পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

୩ଫୁସ୍‌ର ୪୩୩ WNOO দিতেছে, তাহাকে শক্তি জোগাইতেছে কে । কোথায় সেই অমৃত আছে যাহা এই উদার মঙ্গলকামনাকে এমন করিয়া সতেজ রাখিয়াছে। খুস্টের জীবনবৃক্ষ হইতে যে ধর্মবীজ যুরোপের চিত্তক্ষেত্রে পড়িয়াছে তাহাঁই সেখানে এমন করিয়া ফলবান হইয়া উঠিয়াছে। সেই বীজের মধ্যে যে জীবনীশক্তি আছে, সেটি কী। সেটি দুঃখকে পরম ধন বলিয়া গ্ৰহণ করা । স্বর্গের দয়া যে মানুষের প্রেমে মানুষের সমন্ত দুঃখকে আপনার করিয়া লয়, এই কথাটি আজ বহু শত বৎসর ধরিয়া নানা মন্মে অনুষ্ঠানে সংগীতে যুরোপ শুনিয়া আসিতেছে। শুনিতে শুনিতে এই আইডিয়াটি তাহার এমন একটি গভীর মর্মস্থানকে অধিকার করিয়া বসিয়াছে যাহা চেতনারও অন্তরালবতী অতিচেতনার দেশ- সেইখানকার গোপন নিন্তব্ধতার মধ্য হইতে মানুষের সমন্ত বীজ অঙ্কুরিত হইয়া উঠে- সেই অগোচর গভীরতার মধ্যেই মানুষের সমস্ত ঐশ্বর্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়। সেইজন্য আজ যুরোপে সর্বদা এই একটা আশ্চর্য ঘটনা দেখিতে পাই, যাহারা মুখে খৃস্টধর্মকে অমান্য করে এবং জড়বাদের জয় ঘোষণা করিয়া বেড়ায় তাহারাও সময় উপস্থিত হইলে ধনে প্ৰাণে আপনাকে এমন করিয়া ত্যাগ করে, নিন্দাকে দুঃখকে এমন বীরের মতো বহন করে যে, তখনই বুঝা যায়, তাহারা নিজের অজ্ঞাতসারেও মৃত্যুর উপরে অমৃতকে স্বীকার করে এবং সুখের উপরে মঙ্গলকেই সত্য বলিয়া মানে । টাইটানিক জাহাজে যাহারা নিজের প্রাণকে নিশ্চিতভাবে অবজ্ঞা করিয়া পরের প্রাণকে রক্ষার চেষ্টা করিয়াছেন তাহারা সকলেই যে নিষ্ঠাবান ও উপাসনারত খৃস্টান তাহা নহে। এমনকি, তাহদের মধ্যে নাস্তিক বা আঞ্জেয়িকাও কেহ কেহ থাকিতে পারেন, কিন্তু তাহারা কেবলমাত্র মতান্তরগ্রহণের দ্বারা ? সমস্ত জাতির ধর্মসাধনা হইতে নিজেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করবেন কী করিয়া । কোনো জাতির মধ্যে যাহারা তাপস তাহারা সে জাতির সকলের হইয়ামতপস্যা করেন । এইজন্য সেই জাতির পনেরো আনা মূঢ়ও যদি সেই তাপসদের গায়ে ধূলা দেয় তথাপি তাহারাও তপস্যার ফল হইতে একেবারে বঞ্চিত হয় R | ভগবানের প্রেমে মানুষের ছোটাে বড়ো সমস্ত দুঃখ নিজে বহন করিবার শক্তি ও সাধনা আমাদের দেশে পরিব্যাপ্তভাবে দেখিতে পাই না, এ কথা যতই অপ্রিয় হউক, তথাপি ইহা আমাদিগকে স্বীকার করিতেই হইবে । প্ৰেমভক্তির মধ্যে যে ভাবের আবেগ, যে রসের লীলা, তাহা আমাদের যথেষ্ট আছে ; কিন্তু প্রেমের মধ্যে যে দুঃখাধীকার, যে আত্মত্যাগ, যে সেবার আকাঙ্ক্ষা আছে, যাহা বীর্যের দ্বারাই সাধ্য, তাহা আমাদের মধ্যে ক্ষীণ । আমরা যাহাকে ঠাকুরের সেবা বলি তাহা দুঃখপীড়িত মানুষের মধ্যে ভগবানের সেবা নহে। আমরা প্রেমের রাসলীলাকেই একান্তভাবে গ্রহণ করিয়াছি, প্রেমের দুঃখলীলাকে दीकाल कनेि नाई । দুঃখকে লাভের দিক দিয়া স্বীকার করার মধ্যে আধ্যাত্মিকতা নাই ; দুঃখকে প্রেমের দিক দিয়া স্বীকার করাই আধ্যাত্মিকতা। কৃপণ ধন সঞ্চায়ের যে দুঃখ ভোগ করে, পারলৌকিক সদগতির লোভে পুণ্যকামী যে দুঃখত্রত গ্ৰহণ করে, মুক্তিলোলুপ মুক্তির জন্য যে দুঃখসাধন করে এবং ভোগী ভোগের জন্য যে দুঃখকে বরণ করে তাহা কোনোমতেই পরিপূর্ণতার সাধনা নহে। তাঁহাতে আত্মার অভাবকেই সৈন্যকেই প্রকাশ করে। প্রেমের জন্য যে দুঃখ তাহাঁই যথার্থ ত্যাগের ঐশ্বৰ্য ; তাহাতেই মানুষ মৃত্যুকে জয় করে ও আত্মার শক্তিকে ও আনন্দকে সকলের উর্ধের্ব মহীয়ান করিয়া তুলে। এই দুঃখলীলার ক্ষেত্রেই আমরা আপনাকে ছাড়িয়া বিশ্বকে সত্যভাবে গ্রহণ করিতে পারি। সত্যের মূল্যই এই দুঃখ। এই দুঃখসম্পদই মানবাত্মার প্রধান ঐশ্বর্য। এই দুঃখের দ্বারাই তাহার বল প্রকাশ হয় এবং এই দুঃখের দ্বারাই সে আপনাকে এবং অন্যকে লাভ করে। তাই শাত্রে বলে: নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ । অৰ্থাৎ, দুঃখৰীকার করিবার বল যাহার নাই সে আপনাকে সত্যভাবে উপলব্ধি করিতে পারে 국 || ইহার একটা প্রমাণ এই, আমরা নিজের দেশকে নিজে লাভ করিতে পারি নাই। আমাদের দেশের