পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

USOR রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহাদের হৃদয়মনের আজন্মকালের সংস্কার পদে পদে কঠোর বাধা পাইয়াছে; যেখানে কেবল । তাহারা আন্মোৎসর্গ করিয়াছেন তাহা নহে, পদে পদে আন্মোৎসর্গের পথ তাহদের নিজেকে খান করিয়া চলিতে হইয়াছে- কেননা, তাহদের প্রবেশ চারি দিকেই অবরুদ্ধ। সত্যকে ভক্তি করিবার এই ক্ষমতা, এবং সত্যের জন্য দুৰ্গম বাধা লঙ্ঘন করিয়া দিনের পর দিন আপনাকে অকুষ্ঠিতভাবে নিঃশেষে দান করিবার এই শক্তি, এ যে তঁহাদের জাতীয় সাধনা হইতেই তাহারা পাইয়াছিলেন। এই আশ্চর্য শক্তি কি বস্তু-উপাসনার সাধনা হইতে কেহ কোনোদিন লাভ করিতে পারে। ইহা কি যথার্থই আধ্যাত্মিক নহে। এবং জিজ্ঞাসা করি, এই শক্তি কি আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণে দেখিতে পাই । DBS DD BB LDBB0B EL BDBBB DDS SS DOB DBDD BD DDSSS LLLS আধ্যাত্মিকতার একটা দিক প্রকাশ পাইয়াছে। আমাদের দেশের র্যাহারা সাধক তাহারা কেহ বা জ্ঞানে কেহ বা ভক্তিতে অখণ্ডস্বরাপকে সমস্ত খণ্ড-পদার্থের মধ্যে সহজেই স্বীকার করিতে পারেন। এইখনে জ্ঞানের দিকে এবং ভাবের দিকে, অনেক কালের চিন্তায় এবং সাধনায়, তাহদের বাধা অনেক পরিমাণে ক্ষয় হইয়া আসিয়াছে। এইজন্য আমাদের দেশের র্যাহারা সাধুপুরুষ তাহারা চিৎলোকে বা হৃদয়ধ্যমে অনিম্ভের সঙ্গে সহজে যোগ উপলব্ধি করিতে পারেন । আমাদের দেশের মানবপ্রকৃতিতে এই শক্তিটি দেখিবার জন্য যদি কোনো বিদেশী শ্ৰদ্ধা ও দৃষ্টিশক্তি লইয়া আসেন। তবে নিশ্চয়ই তিনি কৃতাৰ্থ হইবেন, এবং সম্ভবত তিনি আপনার প্রকৃতির ভিতরকার একটা অভাব পূরণ করিয়া লইয়া যাইতে পরিবেন। আমার বলিবার কথা এই যে, আমাদের মধ্যেও তেমনি পূরণ করিবার মতো একটা অভাব আছে, এবং সেই অভাবই আমাদিগকে দুর্বলতার অবসাদের মধ্যে বহুদিন হইতে আকর্ষণ করিতেছে। এ কথা শুনিলেই আমাদের দেশভিমানীরা বলিয়া উঠেন, ই, অভাব আছে বটে, কিন্তু তাহা আধ্যাত্মিকতার নহে, তাহা বস্তুজ্ঞানের, তাহা বিষয়বুদ্ধির- য়ুরোপ তাঁহারই জোরে পৃথিবীর অন্য-সকলকে ছাড়াইয়া উঠিয়াছে। আমি পূর্বেই বলিয়াছি, তাহা কোনোমতেই হইতে পারে না। কেবল বস্তুসঞ্চায়ের উপরে কোনো জাতিরই উন্নতি দাড়াইতে পারে না এবং কেবল বিষয়বুদ্ধির জোরে কোনো জাতিই বললাভ করে না। প্ৰদীপে অজস্ৰ তেল ঢালিতে পারিলেও দীপ জ্বলে না এবং সলিতা পাকাইবার নৈপুণ্যে সুদক্ষ হইয়া উঠিলেও দীপ জ্বলে না- যেমন করিয়াই হউক, আগুন ধরাইতে হইবে। আজ পৃথিবীকে য়ুরোপ শাসন করিতেছে বস্তুর জোরে, ইহা অবিশ্বাসী নাস্তিকের কথা। তাহার শাসনের মূল শক্তি নিঃসন্দেহই ধর্মের জোর, তাহা ছাড়া আর কিছু হইতেই পারে না। বৌদ্ধধর্ম বিষয়াসক্তির ধর্ম নহে, এ কথা সকলকেই স্বীকার করিতে হইবে। অথচ ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের অভু্যদয়িকালে এবং তৎপরবতী যুগে সেই বৌদ্ধসভ্যতার প্রভাবে এ দেশে শিল্প বিজ্ঞান বাণিজ্য এবং সাম্রাজ্যশক্তির যেমন বিস্তার হইয়াছিল। এমন আর কোনো কালে হয় নাই । তাহার কারণ এই মানুষের আত্মা যখন জড়ত্বের বন্ধন হইতে মুক্ত হয় তখনই আনন্দে তাহার সকল শক্তিই পূর্ণ বিকাশের দিকে উদ্যম লাভ করে। আধ্যাত্মিকতাই মানুষের সকল শক্তির কেন্দ্রগত, কেননা তাহা আত্মারই শক্তি। পরিপূর্ণতাই তাহার স্বভাব। তাহা অন্তর বাহির কোনো দিকেই মানুষকে খর্ব করিয়া আপনাকে আঘাত করিতে চাহে না । য়ুরোপের যে শক্তি, তাহার বাহরাপ যাহাঁই হউক-না কেন, তাহার। আন্তর রূপ যে ধর্মবল সে সম্বন্ধে আমার মনে সন্দেহমাত্র নাই । এই তাহার ধর্মবল অত্যন্ত সচেতন । তাহা মানুষের কোনো দুঃখ কোনো অভাবকেই উদাসীনভাবে পাশে ঠেলিয়া রাখিতে পারে না। মানুষের সর্বপ্রকার দুৰ্গতি মোচন করিবার জন্য নিত্যনিয়তই তাহা দুঃসাধ্য চেষ্টায় নিযুক্ত রহিয়াছে। এই চেষ্টার কেন্দ্ৰন্থলে যে একটি স্বাধীন শুভবুদ্ধি আছে, যে বুদ্ধি মানুষকে স্বাৰ্থত্যাগ করাইতেছে, আরাম হইতে টানিয়া বাহির করিতেছে এবং অকুষ্ঠিত মৃত্যুর মুখে ডাক