওয়াথোওয়া বেঁটেখাটো পাকাপোক্ত মায়াদিয়া দুটােছটা কুটােকাটা কঁাটাখোচা ঘোরাফেরা নাচাকোদা জাকজমক গড়াপেটা জানাশোনা চাষাভুষো দাবিদাওয়া অদলবদল ছেলেপূলে নাতিপুতি । NRR চলতি বাংলার আর-একটি বিশেষত্ব জানিয়ে দিয়ে এ বই শেষ করি। যারা সাধু ভাষায় গদ্যসাহিতাকে রূপ দিয়েছিলেন স্বভাবতই তাদের হাতে বাক্যবিন্যাসের একটা ধারা বাধা হয়েছিল । তার প্রয়োজন নিয়ে তর্ক নেই। আমার বক্তব্য এই যে এ বাধািৰ্বাধি বাংলা চলতি ভাষার নয় ; কোথায় গেলেন তোমার দাদা, তোমার দাদা কোথায় গেলেন, গেলেন কোথায় তোমার দাদা, দাদা তোমার গেলেন কোথায়, কোথায় গেলেন দাদা তোমার ; প্রথম পাঁচটি বাক্যে “গেলেন ক্রিয়াপদের উপর এবং শেষের বাক্যটিতে “কোথায়' শব্দের উপর ঝোক দিয়ে এই সবকটা প্রয়োগই চলে। আশ্চর্য তোমার সাহস, কিংবা , রেখে দাও তোমার চালাকি, একেবারে ভাসিয়ে দিলে কেঁদে ; সাধু ভাষার ছাদের চেয়ে এতে আরো বেশি জোর পৌছয়। যা থাকে অদৃষ্ট, যা করেন। ভগবান, সে পড়ে আছে পিছনে ; এ আমরা কেবল-যে বলি তা নয়, এইটেই বলি সহজে । বাংলা ভাষার একটা বিপদ তার ক্রিয়াপদ নিয়ে ; 'ইল” “তেছে’ ‘ছিল’-যোগে বিশেষ বিশেষ কালবাচক ক্রিয়ার সমাপ্তি। ক্রিয়াপদের এই একঘেয়ে পুনরাবৃত্তি এড়াবার জন্যে লেখকদের সতর্ক থাকতে হয়। বাংলা বাক্যবিন্যাসে যদি স্বাধীনতা না থাকত তা হলে উপায় থাকত না । এই স্বাধীনতা আছে বটে, কিন্তু তাই বলে স্বৈরাচার নেই । ‘ভাসিয়ে একেবারে দিলে কেঁদে কিংবা ‘ভাসিয়ে দিলে একেবারে কেঁদে বলি নে । সে পড়ে সবার আছে পিছনে কিংবা ‘রেখে চালাকি দাও তোমার’ হবার জো নেই। তার কারণ জোড়া ক্রিয়ার জোড় ভাঙা অবৈধ । চলতি গদ্যের একটা নমুনা দেওয়া যাক। এতে সাধু গদ্যভাষার বাক্যপদ্ধতি অনেকটা ভেঙে (ጀቸ@ጁቨ ፪ር፭IKጅ কুঞ্জবাবু চললেন মথুরায় । তার ভাই মুকুন্দ যাবে স্টেশন পর্যন্ত। বৈজু দারোয়ান চলেছে। মােঠাকরুনের পান্ধির পাশে পাশে, লম্বা বাশের লাঠি হাতে, ছিটের মেরজাই গায়ে, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ।। ঘর সামলাবার জন্যে রয়ে গেছে ভরু সর্দার। টেমি কুকুরটা ঘুমোচ্ছিল সিমেন্টের বস্তার উপর ল্যাজে মাথা ওঁজে, গোলমাল শুনে ছুটে এল এক লাফে । যত ওরা বারণ করে ততই কেঁই-র্কেই ঘেউ-ঘেউ রবে মিনতি জানায়, ঘন ঘন নাড়ে বেঁাচা ল্যােজটা । রেল লাইন থেকে শোনা যাচ্ছে মালগাড়ি আসার শব্দ । ডাকগাড়ি আসতে বাকি আছে বিশ মিনিট মাত্র } বিষম ব্যস্ত হয়ে পড়ল মুকুন্দ ; সে যাবে কলকাতার দিকে, আজ সেখানে মোহনবাগানের ম্যাচ । ঐ বুঝি দেখা গেল সিগ্নাল-ডাউন । এ দিকে নামল ঝমােঝম বৃষ্টি, তার সঙ্গে জোর হাওয়া । বেহারিাগুলো পান্ধি নামালো অশথতলায়। হঠাৎ একটি ভিখিরি মেয়ে ছুটে এসে বললে, “দরজা