পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(სტ88 ब्रदोक्ष-ब्रष्नावकी উঠিতেছে পড়িতেছে, দিনরাত সেই ধুকধুক স্পন্দন অনুভব করিতেছি। যেখানে তাহার জন্ম জ্বলিয়াছে এবং তাহার নাড়ির মধ্যে উত্তপ্ত বাম্পের বেগ আলোড়িত হইয়া উঠিতেছে, সেখানকার প্রচয় শক্তির সমস্ত উদ্যোগ আমাদের চোখের আড়ালে রহিয়াছে। আমাদের উপরিতলে এই প্রচুর অবকাশ ও আলস্যের মাঝে মাঝে ঘন্টাধ্বনি স্নানাহারের সময় জ্ঞাপন করিতেছে। এই যে দেড়শো-দুইশ যাত্রীর আহারবিহারের আয়োজন- এ কোথায় হইতেছে সেই কথা ভাবি। সেও চোখের আড়ালে তাহারও শব্দমাত্র শুনি না, গন্ধমাত্র পাই না। আহারের টেবিলে গিয়া যখন বসি, সমস্ত সুসজ্জিত প্ৰস্তুত। ভোজ্যসামগ্ৰীীর পরিবেশনের ধারা যেন নদীর প্রবাহের মতো অনায়াসে চলিতে থাকে। ইহার মধ্যে যেটা বিশেষ করিয়া ভাবিবার কথা সেটা এই যে, ইহারা লেশমাত্র অসুবিধাকেও মানিয়া লাইতে চায় না ; এতবড়ো একটা সমুদ্রে পাড়ি- নাহয় আহারবিহারের কিছু টানাটানিই হইল, নাহয় মোটামুটি রকমেই কাজ সারিয়া লওয়া গেল। কিন্তু তা নয় ; ইহারা কোনো ওজারকেই ওজার বলিয়া গণ্য করবে না ; ইহারা সকল অবস্থাতেই আপনার সকল রকমের দাবিকে সর্বোচ্চ সীমায় টানিয়া রাখিতে চায় । তাহার ফল হয় যে, অবশেষে সেই অসম্ভব দাবিও মেটে । দাবি করিবার সাহস যাহাদেৱ নাই তাহারাই কোনোমতে অভাবের সঙ্গে আপাস করিয়া দিন কটায়- তাহারাই বলে, অর্থাং ত্যজাতি পণ্ডিতঃ । তাহাতে হয় এই যে, সেই অর্ধের মধ্য হইতেও কেবলই অৰ্থবাদ পড়িয়া যায় এবং পণ্ডিত আপনার পাণ্ডিত্যের মধ্যেই ক্রমাগত পণ্ড হইতে থাকেন । কিন্তু, সমস্ত সুবিধাই লাইব, এ দাবি করিয়া বসিয়া কী প্ৰকাণ্ড ভার বহন করিতে হয় ! প্রত্যেক সামান্য আরামের ব্যবস্থা কত মন্ত জায়গা জুড়িয়া বসে ! এই ভার বহন করিবার শক্তি ইহাদের আছে, সেখানে ইহারা কিছুমাত্র কুষ্ঠিত নহে। এই উপলক্ষে আমার মনে পড়ে আমাদের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা । সেখানেও দুশো লোকের জন্য চার বেলাকার খাওয়া জোগাড় করিতে হয়। কিন্তু প্ৰয়াসের সীমানাই, ভোর চারটে হইতে রাত্রি একটা পর্যন্ত ইয়াকডাকের অবধি দেখি না । অথচ, ইহার মধ্যে নিতান্ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু নাই বলিলেও হয়। আয়োজনের ভর যথাসাধ্য কম করা গিয়াছে, কিন্তু আবর্জনার ভারী কিছুমাত্র কমে না। গোলমাল বাড়িয়া চলে, ময়লা জমিতে থাকে- ভাতের ফেল, তরকারির খোসা এবং উচ্ছিষ্টাবশেষ লইয়া কী করা যায় তাহা ভাবিয়া পাওয়া যায় না । ক্রমে সে সম্বন্ধে ভাবনা পরিহার করিয়া জড় প্রকৃতির উপর বরাত দিয়া কোনোক্রমে দিন কাটানো যায়। এ কথা কিছুতেই আমরা জোর করিয়া বলিতে পারি না যে, ইহা কিছুতেই চলিবে না। কারণ, তাহা বলিতে গেলেই ভার বহন করিতে হয় । শেষকালে গোড়ায় গিয়া দেখি, সেই ভার বহন করিবার ভরসা এবং শক্তি আমাদের নাই, এইজন্য আমরা কেবলই দুঃখ এবং অসুবিধা বহন করি কিন্তু দায়িত্ব বহন করিতে bछौ ना | একজন উচ্চপদস্থ রেলোয়ে ইঞ্জিনিয়ার আমাদের সহযাত্রী আছেন ; তিনি আমাকে বলিতেছিলেন, "চাবি তালা প্রভৃতি নানা ছোটােখাটাে প্রয়োজনের জিনিস। আমি রেলোয়েবিভাগের জন্য এই দেশ হইতেই সংগ্ৰহ করিতে অনেক চেষ্টা করিয়াছি। কিন্তু, বরাবর দেখিতে পাই, তাহার মূল্য বেশি অথচ জিনিস তেমন ভালো নয়।' এ দিকে পণ্যদ্রব্যের দাম এবং বেতনের পরিমাণ বাড়িয়াই চলিয়াছে অথচ এখানে যে-সমস্ত দ্রব্য উৎপন্ন হইতেছে পৃথিবীর বাজারদরের সঙ্গে তাহা তাল রাখিয়া চলিতে পারিতেছে না। তিনি বলিলেন, য়ুরোপীয় কর্তৃত্বে এ দেশে যে-সমস্ত কারখানা চলিতেছে। এ দেশের লোকের উপর তাহার প্রভাব অতি সামান্য । আর, দেশীয় কর্তৃত্বে যেখানে কাজ চলে সেখানে দেখিতে পাই, পুরা কাজ আদায় হয় না- মানুষের যতখানি শক্তি আছে তাহার অধিকাংশকেই খাটাইয়া লইবার যেন তেজ নাই। এইজন্যই মজুরির পরিমাণ অল্প হওয়া সত্ত্বেও মূল্য কমিতে চায় না। কেননা, মানুষ যতগুলি খাটিতেছে শক্তি ততটা খাটিতেছে না । এ কথাটা শুনিতে অপ্ৰিয় লাগে, কিন্তু দেশের দিকে তাকাইয়া দেখিলে সর্বত্র এইটিই চোখে পড়ে । আমাদের দেশের সকল কাজই দুঃসাধ্য হইয়া উঠিয়াছে, তাহার একটিমাত্র কারণ, যোলো-আনা মানুষকে আমরা পাই না। এইজন্য আমাদিগকে বেশি লোক লইয়া কারবার করিতে হয়, অথচ বেশি